স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বসার যোগ্যতা হয়নি, লেখাটা তাদের জন্য

লেখক

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধ। এ যেন একইসাথে স্বপ্নপূরণ অথবা স্বপ্নভাঙ্গা কিংবা পুরাতন স্বপ্ন ভেঙ্গে নতুন স্বপ্ন গড়া।  আমি মূলত বিশেষভাবে বলার চেষ্টা করছি- পুরাতন স্বপ্ন ভাঙ্গার পর নতুন স্বপ্ন কিংবা লক্ষ্য পূরণে  কি কি করতে হয় এবং কিভাবে। 

লেখাটা মূলত বিজ্ঞান বিভাগের ঐ সকল শিক্ষার্থীদের জন্য যারা ইঞ্জিনিয়ারিং প্রস্তুতি নিয়েছিল নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে, কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ কিংবা যোগ্যতার হয়নি সেই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

অথচ মেডিকেল ভর্তি প্রস্তুতি নিলে তারা হয়তো বা কোনো না কোনো মেডিকেলে চান্স পেলে পেতেও পারতো। কিন্তু এখন একটুর জন্য মেডিকেলেও চান্স হয়নি। অন্যদিকে, বুয়েটেও ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার নূন্যতম  যোগ্যতা না থাকায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। 

এবার নিজের কথা বলি, আজ থেকে বছরখানেক আগে আমিও এই পরিস্থিতিটা পার করেছি। প্রথমে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রস্তুতি নিই। তারপর এপ্রিল মাসের শুরুতে আসে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা।যথারীতি পরীক্ষা দেই,এবং স্কোর আসে ৬৪। সেবছর  ৬৭.২৫ নম্বর পর্যন্ত সর্বশেষ চান্স হয়েছিলো (কাটমার্ক যাকে বলে)। ভাগ্যে নেই তাই হয়নি, এভাবে সহজেই মেনে নিয়েছিলাম ফলাফল। ফলাফলের  পরদিন থেকে যথারীতি ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি প্রস্তুতিতে মনস্থির করি। 

বলে রাখা ভালো, আমার তখন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয়েও (সংক্ষেপে এমআইএসটি) চান্স হয়েছিলো। আমাদের সেবছর এমআইএসটি ভর্তি পরীক্ষা সবার আগে হয়েছিলো। ভর্তি হইনি কারণ নিজের ওপর একটা বিশ্বাস ছিলো, সৃষ্টিকর্তা চাইলে অবশ্যই পছন্দের যায়গায় যেতে পারবো। এটাও পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়েই করেছিলাম। এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, বুয়েটের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি, আর আমার স্বপ্নভঙ্গ।

জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল,উদ্দেশ্যহীন করে দিয়েছিলো এই একটা ঘটনাই। পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ারিং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেই বিজ্ঞপ্তিও রীতিমতো হতাশার। অর্থাৎ আমার একুল ও গেল ওকুল ও গেল। এদিকে  এমআইএসটির  ভর্তির সর্বশেষ তারিখ ও পার হয়ে গিয়েছে। মেডিকেলও গেল,সেইসাথে  বুয়েটসহ সকল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় শুধু স্বপ্ন থেকে গেল। অথচ বুয়েটের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি কিছুদিন  আগে দিলে হয়তো কিছুদিন সময় পেতাম নিজের সবটুকু দিয়ে মেডিকেল ভর্তি প্রস্তুতি নিতে।

প্রস্তুতি নিলে হয়তো মেডিকেলে ভালো ফলাফল করলেও করতে পারতাম, না পারলেও এমআইএসটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যেতাম অন্তত।কিন্তু পরিবারের কথা শুনিনি, মেডিকেল প্রস্তুতিও নিইনি আর এমআইএসটি বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি হইনি। তারপরও আমি ভাগ্যবান কারণ আমার পরিবার পুরোটা সময় আমার পাশে ছিলো, কারণ তারা দেখেছিল আমি চেষ্টা করেছি কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি বলে পারিনি।

যাইহোক, পরবর্তীতে ঠিক করি পড়াশোনা আর করবোনা, ডিফেন্সে চলে যাব। এরপর এয়ার ফোর্স প্রিলি, মেডিকেল দিয়ে এসে একটু ঘাটাঘাটি করি এই ফিল্ড নিয়ে। আর আইএসএসবি প্রিপারেশন নিতে শুরু করি। এভাবে ১৫-২০ দিন কাটাই (কোনো একাডেমিক পড়াশোনা ছাড়াই)। কিন্তু আইএসএসবি প্রিপারেশন নেয়া শুরু করার পরই আমার মনে হতে লাগে "দিজ ইজ নট ফর মি, আমি এই বিভাগে ভালো থাকবোনা"।তারপর আবার নতুন করে লক্ষ্য ঠিক করি, আর তা হচ্ছে আমি দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো এবং আমাকে পারতেই হবে। আর শুধু পড়বোনা, আমি টপ ডিপার্টমেন্টের একটাতে পড়বো। এরপর থেকে আমি আবার নতুন উদ্যমে আগানো শুরু করি। হাতে একটাই সুযোগ, ঐটাতে সফল হতেই হবে। এই ভাবনা নিয়েই আবার শুরু করি।। আলহামদুলিল্লাহ এরপর থেকে যত  জায়গায়  পরীক্ষা দিয়েছি সব জায়গায়ই  মেরিট পজিশনে সামনের দিকেই ছিলাম। তারপর সবশেষে আসে সেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল। আল্লাহর অশেষ কৃপায় আমি আমার নতুন স্বপ্নে পৌঁছে যাই। আর ভর্তির পর দেখতে পাই যে আমার ডিপার্টমেন্টের ৩৫-৪০% শিক্ষার্থী বুয়েট মেডিকেল ছেড়ে এসেছে। এখন ভাবি ক্যারিয়ারের কোনো এক পর্যায়ে গিয়ে হয়তো মনে হবে, "দিজ ওয়াজ দ্যা বেস্ট প্লেইস ফর মি এন্ড আল্লাহ হ্যাজ অলওয়েজ দ্যা বেস্ট প্ল্যানিং"। 

কিছুদিন পরই ঢাবি ভর্তি পরীক্ষা। আশা করি,যারা আমার ফেইস করা পরিস্থিতির একটারও মাঝে দিয়ে এখন যাচ্ছো, তাদের প্রত্যাবর্তনটাও আমার মতো হবে। এত প্রতিকূলতার মাঝেও যখন আমি গিভ-আপ করিনি, তোমরাও তাই করবে। শুভ কামনা ও অনেক অনেক দোয়া রইলো। আল্লাহ তোমাদের সহায় হোক।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়