বশেমুরবিপ্রবিতে একাডেমিক ভবনের স্থানে হচ্ছে আইটি পার্ক

বশেমুরবিপ্রবিতে একাডেমিক ভবনের স্থানে হচ্ছে আইটি পার্ক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার প্লান উপেক্ষা করেই আইটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ৪ একর জায়গায় পার্কটি নির্মাণ করা হবে।

তবে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী যেই স্থানে আইটি পার্ক নির্মাণের আলোচনা চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্লান অনুযায়ী সেখানে দ্বিতীয় একাডেমিক ভবন নির্মাণ হওয়ার কথা রয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় দ্বিতীয় একাডেমিক ভবন অন্যত্র স্থানান্তর করলে সমগ্র মাস্টার প্লানই পরিবর্তন করতে হবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইতোমধ্যে জায়গাটি সম্পূর্ণ কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন প্রকল্পের অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফেজের কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলমান। তবে, যদি এই জায়গায় আইটি পার্ক নির্মাণ হয় তবে দ্বিতীয় একাডেমিক ভবন বাদ দিয়েই নতুন প্রকল্প চূড়ান্ত করতে হবে।

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রদান করেছেন শিক্ষক শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারাও। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী উজ্জ্বল মন্ডল কৃষ্ণময় বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে হাইটেক পার্ক নির্মিত হলেও এটি কিন্তু শুধুমাত্র আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্মিত হবেনা এবং গোপালগঞ্জ জেলার স্থানীয় সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এই পার্ক। আর হাইটেক পর্কের জন্য প্রস্তাবিত জায়গাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত। যেহেতু এটি জেলার সর্বস্তরের মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে সুতরাং এটিকে কেন্দ্র করে কখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে যে স্থানীয়দের অনাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে না এর নিশ্চয়তা কে দেবে? এককথায় এই স্থানে এটি নির্মিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সংশয় দেখা দিবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্রতা নষ্ট হবে।’

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে হাইটেক পার্ক। তবে এর অর্থ এই নয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে এটি নির্মাণ করতে হবে।একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইটেক পার্ক নির্মিত হোক তবে নতুন জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে পার্কটি নির্মাণ করা হোক।

আরও পড়ুন: ডিজেল-কেরোসিন-অকটেন-পেট্রোলের দামে বড় লাফ

এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো: কামরুজ্জামান বলেন, ’আমরা বিষয়টি নিয়ে হাইটেক পার্ক বিভাগের পক্ষ থেকে আসা প্রতিনিধিদলের সাথে আলোচনা করেছিলাম। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইটেক পার্ক নির্মাণের বিরুদ্ধে নই, তবে আমরা চাই এটি সেকেন্ড একাডেমিক বিল্ডিংয়ের স্থানে নির্মিত না হয়ে অন্যত্র নির্মাণ হোক। প্রতিনিধিদল এর প্রেক্ষিতে শিক্ষকদের মতামতের জরিপের ভিত্তিতে এ বিষয়ে একটি লিখিত চিঠি দিতে বলেছেন।’

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো: আবু সালেহ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে নিবিড়ভাবে জ্ঞান উৎপাদন ও জ্ঞানচর্চা করা হয়৷ এধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দুতে যদি হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্রতা বিনষ্ট হবে। এছাড়া এখানে যেহেতু বিনোদন কেন্দ্র ও আইটি ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকবে তাই এটি আমাদের শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা, নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু একাডেমিক পরিবেশকে বাঁধাগ্রস্ত করতে পারে। একারণে আমরা চাই হাইটেক পার্কটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে নির্মাণ করা হলেও এমন স্থানে নির্মাণ করা হোক যেখানে নির্মিত হলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্লান বাঁধাগ্রস্ত হবেনা এবং দুটো প্রতিষ্ঠানেরই স্বতন্ত্রতা বজায় থাকবে।’

এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুব বলেন, ‘তোমাদের সমস্যা কি? একটা ভালো জিনিস হচ্ছে আর তোমরা শুধু নেগেটিভ কথা বলছো। এটা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আশীর্বাদ। এটি প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিয়েছেন। অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন দেয়া হচ্ছে না। আমাকে মন্ত্রণালয়ের থেকে ফোন দেয়া হয়েছিলো। ’