শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন গৌরাঙ্গ
শিক্ষক নিবন্ধনের জাতীয় মেধাতালিকায় এগিয়ে থেকেও নিয়োগের সুপারিশ পাননি নাটোরের সিংড়া উপজেলার গৌরাঙ্গ কুমার ঘোষ। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে তাই নিজের নিবন্ধন সনদ নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তিনি।
বুধবার (২২ মার্চ) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনের সামনে কথা গৌরাঙ্গের সাথে। তিনি জানান, চাকরির বয়স শেষের দিকে। বৃদ্ধ মা-বাবার একমাত্র সম্বল তিনি। দীর্ঘদিন ধরে চাকরির চেষ্টা করেও সুযোগ মেলেনি। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশ পাওয়ার আশা ছিল তার। তবে সেই আশায় গুড়ে বালি দিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।
জানা গেছে, বগুড়ার সারকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রসায়ন বিষয়ে দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন তিনি। ১২তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। সম্মিলিত জাতীয় মেধাতালিকায় তার অবস্থান ১২১৫৬। চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে তিনি যে ৪০টি প্রতিষ্ঠান পছন্দক্রমে দিয়েছিলেন সেই তালিকার ২৯ নম্বর প্রতিষ্ঠানে সুপারিশপ্রাপ্ত ব্যক্তির মেধাক্রম ১২৪৬৭। এছাড়া পছন্দক্রমের ৩৯ নম্বর প্রতিষ্ঠানে যিনি সুপারিশ পেয়েছেন তার মেধাক্রমও ১২৪৬৭।
মেধাতালিকায় এগিয়ে থেকেও সুপারিশ না পাওয়ায় ভেঙে পড়েছেন গৌরাঙ্গ। তিনি বলেন, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি আমার শিক্ষক হওয়ার শেষ সুযোগ। এই গণবিজ্ঞপ্তিতে আমি সুপারিশ না পেলে শিক্ষকতার মহান পেশায় আমি যোগদান করতে পারবো না। আমার শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নও পূরণ হবে না। এনটিআরসিএ’র কাছে আমার অনুরোধ, তারা যেন যাচাই-বাছাই করে হলেও আমাকে নিয়োগের সুপারিশ করেন।
গৌরাঙ্গ কুমার ঘোষের আবেদন কপি ঘেঁটে দেখা যায়, তিনি তার পছন্দক্রমের ২৯ নম্বর প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজশাহীর পুটিয়া উপজেলার সাতবাড়িয়া হাই স্কুল সিলেক্ট করেছেন। এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে ১২তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মো. শাহাদত হোসেনকে। জাতীয় মেধাতালিকায় তার অবস্থান ১২৪৬৭। তার সিরিয়াল নম্বর ১৩২৬২।
অন্যদিকে পছন্দক্রমের ৩৯ নম্বরে থাকা কুষ্টিয়ার ভেরামারা উপজেলার বাহাদুরপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সুপারিশ পেয়েছেন সপ্তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মো. এখলাস উদ্দীন। জাতীয় মেধাতালিকায় তার অবস্থান ১২৪৬৭। তার সিরিয়াল নম্বর ১২৯৬৭। সিরিয়াল ও মেধাক্রম দুটোতে এগিয়ে থাকলেও নিয়োগের সুপারিশ পাননি গৌরাঙ্গ কুমার ঘোষ।
গৌরাঙ্গ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হওয়ার সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর। আর আমার বয়স ৩৪ বছর ৮ মাস। টিউশনি করে অনেক কষ্টে পরিবার নিয়ে চলি। এই চাকরিই আমার জীবনের শেষ সম্বল। নিজেকে সমাজের সামনে তুলে ধরার শেষ সুযোগ। আমি মেধাতালিকায় এগিয়ে থেকেও সুপারিশ পাইনি।
তিনি আরও বলেন, এনটিআরসিএ তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, মেধাতালিকায় যারা এগিয়ে থাকবে তাদের নিয়োগের সুপারিশ করা হবে। অথচ মেধাতালিকায় পিছিয়ে থেকেও আমার পছন্দক্রমের প্রতিষ্ঠানে দুইজন নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন। এটি কীভাবে হলো? আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত চাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ’র সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মেধাতালিকায় এগিয়ে থেকেও যারা নিয়োগের সুপারিশ পাননি; তারা আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা এই অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করছি। যাদের অভিযোগগুলো সঠিক হবে তাদের বিষয়ে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।