৬০-এ আট, ৪০-এ শূন্য

বেলায়েত
ঢাবি লোগো ও বেলায়েত শেখ

ছোটবেলা থেকে লালন করা স্বপ্ন পূরণে ৫৫ বছর বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন বেলায়েত শেখ। তবে সেই স্বপ্ন অধরাই থেকেছে তার। সুযোগ পাননি ঢাবিতে। এমনকি ভর্তি পরীক্ষায় পাস নম্বরও তুলতে পারেননি তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ফল প্রকাশিত হয়। এই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন বেলায়েত।

বেলায়েত শেখের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তিনি ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএসহ ২৬ দশমিক ০২ পেয়েছেন। এমসিকিউ অংশে ৬০ নম্বরের মধ্যে পেয়েছেন ৮। এর মধ্যে বাংলায় ২, ইংরেজিতে ২.৭৫ এবং সাধারণ জ্ঞান অংশে পেয়েছেন ৩.২৫। আর লিখিত অংশে ৪০ নম্বরের মধ্যে শূন্য তিনি।

এদিকে ঢাবিতে স্বপ্ন পূরণ না হলেও থেমে যেতে রাজি নন বেলায়েত। আগামী ২৬ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ‘এ’ ইউনিট, ২২ আগস্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ‘ডি’ ইউনিট, ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ‘সি’ ইউনিটে অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষায় অংশ নেবেন তিনি।

আরও পড়ুন: কৃষি গুচ্ছের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ১৫ জুলাই

এ বিষয়ে বেলায়েত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আমি চেষ্টা করেছি, এখানে হয়নি। আমি কখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাইনি, নতুন পরিবেশে গিয়ে একটু ভয়ও পেয়েছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেবো। আমার ইচ্ছা, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি লেখাপড়া করবো। অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল, রিকশা চালিয়ে বা হোটেলে কাজ করে আমি পড়ালেখার খরচ জোগাড় করবো।

বেলায়েতের স্ত্রী সখিনা আক্তার বলেন, আমার স্বামী ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনেক টেনশনে ছিলেন। রাতে আমরা শুয়ে পড়লে আমাদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় তার জন্য তিনি বাড়ির সামনে তার অফিস কক্ষে বসে গভীর রাত পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। 

গাজীপুরের মাওনার বাসিন্দা বেলায়েত শেখ ১৯৮৩ সালে প্রথমবার মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিলেও টাকার অভাবে সে বছর নিবন্ধন করতে পারেননি। ১৯৮৮ সালে তিনি আবারও এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু সে বছর সারা দেশে বন্যার কারণে পরীক্ষা দিতে পারেননি।

এর কয়েক মাস পরে তিনি ফটোগ্রাফার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। বর্তমানে তিনি ‘দৈনিক করতোয়া’ পত্রিকার গাজীপুরের শ্রীপুর প্রতিনিধি।

কর্মজীবন শুরুর পরে বেলায়েত আর পড়ালেখা করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ছোট ভাইকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্নও থেকে যায় অধরা। বেলায়েত ২ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক। তার মেয়ে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেও কলেজে যেতে আগ্রহী ছিল না। তার বড় ছেলেও পড়ালেখায় আগ্রহী না। তাই নিজে নেমে পড়লেন ভর্তি যুদ্ধে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে ব্যর্থ হলেও এবার তার টার্গেট রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।