৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১-১৫তম নিবন্ধনধারীদের আবেদন
৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসানর কাছে আবেদন জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন ১-১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন সনদধারীরা। ১-১৫তম নিবন্ধনধারীদের পক্ষে মো. রাসেল আহসান এবং মো. মাহমুদুল হাসান এ স্মারকলিপি জমা দেন।
স্মারকলিপিতে তারা জানান, শিক্ষক সংকট সমাধানে প্রতিবছর ৪টি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আশ্বাস নিবন্ধনধারীদের মধ্যে আশার আলোর সঞ্চালন হয়েছে। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের জটিলতা সৃষ্টি বহু পুরোনো। এই জটিলতা গুলোর দায় এনটিআরসিএ কোন ভাবেই এড়াতে পারে না। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিপত্র বহুরুপী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও প্রনয়ণ, আমলাদের অনৈতিকতা, অদায়িত্বশীল আচারণে ভুল সিদ্ধান্তের প্রতিফলন। এসব কারণে এনটিআরসিএর করুণ অবস্থা।
উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে কিছু সংখ্যক নিবন্ধনধারী তাদের অধিকার ও স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়েছে মর্মে প্রতিকারার্থে মহামান্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। এই পিটিশনগুলো দীর্ঘদিন চলতে থাকায় বিষয়টি রিট ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। কিছু অসাধু এডভোকেট ও রিট প্রধানগণ আইনকে ব্যবসার মাধ্যম বানিয়ে ফেলেছে। এর সুফল ভোগ করা থেকে এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োজিত প্রতিনিধিরাও বাদ যায়নি। এভাবে একহাজারের বেশি মামলা এনটিআরসিএর উপর চলতে থাকে। যার মাধ্যমে প্রতিটি রিটকারী তাদের একক ভাবে/শর্তহীন ভাবে নিয়োগ দাবি করে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
তারা বলেন, ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর এনটিআরসিএ স্মারক নং
৩৭.০৫.০০০০.০০৫.০৪.০০১.২১.৮০০ এর আবেদনের প্রেক্ষিতে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, সলিসিটর অনুবিভাগ রিট-২ শাখা, অ্যাটর্নি জেনারেল ও সলিসিটর ভবন থেকে একটি সুস্পষ্ট মতামত প্রকাশ করেছে। যেখানে সিভিল আপিল নং- ৭১/২০২৩এর কথা উল্লেখ রয়েছে, যা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হওয়ার পূর্বপর্যন্ত ১-১২তমদের ক্ষেত্রে সনদের মেয়াদের কোন নির্দিষ্ট কথা উল্লেখ করেনি। এছাড়া ১৩ ও ১৪তম নিবন্ধন সনদধারীদের একক ভাবে নিয়োগ সুপারিশ চাওয়া সম্পর্কিত সিভিল আপিল নং ৩৪৩/২০১৯ এবং সিভিল রিভিউ পিটিশন ১৯৫/২০২০ সমূহের মতামতে সলিসিটর সনদের মেয়াদ ৩ বছর অতিক্রান্ত হওয়ায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ সুপারিশে আইনগত কোন সুযোগ নেই মর্মে বক্তব্য সুষ্পষ্ট করেছেন। সলিসিটরের মতামতে ১-১৫তম নিবন্ধন সনদধারীদের এমপিও নীতিমালা ২০২১ অনুযায়ী ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিসহ অন্যান্য গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ পাবে না মর্মে এরকম কোন মন্তব্য করেনি। প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের যদি এমন কোনো সনদের মেয়াদ সম্পর্কিত সুষ্পষ্ট রায় থাকত তাহলে সলিসিটরের এই মতামত গ্রহণ প্রয়োজন হতো না।
যেহেতু সলিসিটরের মতামতকে এখানে প্রাধান্য দিয়ে গত ২৫ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি পরিপত্র জারি করেছে। সুতরাং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত ৯ নং পয়েন্টের অযোগ্যতা অংশে সনদের মেয়াদ উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ও আদালত কর্তৃক নির্ধারণের পর উত্তীর্ণ হলে তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে, যা সকল নিবন্ধন সনদধারীর জন্য প্রযোজ্য নয় এবং সংবিধান বর্হিভূত।
