সাড়ে ৪ বছরেও শেষ হয়নি শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ২০২০ সালে। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চলতি বছর নিবন্ধনধারীদের নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ করা হয়ম। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সাড়ে ৪ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা। এনটিআরসিএ বলছে, চূড়ান্ত সুপারিশ হতে চলতি (আগস্ট) মাস লাগতে পারে।
এনটিআরসিএ সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২৩ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবেদনগ্রহণ চলে। এতে আবেদন করেন প্রায় ১২ লাখ চাকরিপ্রার্থী।
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে কিছুটা বিলম্বিত হয় এই নিবন্ধনের নিয়োগ কার্যক্রম। করোনার প্রকোপ কমার পর ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় স্কুল পর্যায়ে এবং ৩১ ডিসেম্বর একই সময়ে কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। করোনায় পরীক্ষা কীভাবে হবে, সমস্যা হবে কি না, এটা নিয়ে শঙ্কা থাকলেও বেশ ভালোভাবে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ১৭তম নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়া হয়।
এরপর ২০২৩ সালের ৫ মে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্কুল-২ ও স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ৬ মে একই সময়ে কলেজপর্যায়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত পরীক্ষা গ্রহণের ৪ মাস পর ফল প্রকাশিত হয়। এতে স্কুল-২ পর্যায়ের ২১০১ জন স্কুল ও সমপর্যায়ের ১৯,০৯৫ জন এবং কলেজ ও সমপর্যায়ের ৫,০৪৬ জন সর্বমোট ২৬ হাজার ২৪২ পরীক্ষার্থী লিখিত উত্তীর্ণ হন৷ লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ৬ লাখ প্রার্থী।
২০২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে এই নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়। মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়। চলতি বছরের ৩১ মার্চ ৫ম গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৯৬ হাজার ৭৩৬ শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগের পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৭ এপ্রিল থেকে আবেদন শুরু হয়, যা চলে ৯ মে পর্যন্ত। দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখনো নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়নি।
দীর্ঘসূত্রতার কারণে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের ক্ষোভ আর হতাশা দিন দিন বাড়ছে। ১৭তম নিবন্ধন থেকে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ পাওয়া একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। চাকরিতে যোগ দিতে না পারায় নিদারুণ কষ্টে দিন পার করছেন অনেকে। ‘চাকরি তো হয়েছে শুনলাম, কবে যোগদান করছ’ বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের এমন অনেক ব্যঙ্গাত্মক প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছেন তাঁরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও চূড়ান্ত সুপারিশে দেরি হওয়ায় চাকরির গ্রুপগুলোতে দেখা গেছে নানা আলোচনা।
৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ পাওয়া এক প্রার্থী বলেন, ‘স্নাতকোত্তর পাস করে ২০২০ সালে ১৭তম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করি। চার বছর পর ২০২৪ সালে প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত হই। এনটিআরসিএর সুপারিশ করার পর প্রায় তিন মাস হতে চললেও এখনো চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়নি। একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা কতটা পীড়াদায়ক, তা কেবল ভুক্তভোগীই বুঝতে পারে। নিবন্ধনের এই দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া আমাদের মতো উচ্চশিক্ষিত বেকারদের মধ্যে চরম হতাশা সৃষ্টি করে। চাকরিতে যোগ দিয়ে বৃদ্ধ মা–বাবার সেবা করার যে স্বপ্ন আজন্ম বুকে লালন করে আসছি, তা কবে বাস্তবায়ন করতে পারব, সেটা এখনো অনিশ্চিত।’
নিয়োগের অপেক্ষায় থাকা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক প্রার্থী বলেন, '১৭তম নিবন্ধিনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে প্রাথমিক সুপারিশ করতে সাড়ে ৪ বছর অতিক্রম হলেও চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়নি। কবে হবে সেটাও আমরা জানি না। এ নিয়ে উদ্বিগ্নের মধ্যে আছি। কবে শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগ দিতে পারব, কেউ বলছে না।’
৫ম গণবিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত সুপারিশ কবে হবে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহিল আজম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখে প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি প্রয়োজন। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে চলতি আগস্ট মাসে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে।