‘আমি একা ধরতে পারলে পুলিশ কেন পারবে না’: জবি ছাত্রী

ঢাকা
জবি ছাত্রী পারিসা

ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে মুঠোফোন হারানো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, ‘যেহেতু আমি একাই দুইজন ছিনতাইকারীকে ধরতে পেরেছি, তাহলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেই ছিনতাইকারীকে আটক করে তার থেকে ফোন উদ্ধার করে দেওয়ার সক্ষমতা পুলিশের রয়েছে।’ শনিবার (২৩ জুলাই) একটি বেসরকারি টেলিভিশনে এসব মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুরুতে ভয় পেয়েছিলাম। এজন্য মামলা করিনি। ভেবেছিলাম পরিবার কী ভাববে। তবে পরিবার আমার সাহস জুগিয়েছে। আমি একজন সাধারণ মানুষ হয়ে যদি দু’জন ছিনতাইকারীকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারি, তবে নিশ্চয়ই পুলিশের সক্ষমতা রয়েছে ৪৮ ঘণ্টার আগেই সেই ছিনতাইকারীকে আটক করে ফোন উদ্ধার করে দেওয়ার। তাদের পুরো সিন্ডিকেট নির্মূল করার, এটা তাদের দায়িত্ব। পথে পথে এভাবে সাধারণ মানুষদের হয়রানি করার কোনো অধিকার তাদের নেই। তাদের কঠোর শাস্তির জন্য পৃথক আইন করাও প্রয়োজন।’

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার থিসিসের কাজে মিরপুর চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলেন জবির ওই শিক্ষার্থী। কাজ শেষ করে বাসে করে সদরঘাটে ফিরছিলেন তিনি। যানজটে বাসটি কারওয়ান বাজার এসে আটকা পড়ায় জানালার পাশে বসে পরিবারের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। এসময়ে হুট করে একজন ছিনতাইকারী জবির ওই ছাত্রীর ফোনটি টান দিয়ে নিয়ে দৌড় দেন।

জানা গেছে, এ ঘটনায় ওই ছাত্রী বাস থেকে দ্রুত নেমেই ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করেন। কিন্তু ধরতে পারেননি। এসময়ে হারিয়ে কারওয়ান বাজারের ইত্তেফাক গলিতে এসে কান্না করছিলেন তিনি। এ সময় একই ঘটনা লক্ষ্য করেন তিনি। মুঠোফোনটির মালিকও পেছনে পেছনে ছুটছিলেন। এসময় জবির ওই ছাত্রী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এক ছিনতাইকারীকে ধরতে সক্ষম হন। বেধড়ক মারধরের পর ঘটনাস্থলে অনেকেই জমা হন।

ভাইরাল জবির ওই শিক্ষার্থীর নাম পারিসা আক্তার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের বন্যপ্রাণী বিষয়ে থিসিস করছেন।

পারিসা বলেন, ‘আমাদের পছন্দের জিনিস কেউ ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে, এমন হতে পারে না। আমাদের সাহসিকতা দেখাতে হবে। আমার ফোনটি যখন নিয়ে যায়, তখন রাস্তায় থাকা অন্য যাত্রী, বিশেষ করে মোটরসাইকেলে থাকা যে কেউ ছিনতাইকারীকে আটক করতে পারত। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। সবাই যদি হাত গুটিয়ে বসে থাকে, তবে তাদের সাহস বাড়বে। আর যদি আমরা সহযোগিতা করি, তবে তারা ভয়ে এই কাছ থেকে সরে যাবে।’

পারিসা আরও বলেন, ‘মুঠোফোনটি হারিয়ে যাওয়ায় গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা এখন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কোর্স সভাপতির সঙ্গেও কথা বলে ভালো সমাধান মেলেনি। নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিবেদন জমা দিতে না পারলে হয়তো ইয়ার ড্রপও নিতে হতে পারে।’

এ ব্যাপারে প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান জানান, ‘বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। তিনি চেয়ারম্যান দপ্তরে যোগাযোগ করলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

পারিসার সঙ্গে থাকা সহপাঠী জানান, ‘অনেক মানুষ এই ভিডিও করছিল। কিন্তু কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসছিল না। ভিডিও করা শেষে সবাই যে যার মতো চলেও যেতে শুরু করেছিল। আমরা পুলিশে ফোন দিই। এক গণমাধ্যমকর্মী আমাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজধানীতে প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এগুলো রুখতে আমাদের সচেতনতা, মানুষের এগিয়ে আসা এবং আইনশৃঙ্খলার কঠোর নজরদারি ও ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’