প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গড়ে তিন শিক্ষকের পদ শূন্য
সারাদেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৯০ হাজার পদে কোনো শিক্ষক নেই। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের এসব স্কুল, মাদ্রাসা, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও কলেজের প্রতিটিতে গড়ে ৩ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ২৯ হাজার এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানেই আছে ৬৫ হাজার। বাকি পদগুলো এমপিওবিহীন প্রতিষ্ঠানে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষক সংকট এখন অনেকটাই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য তারা এনটিআরসিএর ভুল পদ্ধতিকে দায়ী করেছে। ২০১৬ সালের আগে ম্যানেজিং কমিটির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হতো। আর্থিক লেনদেন রোধে শিক্ষক নিয়োগ ক্ষমতা এ সংস্থাটির কাছে ন্যস্ত করে সরকার। তখন থেকে সংস্থাটি প্রতিবছর শিক্ষক নিয়োগ দিলে এভাবে এত পদ শূন্য থাকে না।
গত ৬ বছরে মাত্র তিনটি নিয়োগ দিয়েছে। এই নিয়োগের জন্য কোনো পরীক্ষা নেওয়ার দরকার হয় না। কেননা ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ১৬টি পরীক্ষা নিয়েছে সংস্থাটি।
এতে সাড়ে ৬ লাখের বেশি প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে আছে। সরকার অবশ্য সর্বশেষ এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে বয়স বেঁধে দিয়েছে ৩৫ বছর। নির্ধারিত বয়সি মোট প্রার্থী আছেন ২ লাখ ৪৮ হাজার ৭৪৮ জন। এদের মধ্যে অবশ্য অনেকে ইতোমধ্যে চাকরি পেয়ে গেছেন। ফলে এ ধরনের প্রার্থীর সংখ্যা সবমিলে ১ লাখ ৪০ হাজারের মতো বলে সূত্র জানিয়েছে।
আরও পড়ুন: ২৩ ডিসেম্বর ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নিতে চায় এনটিআরসিএ
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক সংকটের যে কথা বলা হচ্ছে সেটি যদি বাস্তবিক অর্থেই হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের পাঠদানে পড়বে। সংশ্লিষ্টদের উচিৎ দ্রুত সময়ের মধ্যে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করা।
এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ২০১৬ সাল থেকে তার সংস্থা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্যপদে নিয়োগের দায়িত্ব পেয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৮০৬৬৮ প্রার্থী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ তৃতীয় বিজ্ঞপ্তিতে ৩৪ হাজার এবং বিশেষ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আরও ১৫ হাজার নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি বলেন, আরও এখন চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর অংশ হিসাবে ইতোমধ্যে সারা দেশের এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান শূন্যপদের তালিকা সংগ্রহের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ৬০ হাজারের কিছু বেশি পদে নিয়োগের লক্ষ্যে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্যপদ পূরণে ডিসেম্বরের দিকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
এদিকে, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পাঁচ বছরের এমবিবিএস (ব্যাচেলর অব মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অব সার্জারি) কোর্সেও তীব্র শিক্ষক সংকট চলছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, মেডিকেল কলেজে প্রতি দশজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকতে হয়। কোনো কলেজে ১৪০ জন শিক্ষার্থী হলে নীতিমালা অনুযায়ী ৪৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রত্যেক বিষয়ে ১৪ জন করে শিক্ষক থাকতে হবে। যার মধ্যে এক থেকে দুজন অধ্যাপক, তিনজন সহযোগী, চারজন সহকারী অধ্যাপক এবং বাকি পদগুলোতে প্রভাষক থাকবে।
তিনি বলেন বলেন, এ হিসাবে আটটি মৌলিক বিষয়ে ১১২ জন শিক্ষক থাকা উচিত। বেসিক (মৌলিক) বিষয়ে শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে ভালো চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ হতে পারবে না। তারা ঈপ্সিত শিক্ষা ও সেবা কোনোটাই দিতে পারবে না। প্রাইভেট-পাবলিক যে প্রতিষ্ঠানই হোক সেখানে বেসিক সাবজেক্টসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষক অন্যান্য সুবিধা না থাকলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া উচিত।