২৩ জুন ২০২৩, ১০:১১

পদ আইসিটি, নিয়োগে প্রাধান্য পেয়েছে সিএসই

ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক  © ফাইল ফটো

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স করেছেন মো. নেওয়াজ মোর্শেদ ওরফে জুয়েল মিয়া। শিক্ষক হওয়ার লালিত স্বপ্ন নিয়ে ১৬তম নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নেন। ভালো ফলাফল করে জাতীয় মেধাতালিকায় ৩০তম স্থান অর্জন করেছিলেন। ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আইসিটি (প্রভাষক) পদে চাকরির আবেদন করলেও নিয়োগ সুপারিশ পাননি তিনি। জুয়েল মিয়ার অভিযোগ, পদের নাম আইসিটি হলেও আইসিটি বিষয়ের নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। নিয়োগে প্রাধান্য পেয়েছেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিষয়ে নিবন্ধন সনদ অর্জন করা ব্যক্তিরা।

তিনি বলেন, আমার আবেদনের ১৯টি কলেজের মধ্যে মেধাক্রমে আমার চেয়ে পিছিয়ে থেকেও সিএসই বিভাগ থেকে পাস করা ১০ জন নিয়োগ পেয়েছেন। আইসিটি পদে নিয়োগ পাওয়ার অগ্রাধিকার আইসিটি নিয়ে পড়ালেখা করা গ্র্যাজুয়েটদের হওয়ার কথা। সেটি না করে সিএসই নিয়ে পড়ালেখা করা গ্র্যাজুয়েটদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে। এটি প্রহসন ছাড়া কিছুই না। আমরা বৈষম্যের শিকার। মেধাক্রম অনুসারে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির প্রাথমিক সুপারিশের ফলাফল পুনঃমূল্যায়নের দাবি জানাচ্ছি।

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আইসিটি প্রভাষক বিষয়ের পদ ছিল ১২৮টি। এর মধ্যে ১০৬টি পদে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন কম্পিউটার সায়েন্সের নিবন্ধনধারীরা। অবশিষ্ট পদগুলোতে আইসিটি বিষয়ের নিবন্ধনধারীদের সুপারিশ করা হয়েছে। এসব প্রার্থীরা পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে চূড়ান্ত সুপারিশপত্র পাবেন—এনটিআরসিএ

শুধু নেওয়াজ মোর্শেদ নয়; চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আইসিটি প্রভাষক পদে চাকরির আবেদন করে সুপারিশ বঞ্চিত হয়েছেন আইসিটি বিষয়ের নিবন্ধনধারীরা। আইসিটি পদে আইসিটি নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ দেওয়া না হলে এই বিষয়ের সনদ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। নিবন্ধনধারীদের অভিযোগ, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে মেধারভিত্তিতে নিয়োগের কথা বলা হলেও সেটি করা হয়নি। নম্বরের ভিত্তিতে সুপারিশ করায় সিএসই বিষয়ের নিবন্ধনধারীরা বেশি সুপারিশ পেয়েছেন। এই অবস্থায় ফলাফল পুনঃমূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বলছে, প্রার্থীদের আবেদন এবং মেধাক্রমের ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ অটোমেটিক পদ্ধতিতে করা হয়েছে। আইসিটি বিষয়ের নিবন্ধনধারীদের প্রাপ্ত নম্বর কম। অন্যদিকে সিএসই বিষয়ের নিবন্ধনধারীদের নম্বর বেশি থাকায় তারা সুপারিশ পেয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে আইসিটি প্রভাষক বিষয়ের পদ ছিল ১২৮টি। এর মধ্যে ১০৬টি পদে নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন কম্পিউটার সায়েন্সের নিবন্ধনধারীরা। অবশিষ্ট পদগুলোতে আইসিটি বিষয়ের নিবন্ধনধারীদের সুপারিশ করা হয়েছে। এসব প্রার্থীরা পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে চূড়ান্ত সুপারিশপত্র পাবেন।

আইসিটি বিষয়ের নিবন্ধনধারীরা বলছেন, ২০২২ সালের ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিত ও বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে মেধাক্রম অনুসারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল। তখন কোন সমস্যা হয়নি। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ৭ নং পয়েন্টে মেধাক্রম অনুযায়ী সুপারিশ করা কথা বলা হলেও সেটি মানা হয়নি। গণবিজ্ঞপ্তির কোথাও নম্বরের ভিত্তিতে সুপারিশের কথা উল্লেখ ছিল না। হুট করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আইসিটি বিষয়ের নিবন্ধনধারীরা বঞ্চিত হয়েছেন। প্রায় সকল ক্ষেত্রে আইসিটি নিবন্ধনধারীদের ডিঙ্গিয়ে মেধাতালিকায় পিছিয়ে থাকা সিএসই নিবন্ধনধারীরা নিয়োগ পেয়েছেন। 

