১৪ আগস্ট ২০২৪, ১৬:৫০

নির্বাচিত ১২ জাল সনদধারী পাবেন না শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষক পদে নিয়োগে জারি করা পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করে ১২ জন জাল সনদধারী প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। চূড়ান্ত নিয়োগ সুপারিশের আগে প্রার্থীদের সনদ যাচাই-বাছাইয়ে তারা ধরা পড়েছেন। জাল সনদধারী ১২ জন প্রার্থীই বরিশাল বিভাগের বলে জানা গেছে। তারা চূড়ান্ত সুপারিশ পাবেন না বলে জানিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কর্মকর্তারা। ফলে জাল সনদ দিয়ে আবেদন করলেও তারা শিক্ষক হতে পারবেন না। 

বুধবার (১৪ আগস্ট) এনটিআরসিএর একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে নিশ্চিত করেছেন। 

সূত্র জানায়, নতুন ৯৬ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগের জন্য জারি করা পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে নির্বাচিত ২২ হাজার প্রার্থীর কাছ থেকে সনদ সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করছে এনটিআরসিএ। যাচাই-বাছাইয়ে নির্বাচিত ১২ জন শিক্ষক নিবন্ধনের জাল সনদধারী চিহ্নিত হয়েছেন। তারা সবাই বরিশাল বিভাগের।

শিক্ষক নিয়োগ সুপারিশ ও এ সংকান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে এনটিআরসিএর শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান শাখা। জানতে চাইলে ওই শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে শুধুমাত্র ১৬তম ও ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের সনদধারী প্রার্থীরা আবেদন করার সুযোগ পেয়েছিলেন। নির্বাচিত প্রার্থীদের সনদ যাচাই করে দেখা যায়, ১৬তম ও ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ দাবি করে সনদ জমা দেয়া হলেও ১২জন প্রার্থীর সনদে ২০২০ সালের শুরুতে এনটিআরসিএ থেকে অবসরে যাওয়া চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব আশফাক হুসেনের ডিজিটাল স্বাক্ষর। তবে ১৬ বা ১৭ তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ ও সনদ স্বাক্ষরের অনেক আগেই আশফাক হুসেন অবসরে চলে গেছেন। তাই ওইসব সনদে আশফাক হুসেনের স্বাক্ষর থাকার কথা না। বিষয়টি অধিকতর যাচাই করে তাদের সনদগুলো জাল বলে ধরা পড়ে। ওই ১২ জাল সনদধারীকে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে না। 

জানতে চাইলে শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান শাখার পরিচালক (উপসচিব) কাজী কামরুল আহছান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা নির্বাচিত প্রার্থীদের সনদ যাচাইয়ে ১২ জন জাল সনদধারীকে শনাক্ত করেছি। তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে না। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আসলে পরীক্ষায় পাস করেছে এমন কোন প্রার্থীর তথ্য সংগ্রহ করে হুবুহু জাল সনদ তৈরি করা হয়। সাধারণত কোনো একজন নিবন্ধিত প্রার্থীর রোল নম্বর ও তিনি কোন ব্যাচে নিবন্ধিত— এসব তথ্য সংগ্রহ করে অসৎ ব্যক্তিরা জাল সনদ তৈরি করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রার্থীর নামও একই থাকে। তবে বাবা-মায়ের নাম ও অন্যান্য তথ্যও এক থাকতে পারে। তবে অধিকতর যাচাই করে আমরা নিশ্চিত হতে পারি—কোন সনদটি জাল ও কোনটি সঠিক। কেউ যখন শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কোনো প্রার্থীর সনদ জাল করে আবেদন করেন; তখন এনটিআরসিএ’র সার্ভারে উত্তীর্ণ প্রার্থীর রোল নম্বরটিই শনাক্ত হয়। তথ্যে মিল থাকায় হয়তো আসল প্রার্থীই আবেদন করেছেন বলে সার্ভার মনে করে। ফলে কম্পিউটার সিস্টেমও বিভ্রান্ত হয়ে তাদের নির্বাচিত করে। তবে পরে যাচাই-বাছাইয়ে অন্যান্য তথ্য দেখে জাল সনদের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

পরিচালক কাজী কামরুল আহছান আরও বলেন, ১২ জন ধরা পড়লেও আরও জাল সনদধারী থাকলেও থাকতে পারেন। তাই আমরা চূড়ান্ত সুপারিশের সময় আমরা প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষদের বলবো প্রার্থীর সনদ যাচাই করে তাকে যোগদান করাতে। অপরদিকে জাল সনদধারী এমপিওর আবেদন করলে সেখানেও মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে বিষয়টি ধরা পড়বে। জাল সনদ দিয়ে শিক্ষকতা আর সম্ভব নয়। 
 
এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা বলছেন, জাল সনদের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো প্রার্থী জাল সনদ নিয়ে শিক্ষকতা করতে পারবেন না। সে সুযোগই নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কারো সনদ সম্পর্কে সন্দেহ থাকলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে তা এনটিআরসিএ কার্যালয়ে পাঠাতে হবে। কোনো শিক্ষক জাল সনদধারী বলে শনাক্ত হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে সুপারিশ করে এনটিআরসিএ।

এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান এর আগে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জাল সনদধারীদের নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। তবে, বুধবার এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে তার কার্যালয়ে যাওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।  
  
চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতেও জাল সনদ দিয়ে আবেদন করে ১২৩ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। যাচাই-বাছাইয়ে ধরা পড়ায় তাদের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়নি।

এদিকে নির্বাচিত প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশ করা কাজ অনেকটাই গুছিয়ে এনেছে এনটিআরসিএ। কর্মকর্তারা বলছেন প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি মিললে প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে। চলতি আগস্ট মাসেই নির্বাচিত প্রার্থীদের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হবে বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে আশা প্রকাশ করেছেন কর্মকর্তারা।