লকডাউন: টিউশন হারাচ্ছেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা
পুরান ঢাকার একটি কলেজে স্নাতকোত্তরে পড়ছেন তাহমিনা আক্তার। ঢাকার অদূরে কেরাণীগঞ্জে বসবাস করা মধ্যবিত্ত পরিবারের এই শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশন করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালায়। তার মতে, গেল বছর করোনার ঊর্ধ্বগতিতে লকডাউন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় টিউশন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বছরের শেষে এ সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠলে চলমান লকডাউনে ফের বন্ধ হয়ে যায় টিউশন।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারাদশে ফের লকডাউন শুরু হয়েছে। চলমান কঠোর লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়তে যাচ্ছে। এতে জরুরি সেবা ছাড়া বন্ধ রয়েছে সবকিছু। শুধু তাহমিনা আক্তার নয়, চলমান লকডাউনের সময় যতদিন বাড়ছে, টিউশন হারানো শঙ্কা ততই বাড়ছে হাজার হাজার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীর।
জানা যায়, বৈশ্বিক মহামারি করোনার আগ্রাসনে গেল বছরের মার্চ মাস থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে ঘরবন্দি সময় পার করছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও এর মধ্যে অনলাইনে পাঠদানের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে সেটি নিয়ে রয়েছে নানা বির্তক।
তথ্য মতে, শহরাঞ্চলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ টিউশন করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালায়। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই এসব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের হোম টিউটর হিসেবে রেখে পাঠদান করে থাকে। কিন্তু গেল বছর করোনার ঊর্ধ্বগতিতে লকডাউন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় টিউশন হারানোর সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠতেই ফের নতুন করে লকডাউন কিছুটা শঙ্কা তৈরি করেছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিম জেরিন বলেন, গেল বছর করোনার সাথে বাবাকেও হারায়। সেই সাথে কোভিড পরিস্থিতির ফলে টিউশনগুলোও ছুটে যায়। মাঝে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ফের টিউশন করানো শুরু করি। তবে গেল বছরের সৃষ্ট সংকট কাটিয়ে ওঠার পূর্বেই ফের করোনার ঊর্ধ্বগতি ও দফায় দফায় লকডাউনের ফলে নতুন করে অনিশ্চয়তার মুখে টিউশনগুলো।
তিনি আরও বলেন, চলতি বছর তিনটা টিউশন থাকলেও নতুন করে লকডাউনের প্রভাবে ইতিমধ্যে একটি টিউশন ছুটে গেছে, বাকিগুলোও অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চানু মিনা। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের আশপাশে কয়েকটি টিউশন করিয়ে পড়ালেখার খরচ চালাতেন তিনি। করোনার কারণে তার সব টিউশন বন্ধ। তিনি জানান, টিউশন করিয়ে নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারকেও কিছু সহায়তা করতাম। করোনার কারণে এখন সব বন্ধ আর ভ্যান চালক বাবার শারীরিক অবস্থাও ভালো না। সবমিলিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছি।
চট্টগ্রাম কলেজের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মুন্সী মুহাম্মদ জুয়েল বলেন, কোভিড পরিস্থিতি আমাদের মতো নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষদের ক্রমশ বিষিয়ে তুলছে। একমাত্র আয়ের পথ টিউশন করিয়ে আগে নিজের খরচ ও পরিবারে কিছুটা অবদান রাখতে পারতাম। কিন্তু করোনা আসার পর থেকেই সব টিউশন অনিশ্চয়তার মুখে। এমতাবস্থায় স্বাভাবিক জীবনযাপন খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী মো. আবির বলেন, গ্রাম থেকে শহরে এসেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশন করিয়ে কিছুটা নিজের খরচ ও পরিবারের সাহায্য করার আশা নিয়ে। মেস ভাড়া করে শহুরে জীবনযাপন সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে দফায় দফায় লকডাউন অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে নেই আগের মতো টিউশন। ফলে আয় কমে যাওয়ায় মেস ভাড়া করে শহরে থাকা ও নিজের পড়ালেখার খরচ চালাতেই বিরাট হিমশিম খেতে হচ্ছে।