কক্সবাজারে ইউজিসির সঙ্গে ৪৬ বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি সই

দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার ও শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য কারিকুলাম যুগোপযোগী করতে আউটকাম বেইজড এডুকেশন কারিকুলাম টেমপ্লেট প্রণয়ন, শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নয়নের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণের নির্দেশিকা অনুমোদন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যোগ্যতা নির্ধারণ পলিসি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশি-বিদেশি অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগের জন্য চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা প্রনয়ন, গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাজট বরাদ্দ বৃদ্ধি করাসহ অনেকগুলো কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। 

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বুধবার (১৫ জুন) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের হোটেল সী পার্ল এর সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর ও ইনোভেশন ল্যাব কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। 
 
উল্লেখ্য, একটি প্রতিষ্ঠানে/সংস্থায় সেবা প্রদানে গতিশীলতা আনয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সরকার ২০১৪-১৫ সাল থেকে দেশে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) প্রবর্তন করে। 

ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, এম.পি.। ইউজিসি সদস্য ও এপিএ টিমের আহবায়ক অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এবং সকালের সেশনে এপিএ বাস্তবায়ন ও চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন । অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর এবং অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ। সকালের সেশনে এপিএ বাস্তবায়ন অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কমিশনের সচিব ড. ফেরদৌস জামান।

ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রেজিস্ট্রারবৃন্দ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র বিভিন্ন বিভাগের পরিচালকসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইউজিসি সিনিয়র সহকারী পরিচালক ও এপিএ’র ফোকাল পয়েন্ট মো. গোলাম দস্তগীর।

শিক্ষামন্ত্রী তার বক্তব্যে আরও বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্রমধারা আরও ত্বরান্বিত করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে স্থান করে দিতে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা উপযোগী মানবসম্পদ গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালগুলোকে শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এছাড়াও তিনি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার মান উন্নয়নে একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের আহবান জানান। 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়নের মাধ্যমে ও একটি সুখী সমৃদ্ধিশালী দেশে গঠনে বর্তমান সরকার বিভিন্ন রূপরেখা প্রণয়ন করেছে যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে -২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে স্থান করে দেওয়া, ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও ডেল্টা প্ল্যান। এসব পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন অনেকাংশেই নির্ভর করছে বাংলাদেশের বিশবিদ্যালয়গুলোর কর্মদক্ষতার ওপর। গুণগত শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবন ও দক্ষ জনবল তৈরি করা না গেলে এসব পরিকল্পনার যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও গতিশীলতা আনয়নে বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপগ্রহণ ও বাস্তবায়নের কাজ অব্যাহত আছে। এপিএ প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন এই সংস্কার কার্যক্রমেরই অংশ। তিনি এপিএ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সদস্যকে আরো উদ্যোগী হওয়ার আহবান জানান।

সভাপ্রধানের বক্তব্যে অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, দেশের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নই ইউজিসির মূল লক্ষ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকাণ্ডে আরো অধিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে উচ্চশিক্ষার কাঙ্ক্ষিত মনোন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় সংশ্লিষ্টদের বিদ্যমান আইন, বিধি ও শৃঙ্ক্ষলা যথাযথভাবে অনুসরণ করার আহবান জানান। 

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের স্বাগত বক্তব্যে বলেন, এপিএ একটি সংস্থা আগামী এক বছরে কি কি কার্যক্রম গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি কার্যকর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সহায়তা করে। তাই প্রতিটি সংস্থার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিটির ওপর সমধিক গুরুত্ব দিয়ে যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে সংস্থার নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন যেমন সহজ হবে, তেমনি সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ সরকার ঘোষিত রূপকল্পগুলোর বাস্তবায়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। 

অনুষ্ঠানে ৫১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও এপিএ’র ফোকাল পয়েন্ট উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, ২০১৬-২০১৭ অর্থবছর থেকে ইউজিসি প্রতিবছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে এ চুক্তিটি স্বাক্ষর করে আসছে। ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি বলে ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।