উক্ত ধারার বলে যদি এনটিআরসিএ ১-১৫ তমদের মধ্যে যাদের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়স ৩৫ অনুর্ধ্ব তাহাদেরকে ৫ম গণবিজ্ঞপ্তি আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে, তাহলে সংবিধানের ২৭, ২৯ ও ৩১ ধারা লঙ্ঘন হবে।
স্মারকলিপিতে তারা জানান, কোন মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠানই ভুলের উর্দ্ধে নয়। এনটিআরসিএর বেশকিছু অনিয়ম ও বিধি বর্হিভূত কর্মকান্ডের সুস্পষ্ট তথ্য উপাত্ত ও প্রমাণাদি থাকলেও আমাদের মূল উদ্দেশ্য তাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করা নয়। কিন্তু ১-১৫তম নিবন্ধন সনদধারীগণ যাদের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়স অনুর্দ্ধ ৩৫ তাহাদেরকে আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অচলাবস্থার তৈরি হবে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৯৬ হাজার ৮০৬টি শূন্য পদ রয়েছে। শূন্য পদ গুলো পূরণে শুধুমাত্র ১৬তম ও ১৭তম নিবন্ধন সনদধারী যথেষ্ট নয়। ইতিমধ্যে এনটিআরসিএ সর্বশেষ জারিকৃত ২২ অক্টোবর ২০১৫ সালের পরীক্ষা বিধিমালা পরিপত্রের ১০ এর উপবিধি (১) এর ধারাটির কথা উল্লেখ করে মহামান্য সুপ্রিমকোর্ট থেকে এক মহান বিজয় অর্জনের কথা বারবার তুলে ধরছেন। কিন্তু ১-১৫তম সকল নিবন্ধনধারীদের জন্য উক্ত ধারাটি প্রযোজ্য নয় এ কথাও এনটিআরসিএর অতীত পরিপত্রগুলো প্রমাণ করে।
মহামান্য সুপ্রিমকোর্টে এনটিআরসিএর করা আবেদনের সনদের মেয়াদ ৩ বছর উপলক্ষে ৭১/২০২৩ রিভিউ আপিলে কোন চূড়ান্ত রায়ই অর্জিত হয়নি। ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শী কতিপয় কিছু অসৎ কর্মকর্তার লাগামহীন কথাবার্তা ও ব্যক্তি স্বেচ্ছাচারিতার প্রভাব খাটিয়ে সলিসিটরের মতামত/আদালতের দোহাই দিয়ে ১-১৫তম অসহায় নিবন্ধন সনদধারীদেরকে ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র চলছে। যুগে যুগে আইন প্রণয়ন হয়েছে মানুষের স্বার্থ ও অধীকার রক্ষায়। এমন কোন আইন জারি করা উচিত হবে না যে আইনের বলবৎ করার মাধ্যমে ৬ লাখ ৩০ হাজার নিবন্ধন সনদধারীর অপমৃত্যু ঘটে। ফলশ্রুতিতে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়ে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও দেশ সবাই চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়। উক্ত সমস্যা সমাধানে আমরা আপনার একান্ত সহযোগীতা কামনা করছি।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়েছে, এনটিআরসিএ মার্চ, ২০২০-এর রায় অনুযায়ী সনদের মেয়াদ ৩ বছর ধরে তাহলে উক্ত রায় অনুযায়ী ৩য় ও ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি ২০২৩ ও সেসিপ-২০২৩ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও সুপারিশ কার্যক্রম সম্পূর্ণ অবৈধ। এমনকি ঘোষিত অকার্যকর সনদের মাধ্যমে ইনডেক্সধারীদের বদলি কার্যক্রম বাস্তবায়নও হুমকির মধ্যে পড়বে। আমরা নিবন্ধন সনদধারীদের জন্য এনটিআরসিএ ক্ষতিগ্রস্থ নয় বরং লাভবান। সুতরাং বিপুল সংখ্যক নিবন্ধনধারীদের সুযোগ না দিয়ে শুধু মাত্র ১৬ ও ১৭তম নিবন্ধন সনদধারীর মাধ্যমে ৫ম গণবিজ্ঞপ্তি পরিচালনা করা অযৌক্তিক। মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে হলেও ১-১৫তমদের মধ্যে যাদের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী কাম্য শিক্ষাগতা যোগ্যতা ও বয়স অনুর্ধ্ব ৩৫, তাদেরকে ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ নিশ্চিত করার অনুরোধ করছি।
একটি স্বদিচ্ছাই কেবল পারে ১-১৫তম সকল অসহায় নিবন্ধন সনদধারীর বেকারত্ব ঘুচিয়ে মুখে হাসি ফোটাতে। যদি এমনটি না করা হয় তাহলে এটি নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকের ঘাটতি পূরণে হবে না।