ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারে উত্তপ্ত চুয়েট ক্যাম্পাস

দেশীয় অস্ত্র হাতে মহড়া

ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ক্যাম্পাস। গতকাল শনিবার (১১ জুন) রাত থেকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দিচ্ছে ছাত্রলীগের উভয় পক্ষ। এরা শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিনের অনুসারী বলে জানা গেছে।

ক্যাম্পাসের এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আগামীকাল সোমবার (১৩ জুন) ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জানা গেছে, শনিবার রাতে চট্টগ্রাম শহরে নওফেলের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে চুয়েট শাখা ছাত্রলীগের তার অনুসারীরা। অনুষ্ঠান শেষ হতে দেরি হওয়ায় এসময় তারা চুয়েটের রাত ৯টার বাসের মধ্যে একটি বাস ৩০ মিনিট দেড়িতে ছাড়তে বলেন। তখন বাসে থাকা আ জ ম নাসির উদ্দিনের সমর্থকরা এতে বাধা দেন। এতেই শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা।

এরই জেরে ক্যাম্পাসে অবস্থান করা নাসিরের সমর্থকরা প্রতিপক্ষকে হলে প্রবেশে বাধা দিতে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে জড়ো হন। কিন্তু নওফেলের সমর্থকরা অনেকেই ক্যাম্পাসের পেছনের গেট দিয়ে হলে প্রবেশ করেন। এর ফলে নাসিরের সমর্থকরা তাদের সন্ধানে ড. কুদরতি খুদা হলের সামনে জড়ো হন।

এসময় তারা নওফেলের সমর্থকদের হলে না পেয়ে ওই হলে কিছু রুমের তালা ভেঙে প্রবেশ করে তাদের বিছানাপত্র বাইরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে অপর পক্ষও তাদের প্রতিপক্ষের বিছানাপত্র বাইরে ছুড়ে ফেলে দেয়। যা ভোর ৪টা পর্যন্ত চলতে থাকে। এসময় দুই পক্ষের হাতেই বিপুল সংখ্যক দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়।

রাতের এই ঘটনার সূত্র ধরে আজ রবিবার (১২ জুন) দুপুরে শেখ রাসেল হলে নওফেলের সমর্থক পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সাজিদ নামে এক শিক্ষার্থীকে হলে পেয়ে মারধর করেন নাসির সমর্থকরা। পরে নাসির সমর্থকদের প্রতিহত করতে ড. কুদরতি খুদা হল থেকে নওফেল সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শেখ রাসেল হলে প্রবেশের চেষ্টা করেন। কিন্তু নিরাপত্তাকর্মীরা হলের গেট বন্ধ করে দেওয়ায় প্রবেশ করতে ব্যর্থ হন তারা। পরবর্তীতে শেখ রাসেল হল থেকে নাসির সমর্থকরা তাদের ধাওয়া করে কুদরতি খুদা হলের সামনে গিয়ে অবস্থান নেন।

নাসির সমর্থকদের সঙ্গে বিপুল সংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থীও অংশগ্রহণ করে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, তারা নিজেদের হলকে কোনো পক্ষেরই ঘাঁটি হতে দেবে না।

এসমং দুই পক্ষের এই সংঘর্ষের ঘটনায় নওফেল সমর্থকদের ছোড়া ইটের আঘাতে যন্ত্রকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের তৌহিদুর রহমান তামিম নামে এক সাধারণ শিক্ষার্থীর মাথা ফেটে গেছে। এদিকে ল্যাব থেকে ফেরার পথে তড়িৎ কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের রাফসান নামে এক সাধারণ শিক্ষার্থীর হাতে রামদা দিয়ে কোপ দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এরপর তাকে চুয়েট মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

শাখা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক ইফফাত হক নিশান জানান, যেহেতু ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাই শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এই অস্থিতিশীলতা দ্রুত সমাধান করা যেতে পারে৷

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, আমরা ক্যাম্পাসেই অবস্থান করছি৷ যেকোন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হলে চুয়েট উপাচার্যের পরামর্শ এবং আমাদের উদ্ধ তম প্রশাসনের আদেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব৷ 

চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম  বলেন, আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিকে আনার চেষ্টা করছি৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে৷ 

উল্লেখ্য, নাসিরের সমর্থকরা শহীদ তারেক হুদা হল এবং নওফেলের সমর্থকরা ড. কুদরতি খুদা হলে শক্ত অবস্থানে আছেন। এখন চুয়েটের নতুন শেখ রাসেল হলকে নিজেদের প্রভাব বলয়ে নেওয়ার জন্য দুই পক্ষের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ ঘটে চলেছে।