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ৭ নং পয়েন্টে উল্লেখিত প্রার্থীর মেধাক্রম অনুসারেই ফলাফল তৈরি হয়েছে। মেধাতালিকা হয়েছে মার্কস এবং বয়সের ভিত্তিতে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কয়েকজনের মার্কস একই হলে তাদের মধ্যে বয়সের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মেধাতালিকা তৈরি করা এবং নিয়োগের সুপারিশ করা। আমরা সেটিই করেছি—কাজী কামরুল আহছান, পরিচালক এনটিআরসিএ।

টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইসিটিতে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আমার মেধাক্রম ৬৯। মেধাক্রম প্রথম দিকে হওয়ায় আমি নির্ভার থেকে ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৭ টি কলেজে আবেদন করি । ১৭টি কলেজের মধ্যে ৮টি কলেজেই আমার পেছন থেকে সিএসই বিষয়ের নিবন্ধনধারী নিয়োগ পেয়েছে। অথচ আমি কোথাও নিয়োগ পাইনি। আইসিটি ও সিএসই এর দুটি আলাদা মেরিট লিস্ট আছে, সেখানে মেরিট লিস্ট থেকে মেধাক্রম অনুসারে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কার স্বার্থে এই হঠকারী সিদ্ধান্ত তা আমার বোধগম্য নয়। আমি ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির ৭নং পয়েন্ট অনুসারে ফলাফল পুনঃমূল্যায়ন চাই।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী নাবিলা মাহাজাবিন বলেন, ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধনে আমার মেধাক্রম ৩য়। আমি ২০টি কলেজে আবেদন করেছিলাম। মেধাক্রমে অবস্থান ভালো হওয়ায় আমার পছন্দক্রমের প্রথম দুই বা তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আমার সুপারিশ পাওয়ার কথা থাকলেও আমি সুপারিশ পেয়েছি চয়েজ লিস্টের একদম তলানিতে থাকা প্রতিষ্ঠানে। অথচ মেধাতালিকায় আমার অনেকে পিছিয়ে থেকেও ১১ জন সিএস (সিএসই) নিবন্ধনধারী সুপারিশ পেয়েছেন আমার পছন্দক্রমে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। এটি মেনে নেওয়ার মতো না। আমি ৩য় ও বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মতো মেধাক্রমের ভিত্তিতে প্রাথমিক সুপারিশের ফল পুনঃমূল্যায়ন চাই।

প্রার্থীদের এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ’র পরিচালক (শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান) কাজী কামরুল আহছান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চাকরিপ্রার্থীরা ঢালাওভাবে অভিযোগ করেছেন। তাদের সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। মেরিট লিস্ট করা হয় পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে। কম্পিউটার সায়েন্স এবং আইসিটি দুটি নাম আলাদা। তবে পদ একই। পদের নাম পরিবর্তন করে সিএসই থেকে আইসিটি করা হয়েছে। নীতিমালা পরিবর্তন করতে আগের নাম বাদ দেয়া হয়নি। আগের নাম থাকবে কি থাকবে না সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এজন্য আমরা দুই পদের যোগ্যদেরই আবেদনের সুযোগ দিয়েছি। কম্পিউটার সায়েন্স নামে আগের যারা পাস করে আছে তারাও যোগ্য, আবার আইসিটি হওয়ার পর যারা পাস করেছে তারাও যোগ্য। একই পদে দুই বিষয়ের আলাদা মেরিট লিস্ট হওয়াতে আমরা মার্কস এবং বয়সের ভিত্তিতে একত্রে মেধাতালিকা করেছি। সেভাবেই নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।

জীববিজ্ঞানের সুপারিশের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সমস্যা হয়েছিল। সেটি আপনারা সমাধান করেছেন। তাহলে আইসিটি ও সিএসইর সমস্যা সমাধান করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জীববিজ্ঞান প্রদর্শক পদের বিষয় আর আইসিটির বিষয়টি এক না। জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে প্রদর্শক (বোটানি) এবং প্রদর্শক (জুলোজি) দুইটা আলাদা পদ। আমরা দুই মেরিট লিস্ট থেকে আলাদা নিয়োগ দিয়েছি। কিন্তু আসিটি পদে বিষয়টা এইরকম না। আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা আলোচনা-পর্যালোচনা করেছি; এখানে দুই মেরিট থেকে আলাদা নিয়োগ দেয়ার সুযোগ নেই। এজন্যই আমরা একত্রে মেরিট লিস্ট করেছি। এক্ষেত্রে সিএসই’র শিক্ষার্থীরা ভালো মার্কস পেয়েছে বিধায় কম্বাইন মেরিট লিস্টে শুরুর দিকে থেকে বেশি সুযোগ পেয়েছে। 

৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তির ৭ নং পয়েন্ট অনুযায়ী নিয়োগ সুপারিশ না করার অভিযোগ প্রসঙ্গে কাজী কামরুল আহছান আরও বলেন, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ৭ নং পয়েন্টে উল্লেখিত প্রার্থীর মেধাক্রম অনুসারেই ফলাফল তৈরি হয়েছে। মেধাতালিকা হয়েছে মার্কস এবং বয়সের ভিত্তিতে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কয়েকজনের মার্কস একই হলে তাদের মধ্যে বয়সের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মেধাতালিকা তৈরি করা এবং নিয়োগের সুপারিশ করা। আমরা সেটিই করেছি।