প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পর এমপিওভুক্ত হলো টুমচর মহিলা মাদ্রাসা

প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পর এমপিওভুক্ত হলো টুমচর মহিলা মাদ্রাসা
প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পর এমপিওভুক্ত হলো টুমচর মহিলা মাদ্রাসা

২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৯ বছর বেসরকারি নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার পর অবশেষে এমপিওভুক্ত হলো লক্ষ্মীপুর জেলার টুমচর মহিলা দাখিল মাদ্রাসা। এ প্রতিষ্ঠানটি ছাড়াও এ ধাপে জেলার আরও ৭টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ৮টি মাদ্রাসার মধ্যে এমপিওভুক্ত হওয়া একমাত্র প্রতিষ্ঠান টুমচর মহিলা দাখিল মাদ্রাসা। ২০০৪ সালের ১৩ আগস্ট  প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ দিন পরে এমপিওভুক্ত হলেও খুশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীও।

লক্ষ্মীপুরে এমপিওভুক্ত হওয়া মাদ্রাসাগুলো হলো- পাটওয়ারি হাট মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, টুমচর মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, সোনাপুর দারুল ফালাহ দাখিল মাদ্রাসা, ফাতেমা (রা:)  মহিলা দাখিল মাদ্রাসা, নূর-ই-শরহিন্দ বোলাকাত ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, মুহাম্মদিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, চর চিতা দারুসসুন্না রহমানিয়া দাখিল মাদ্রাসা, দারুল ইসলাম দাখিল মাদ্রাসা।

টুমচর মহিলা দাখিল মাদ্রাসা লক্ষ্মীপুর জেলার সদর থানার ২১নং টুমচর গ্রামের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। এটি গ্রামের মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রদীপ জ্বালাতে প্রতিষ্ঠা করার কথা চিন্তা করেন সমাজ সচেতন ব্যক্তিত্ব মাও: আব্দুল কুদ্দুস। তিনি মাদ্রাসার জন্য প্রয়োজনীয় বিশাল জমি দান করেন।

পিতার স্বপ্নকে নিজের স্বপ্ন মনে করে এবং এ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেন তার বড় ছেলে মাও: মাহবুবুন নাবী। তার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হওয়ার পর তিনি বাংলাদেশ সরকার, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে অভিনন্দন জানান।

আরও পড়ুন: অটোমেশন হচ্ছে শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত কার্যক্রম: শিক্ষামন্ত্রী

দীর্ঘ দিনের স্মৃতিচারণ করে মাহবুবুন নাবী বলেন, যখন মাদ্রাসা দেওয়া নিয়ে চিন্তা করি তখন বিষয়টি আম্মাকে জানাই। তখন তিনি অনেক খুশি হন এবং অল্প কিছু টাকা দিয়ে মাদ্রাসার কাজ শুরু করতে বলেন।

মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের জন্য এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় হলেও বর্তমানে মাদ্রাসাটির প্রায় ১৫ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে। মানুষের টাকা, দান অনুদান এবং দোয়ার কারণে এই প্রতিষ্ঠান এতো দিন টিকে রয়েছে। মাদ্রাসার জমি ওয়াকফ করে দিয়েছি।

মাদ্রাসা এমপিওভুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সকলের প্রত্যাশা ছিল আরো দশ থেকে পনের বছর আগে এমপিওভুক্তি পাবো। কিন্তু সরকার রদবদলের কারণে আমাদের অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে। অত্র প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৯০০ জন মেয়ে শিক্ষার্থী এবং ১২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে দুটি টিনশেড ঘর, একটি আধা পাকা ঘর, একটি দোতলা বিল্ডিং ও একটি মসজিদসহ সুবিশাল খেলার মাঠ।

এর আগে গত বুধবার (৬ জুলাই)  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ২ হাজার ৭১৬টি বেসরকারি নন-এমপিও প্রতিষ্ঠান নতুন করে এমপিওভুক্ত হয়। 

এমপিওভুক্তি নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত সুপার মাও: আব্দুল হালিম বলেন, আলহামদুলিল্লাহ। দীর্ষ ঊনিশটি বছর পর আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করেছেন। এতো দীর্ঘ দিন টিকে থাকা ছিল আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।

তিনি বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে এই দ্বীনি প্রতিষ্ঠান এ জাতির জন্য আলোর বর্তিকা নিয়ে আসবে। সমাজে, পরিবারে ভালো মানুষ গঠনে অত্র প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভুমিকা পালিন করবে।

প্রতিষ্ঠানের দাখিল (দশম) শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার ইতি বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে এতে আমরা খুব খুশি। পারবিন আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হয়েছে যার মাধ্যমে আমাদের পড়াশুনার মান আরো উন্নত হবে। 

এক অভিভাবক বলেন, আমাদের বহু দিনের প্রাণের দাবি ছিলো টুমচর মহিলা দাখিল মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হোক। দীর্ঘদিন পর হলেও এমপিও হয়েছে এতে আমাদের আনন্দ লাগছে। আমরা আশাবাদী, সরকার সুদৃষ্টি দিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের সকল প্রয়োজন পূর্ণ  করবেন।