উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডা হতে পারে আপনার কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য

শুধুমাত্র বাংলাদেশী শিক্ষার্থীই নয়,পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথম পছন্দ হচ্ছে কানাডা। কানাডার শিক্ষার মান, স্কলারশিপ প্রাপ্তি, বাৎসরিক টিউশন ফি, আবাসন সুবিধা, শিক্ষার্থীদের আয়ের পথ এবং শিক্ষাজীবন শেষে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ ইত্যাদি বিষয়সমূহ বিবেচনায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কানাডায় উচ্চশিক্ষার আগ্রহ ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এছাড়া বর্তমানে কানাডা সরকার উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা সহজ করে দিয়েছে। ফলে বর্তমানে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছে।

কেন কানাডায় উচ্চশিক্ষা করতে যাবেন?
কানাডা এখন বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে বসবাসের জন্য স্বপ্নের দেশে পরিনত হয়েছে। যেসব কারনে কানাডা এখন  অনেক দেশের তুলনায় ভাল অবস্থানে রয়েছে তার মাঝে  অন্যতম হচ্ছে কানাডার আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা এবং  বেঁচে থাকার জন্য ভেজাল মুক্ত খাবার, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ, সুশাসন ও সামাজিক নিরাপত্তা। এছাড়াও কানাডার বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন। নারী ওপুরুষের মধ্যে বৈষম্য অনেক কম। দেশটির যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিক। শহরগুলোতে পৃথিবীর সেরা গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবস্থা বিদ্যমান। ব্যাংকিং ও বীমা সেক্টর শক্ত ভিত্ত্বির উপর প্রতিষ্ঠিত।  

ইংরেজী প্রধান ভাষা হওয়ায় অভিবাসী মানুষদের জন্য নতুন দেশে মানিয়ে নেয়া সহজ হয়। কানাডা অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান ,কফি শপ, ছোট বড় শপিংমল আছে যেখানে শিক্ষার্থীরা কাজ করতে পারে। কানাডায় বেকারত্বের হার খুবই কম গড়ে ৬ শতাংশ।কানাডায় মাথাপিছু গড় আয় অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি এজন্য চাকরিরত অবস্থায় ইনকামের পরিমানও বেশি হয়। কানাডায় বিদেশী শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে  ২০ ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকে । আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয়েই পার্টটাইম চাকরি করার সুযোগ পাবেন ।  এছাড়াও ,বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে কানাডার সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য। আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অনেক কম তাই লেখাপড়া শেষ করে পার্মানেন্ট হওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয় কানাডায়।

আরও পড়ুন: ইউরোপীয় স্কলারশিপ প্রাপ্তিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা তৃতীয়

কানাডা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করার জন্য বেশ কিছু যোগ্যতা প্রয়োজন হয়ে থেকে । আপনি যদি কানাডায় বি,এস,সি/বি,বি,এ/ পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা ইত্যাদি প্রোগ্রামগুলোতে ভর্তি হতে চান তাহলে আপনাকে ন্যূনতম IELTS লাগবে ৬.০-৭.০ পর্যন্ত। অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর নির্ভর করে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হতে IELTS স্কোর ৬.৫ থেকে ৭.০ লেগে থাকে। এছাড়াও    
• আপনার একাডেমিক ফলাফল ভালো থাকতে হবে । 
• আপনি পড়াশোনার শেষ করা পর্যন্ত সমস্ত খরচ বহন করতে পারবেন এমন প্রমাণ দেখাতে হবে । ( টিউশন ফিস এর খরচ  ) 
• পুলিশ প্রশংসাপত্র/ পুলিশ ক্লিয়ারেন্স লাগবে। (প্রয়োজ্য ক্ষেত্রে)
• একটি মনোনীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (ডিএলআই) নথিভুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীকে অবশ্যই কানাডার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হবে এবং উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুমতিপত্র লাগবে।
• স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা পরীক্ষা দিতে হবে। (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে )
• পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরে আসতে হবে । 

