মাদ্রাসাছাত্র থেকে যুক্তরাজ্যের ব্যারিস্টারি ডিগ্রি অর্জন

মাদ্রাসা
খোরশেদ আলম

পড়ালেখার হাতেখড়ি মাদ্রাসায়। মাদ্রাসা থেকেই পাশ করেছেন দাখিল, আলিম। এরপর স্কুল, কলেজ পেরিয়ে সবশেষ যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত লিংকনস ইন থেকে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস বারের স্বীকৃতিসহ অর্জন করেছেন ব্যারিস্টারি ডিগ্রি। গত ২৬ মে তাকে এই সম্মাননা তুলে দেন অনারেবল লিংকনস ইন এর ট্রেজারার জনাথন ক্রো কিউসি।

রাজধানী ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ের চৌহাট ইউনিয়নের দ্বিমুখা গ্রামের বাসিন্দা এই শিক্ষার্থীর নাম খোরশেদ আলম। তার অর্জনে খুশি পরিবার, মাদ্রাসার শিক্ষক ও এলাকাবাসী।

মাদ্রাসা শিক্ষা থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি লাভের গল্প জানিয়েছেন খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘আমি গ্রামে বড় হয়েছি। এখান থেকে কাছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল মাদ্রাসা। প্রথমে বালিয়াটি দাখিল মাদ্রাসা থেকে ২০১১ সালে দাখিল ও পরে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসা থেকে ২০১৩ সালে আলিম পাশ করি।

২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের অধীনে বিপিপি ইউনিভার্সিটি থেকে এএলবি অনার্স শেষ করি। সব শেষ ২০১৯-২০ সেশনে বার প্রফেশনাল ট্রেইনিং কোর্স করি। যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত অনারেবল লিংকনস ইন থেকে গত ২৬ মে ইংল্যান্ড ও ওয়েলস বারের ব্যারিস্টার হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি লাভ করি।’

খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমার পড়াশোনার শুরুটা গ্রাম থেকে। মাদ্রাসা থেকে ল পড়বো, তাও আবার ব্যারিস্টার হবো, এটা ছিল কল্পনার বাইরে। ব্রিটিশদের ল পড়াটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। তবে ইচ্ছাশক্তি ও সবার সহযোগিতার কারণে এত দূর আসতে পেরেছি।’

আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমার মূলত ইচ্ছা ছিল রাজনীতিক হওয়ার। মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার। আমার দাদা হাজী মো. হায়েত আলী ইউপি সদস্য ছিলেন। বাবা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। আমারও তেমন ইচ্ছা ছিল। পরে দেখলাম, এই যাত্রা অনেক লম্বা হবে। গ্রামের মানুষেরা আইনি সেবা পায় না। অনেকে নিপীড়নের শিকার হয়। তাই ভাবলাম আইনকেই নিজের ভবিষ্যৎ বানিয়ে নেওয়ার। সেই অনুযায়ী প্রস্ততি নিয়ে অবশেষে এই অর্জন এলো।’

খোরশেদের অর্জনে আনন্দিত তার পরিবার ও শিক্ষকরা। তার বাবা মো: শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলাম, তখন থেকে তার স্বপ্ন ছিল বড় হওয়ার। ও করে দেখালো। আমার স্বপ্নও পূরণ হয়েছে। গ্রামের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তার ছবি দেওয়ার পর বহুজন আমাকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সন্তান ভালো কিছু করা মানে আমাদের শান্তি আসা। আমি অনেক খুশি।’

বালিয়াটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো: লিয়াকত আলী বলেন, ‘মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এখন সাধারণ শিক্ষার মতো উঠে আসছে। শিক্ষার্থীরা ভালো ভালো জায়গায় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। সমান্তরালে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখছে। খোরশেদ আমাদের ছাত্র ছিল। বিদেশে পড়তে গিয়েছিল। সফলভাবে সেই শিক্ষা শেষ করেছে। এটা ভীষণ গর্বের ও আনন্দের।

এই আনন্দ আসলে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এটা আমাদের শিক্ষার্থী ও সারা দেশের মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার। তার আরও সফলতা কামনা করছি। খোরশেদ যেন এভাবে আরও উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারে।’