২৯ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৫৭

যে তিন কারণে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশে দেরি 

এনটিআরসিএ লোগো  © ফাইল ছবি

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় বারবার পেছাচ্ছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। ১৬তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে চলতি নভেম্বর মাসে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রতিশ্রুতি থাকলেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি এনটিআরসিএ। এর আগে অক্টোবর মাসে একই ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।

এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষক নিয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি মিললে দ্রুত সময়ের মধ্যে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তবে এই ‘দ্রুত সময়’ কবে শেষ হবে সেটি নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না কেউ। ফলে দীর্ঘদিন ধরে চাকরির অপেক্ষায় থাকারা হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

বুধবার (২৯ নভেম্বর) চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে এনটিআরসিএ’র কার্যালয়ে যায় এ প্রতিবেদক। বিষয়টি নিয়ে একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস। কর্মকর্তাদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশে দেরি হওয়ার পেছনে তিনটি কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে। মূলত এই তিন কারণেই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে।

কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা একাধিক মামলা করেছেন। এই মামলাগুলোর বেশ কয়েকটির রায় এনটিআরসিএ’র পক্ষে এসেছে। তবে পক্ষে আসা রায়গুলোতে স্টে-অর্ডার দিয়েছেন উচ্চ আদালত। ফলে এনটিআরসিএ তার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। যে রায়গুলোর ওপর আদালত স্টে-অর্ডার দিয়েছেন সেগুলোর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হচ্ছে। গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিলম্ব হওয়ার অন্যতম কারণ এটি।

দ্বিতীয় কারণ হিসেবে এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তারা বলছেন, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের লক্ষ্যে বেশ কয়েকদিন আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি দিতে বিলম্ব হওয়ায় চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।

তৃতীয় কারণ হিসেবে এনটিআরসিএ জানিয়েছে, অত্যাধিক কাজের চাপ। তাদের মতে, বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি ও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত সুপারিশ, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা আয়োজন, ভুল চাহিদায় সুপারিশপ্রাপ্তদের রি-সুপারিশসহ একাধিক কাজ নিয়ে কর্মকর্তারা অত্যাধিক চাপের মধ্যে রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি চাপে সৃষ্টি হয়েছে ১৭তম নিবন্ধনের পরীক্ষা নিয়ে। প্রায় ১২ লাখ চাকরি প্রার্থীর রোল নম্বর, প্রবেশপত্র কোনো কিছুই তৈরি করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এই কারণে শূন্য পদের তথ্য ঠিকভাবে যাচাই করা যাচ্ছে না। এর ফলে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমোদনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমোদন সংক্রান্ত নথিপত্র সরকারের উচ্চপর্যায়ের দপ্তরে রয়েছে। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে আসলে আমরা সেটি এনটিআরসিএকে চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে।  

৭০ হাজারের বেশি পদ শূন্য
এদিকে তিন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত শূন্য পদের তথ্য যাচাইয়ের কাজ প্রায় শেষ করেছে এনটিআরসিএ। স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৭০ হাজারের বেশি শূন্য পদের তথ্য চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এনটিআরসিএ’র নিয়োগ শাখা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে শূন্য পদের তথ্য পাওয়া গেছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের। এই অধিদপ্তর ৩৭ হাজার ৬৬৪টি শূন্য পদের তথ্য এনটিআরসিএতে পাঠিয়েছিল। এর মধ্যে এক হাজারের কিছু বেশি পদ বাকি রেখে ৩৬ হাজার ৫৬২টি শূন্য পদ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ৩২ হাজার ৫০০ শূন্য পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এই তথ্যে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। আর কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত শূন্য পদের সংখ্যা ২ হাজার ৯৬টি হলেও এক হাজার পদ বাকি রেখে এক হাজার ১০২টি পদ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে এনটিআরসিএ’র সচিব বলেন, শূন্য পদের যে তথ্য পাওয়া গেছে সেখানে কিছু ভুল রয়েছে। এগুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। পদ সংখ্যা আরও কমতে পারে বলেও জানান তিনি।