ফেসবুকে প্রেম থেকে শারীরিক সম্পর্ক, অতঃপর প্রেমিকা খুন 

লাশ
প্রেমিকার খুন 

ফেসবুকে পরিচয় থেকে প্রেম। এরপর গড়ায় শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে বিয়ের চাপ। শুরু হয় সম্পর্কে কোন্দল। এক পর্যায়ে বিদ্বেষ হিংসা চরমে পৌঁছালে পরিণতি হয় ভয়াবহ। জান্নাতুল ফেরদাউসকে (৩২) গলাকেটে হত্যা করে শাহাদাত হোসেন জীবন (২৪) । হত্যার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে হাত পায়ের রগও কেটে দেওয়া হয়।

রোববার (১৯ জুন) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল ইসলাম। 

পুলিশ সুপার জানান, জান্নাতুল ফেরদাউসের ২০০৮ সালে প্রথম বিয়ে হয়। সেখানে ৩ বছর সংসার করার পর স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ওই সংসারে তার একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে তার ২য় বিয়ে হয়। বিয়ের ৬ মাস পর সেখানেও ২য় স্বামীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়। 

তিনি জানান, এ বছরের ২৯ মে জীবনের সঙ্গে জান্নাতুল ফেরদাউসের ফেসবুকে পরিচয় হয়। এরপর থেকে দুজনের মাঝে মাঝে কথা হয় এবং তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের মধ্যে একবার দৈহিক সম্পর্কও হয়েছে। প্রেমিক জীবনও বিবাহিত ছিলেন। কিন্তু এ বিষয়ে জান্নাতুল ফেরদাউস কিছুই জানতেন না। পরবর্তীতে জীবন বিবাহিত জেনে তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয় জান্নাতুল ফেরদাউস। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয় । 

তিনি আরও বলেন, গত ১৫ জুন (মঙ্গলবার) পরস্পর যোগাযোগ করে সোনাইমুড়ীর দেউটি ইউনিয়নের পিতাম্বরপুর গ্রামের মিনহাজি বাড়ির সংলগ্ন নির্জন স্থানে যায়। সেখানেও উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জীবন তার কাছে থাকা ছোরা বের করে জান্নাতুল ফেরদাউসের গলায় পোচ দেয়। এতে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য জীবন জান্নাতুল ফেরদাউসকে ছোরা দিয়ে জবাই করে হাত ও পায়ের রগ গোলাকৃতিভাবে কেটে দেয়। 

রোববার (১৯ জুন) সকালে সোনাইমুড়ী থানার পুলিশ উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের পিতাম্বরপুর গ্রামের একটি সবজি ক্ষেত থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চুরি, মোবাইল ও ওড়না উদ্ধার করে। এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পিতাম্বরপুর গ্রামের মিনহাজি বাড়ি থেকে পরকীয়া প্রেমিক জীবনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সে পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক।    

গ্রেপ্তারকৃত শাহাদাত হোসেন জীবন (২৪) উপজেলার পিতাম্বরপুর গ্রামের মিনহাজি বাড়ির নির্মাণ শ্রমিক শামছুল আলম দিলসাদের ছেলে।  

সোনাইমুড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হারুন অর রশীদ বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সোনাইমুড়ী থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম দেওটি ইউনিয়নের বাসিন্দা নুর নবী, স্বপন ও সেনবাগ উপজেলার মনির ও আবু সুফিয়ানকে আটক করে। 

তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর উপজেলার দেওটি ইউনিয়নের পিতম্বপুর গ্রামের দিলসাদের ছেলে ও নিহত নারীর পরকীয়া প্রেমিক জীবনকে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে আটক করা হয়। পরে তার জবানবন্দির ভিত্তিতে আসামিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মালামাল উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দপ্তর) মো. মোর্তাহীন বিল্লাহ, সহকারী পুলিশ সুপার (চাটখিল সার্কেল) এএনএম সাইফুল ইসলাম খাঁন, সোনাইমুড়ী থানার পুলিশ সদস্যারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুন (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ভিকটিম জান্নাতুল ফেরদাউস তার বড় বোনের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর রাত ৮টার পর থেকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে পরিবারের লোকজন বিভিন্নস্থানে খোঁজ করেও তাকে পায়নি। পরে বুধবার সকাল ৮টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে একটি সবজি ক্ষেত থেকে তার গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে সোনাইমুড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।