যে সকল কাগজপত্রের দরকার হয়, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ ও নম্বরপত্র, এসওপি, প্রত্যায়নপত্র/রিকোমেন্ডশন লেটার ইত্যাদি। ব্যাংক সলভেন্সি ফাইনান্সিয়াল এবিলিটি দেখাতে হয়   (ব্যাংকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা রাখা ) যাতে করে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে যে আপনার  লেখাপড়া করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে। 

কানাডার সবচেয়ে কম টিউশন ফির বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের মধ্যে অন্যতম দুইটি  বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে নিউফাউন্ডল্যান্ডের মেমোরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ে (Memorial University) এবং  University of Saskatchewan এ।  এই দুটিতে তুলনামূলকভাবে টিউশন ফি অনেক কম । নিউফাউন্ডল্যান্ডের মেমোরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ে  টিউশন ফি $9,666 এর মত এবং University of Saskatchewan বিশ্ববিদ্যালয়ে  টিউশন ফি প্রতি সেমিষ্টারে $১৭২৩ টাকা ।
 
কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারনত প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত সেশন থাকে। আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ভর্তির বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে হবে ।এছাড়াও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা  জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল-জুনেও সেশন শুরু করে থাকে। সাধারনত পিএইচডি কিংবা পোস্ট ডক্টরেট এর ক্ষেত্রে যে কোন সময়ে ভর্তি হওয়া যায়।

কানাডায় আপনি যে বিষয়গুলোতে পড়তে পারবেন- কম্পিউটার সায়েন্স, বায়োলজি, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ফুড সায়েন্স, কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড রিসোর্সেস, ইলেকট্রনিক্স, মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড সার্ভিসেস, মেরিন অ্যাফেয়ার্স, এগ্রিকালচার, ইকোনমিক্স, অ্যাপ্লায়েড কম্পিউটার সায়েন্স, ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট, অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাসট্রোনমি, অ্যাপ্লায়েড জিওগ্রাফি, আর্কিটেকচারাল সায়েন্স, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, এডুকেশন, হোম ইকোনমিক্স, মিউজিক, ফিলোসফি, হিস্ট্রি অ্যান্ড রিলিজিওন, ইংলিশ, ল, থিয়েটারসহ আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে প্রায় ১০ হাজার বিষয় এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে প্রায় তিন হাজার বিষয় পড়তে পারবেন।

কানাডার বিভিন্ন স্কলারশিপ কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের  সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে থাকে। শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ফলাফলের উপর ভিত্তি করে তাদের  স্কলারশিপ প্রদান করা হয়ে থাকে।  কানাডার অন্যতম কয়েকটি স্কলারশিপঃ গভর্নমেন্ট অব কানাডা ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, ভ্যানিয়ার কানাডা গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ প্রোগ্রাম, কুইবেক গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ অ্যান্ড গ্রান্টস, কানাডিয়ান কুইন এলিজাবেথ-২ ডায়ামন্ড জুবিলি স্কলারশিপ , অন্টারিও গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ, অন্টারিও ট্রিলিয়াম স্কলারশিপ, ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটার লু ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার্স অ্যান্ড ডক্টোরিয়াল অ্যাওয়ার্ডস, ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবা গ্র্যাজুয়েট ফেলোশিপস, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগ্যারি গ্র্যাজুয়েট অ্যাওয়ার্ডস, ইউবিসি গ্র্যাজুয়েট গ্লোবাল লিডারশিপ ফেলোশিপস, বান্টিং পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপস, কানাডা গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ মাস্টার্স প্রোগ্রাম, কার্লিটোন ইউনিভার্সিটি অ্যাওয়ার্ডস ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস, ডালহাউস ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ, ফেয়ারলেগ ড্যাকিন্সন স্কলারশিপ ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস, ম্যাকগেইল ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ।