২৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:৫০

বদলে যাচ্ছে এনটিআরসিএর নিয়োগ প্রক্রিয়া

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক  © ফাইলফটো

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য একটি আইন তৈরির কাজ চলছে। এটি পাস হলে আগের মতো নিবন্ধন সনদ ছাড়াই শিক্ষক হতে পারবেন চাকরিপ্রার্থীরা।

বর্তমানে বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক হতে প্রথমে নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। নিবন্ধন সনদ অর্জনের পর প্রার্থীদের গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে হয়। এতে সময়ক্ষেপনের পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয় চাকরিপ্রার্থীদের। এই প্রক্রিয়ার পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, বর্তমান প্রক্রিয়ায় স্কুলের জন্য আলাদা, কলেজের জন্য আলাদা নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। অনেক কষ্টের বিনিময়ে সনদ অর্জন করার পরও নিবন্ধনধারীদের চাকরির জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে নিবন্ধন সনদ জাল করেও চাকরি করেন। নিবন্ধন সনদ চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দেয় না। কাজেই এই সনদ প্রথার বিলুপ্তি সাধারণ প্রার্থীদের উপকারই করবে। 

এনটিআরসিএ’র নিবন্ধন প্রক্রিয়ার প্রথা বিলুপ্ত হলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আসবে। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে— অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, মহাপরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর

এ প্রসঙ্গে ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী শিক্ষক ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ঝিনাইদহের শামছুল হুদা খান কলেজের শিক্ষক মো. ইমরান খান বলেন, নিবন্ধন সনদ প্রথা তুলে দিয়ে পিএসসি’র আদলে শিক্ষক নিয়োগ হলে তা হবে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এতে করে আগামীদিনের চাকরিপ্রার্থীর  ভোগান্তি কমে যাবে। কেননা বর্তমান প্রক্রিয়ায় প্রিলি, রিটেন, ভাইভা পাসের পর জাতীয় মেধা তালিকায় অপেক্ষায় থাকতে হয়। এরপর আবার গণবিজ্ঞপ্তির অপেক্ষা করতে হয়। তারপরও চাকরি অনিশ্চিত থেকে যেত। তবে নতুন আইনে আর এই অপেক্ষা করতে হবে না।

জানা গেছে, আগামীতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ হবে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আদলে। চাকরিপ্রার্থীরা নিবন্ধন পরীক্ষার পরিবর্তে সরাসরি চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। এরপর শূন্য পদের তথ্য সংগ্রহ করে উত্তীর্ণদের সরাসরি নিয়োগ সুপারিশ করবে এনটিআরসিএ। 

এনটিআরসিএ’র একটি সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে নিবন্ধন সনদ বা প্রত্যয়ন প্রথা উঠে যাচ্ছে। সনদের পরিবর্তে পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণদের তালিকা করে পিএসসি’র আদলে শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ করা হবে। এ জন্য সংশোধন হচ্ছে আইন। সনদ বা প্রত্যয়ন প্রক্রিয়া তুলে দেয়ায় বদলে যাবে এনটিআরসিএ’র নামও।

আমরা একটি আইন তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। আমরা তাদের দেওয়া পর্যবেক্ষণগুলো অন্তর্ভুক্ত করে পুনরায় খসড়া আইনটি পাঠাব। এরপর সংসদে পাস হলে সরাসরি নিয়োগের ক্ষমতা পাবে এনটিআরসিএ— এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা এনটিআরসিএকে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে নতুন আইনের একটি খসড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়। খসড়াটি পর্যালোচনা করে  আরো কিছু অংশ সংস্কারের পর্যবেক্ষণ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। খসড়া আইনে প্রার্থী বাছাইয়ের আইনি ক্ষমতা এনটিআরসিএকে দেয়ায় সনদ দেয়ার বিষয়টি এসেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনটিআরসিএ’র এক কর্মকর্তা জানান, আমরা একটি আইন তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিলাম। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। আমরা তাদের দেওয়া পর্যবেক্ষণগুলো অন্তর্ভুক্ত করে পুনরায় খসড়া আইনটি পাঠাব। এরপর সংসদে পাস হলে সরাসরি নিয়োগের ক্ষমতা পাবে এনটিআরসিএ।

কেবিনেট ডিভিশন কি কি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা আরও জানান, মন্ত্রিপরিষদের পর্যবেক্ষণে প্রত্যয়ন না দিয়ে পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণদের মেধাতালিকা করে সেখান থেকে নিয়োগ সুপারিশ করার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। পিএসসি যেভাবে নিয়োগ সুপারিশ করে, একই আদলে। বিষয়টি খুব দ্রুত যুক্ত করে পুনরায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, এনটিআরসিএ’র নিবন্ধন প্রক্রিয়ার প্রথা বিলুপ্ত হলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আসবে। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। 

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের মার্চের আগ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট স্কুল-কলেজগুলো নিজেরাই নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিত। এরপর এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠা হলে তারা নিবন্ধন সনদ দেওয়া শুরু করে। সংস্থাটি সনদ দিলেও নিয়োগের ক্ষমতা ছিল কমিটির হাতেই। ২০১৫ সাল থেকে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশের ক্ষমতা পায় এনটিআরসিএ। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গতি ফেরানো, আরও স্বচ্ছতা আনতে গঠন করা হচ্ছে জাতীয় শিক্ষা কমিশন। এই কমিশন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সরাসরি প্রার্থীদের নিয়োগ দেবে এনটিআরসিএ।