সমালোচনার মুখে ‘এনায়েতুল্লাহ খান ট্রাস্ট ফান্ড’ বাতিল করেছে ঢাবি

সমালোচনার মুখে ‘এনায়েতুল্লাহ খান ট্রাস্ট ফান্ড’ বাতিল করেছে ঢাবি
সমালোচনার মুখে ‘এনায়েতুল্লাহ খান ট্রাস্ট ফান্ড’ বাতিল করেছে ঢাবি

সমালোচনার মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) সাপ্তাহিক ‘হলিডে’র প্রয়াত সম্পাদক এজেডএম এনায়েতুল্লাহ খানের নামে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্ট ফান্ডটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত  নিয়েছে।

ঢাবি উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, এ ট্রাস্ট ফান্ডের আর কোন কার্যকারিতা এবং গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। কারণ তথ্য বিকৃত করেছেন এবং বিভিন্নভাবে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করেছেন এমন ব্যক্তির নামে ট্রাস্ট ফান্ড পরিচালনা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ ও মূল্যবোধের সাথে যায় না।’

এনায়েতুল্লাহ খানের ভাই বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য (এমপি) রাশেদ খান মেনন মূলত ট্রাস্ট ফান্ড নিয়ে আসেন উল্লেখ করে ভিসি বলেন, ‘এনায়েতুল্লাহর আগের কিছু কর্মকা- সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর আমরা ট্রাস্ট ফান্ড বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্যের অভাব থাকায় প্রাথমিক কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছিল। ভাইস চ্যান্সেলর সেই ব্যক্তি সম্পর্কে যারা তথ্য উন্মোচন করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানান।

এর আগে এজেডএম এনায়েতুল্লাাহ খানের কন্যা নাসরীন জামান ১০ মে উপাচার্যের লাউঞ্জে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদের কাছে ‘এনায়েতুল্লাহ খান স্মৃতি ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠনের জন্য ২৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন। ঢাবি ভিসি ড. আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথি ছিলেন।

আরও পড়ুন: ঢাবির নীল দলের মনোনয়ন পেলেন যৌন হয়রানিতে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক

এসময় রাশেদ খান মেনন, রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. জিয়া রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবুল মনসুর আহমেদ এবং দাতা পরিবারের সদস্য আবু সালেহ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও সিনিয়র শিক্ষক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্ট ফান্ড বাতিলের দাবি জানান।

ঢাবি প্রো-ভিসি (প্রশাসন) ডক্টর মোহাম্মদ সামাদ বলেন, এনায়েতুল্লাহ খান সম্পাদিত ইংরেজি সাপ্তাহিক  ‘হলিডে’তে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যাকা-ের পর নিয়াজ জামানের লেখা “দি মেজরস কিলড দি সার্পেন্ট এন্ড মোস্ট অব ইটস এগস একসেপ্ট দি ডটারস হু ওয়্যার এব্রোড” শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল।

তিনি আরো বলেন, আমি বিস্মিত ও মর্মাহত যে, ওই সাংবাদিকের নামে স্বাধীনতার জন্মস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে।

সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের প্রাক্তন ডিন ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর আগে ও পরে এনায়েতুল্লাহ খান তাঁকে নিয়ে বেশ কিছু বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছিলেন এবং এনায়েতুল্লাহর সাপ্তাহিক হলিডে’তে একটি নিবন্ধে বঙ্গবন্ধুকে সাপ বলে সম্বোধন করা হয়েছিল।

বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সাদেকা হালিম প্রশ্ন করেন শীর্ষ কর্মকর্তারা শত বছরের পুরনো এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই ব্যক্তির নামে ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত কীভাবে নিতে পারেন।

ব্যক্তি ও তার অতীত ইতিহাস সম্পর্কে যথাযথ যাচাই না করে একটি ট্রাস্ট তহবিল গঠন করা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে এমনকি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের কয়েকজন অনুষদ সদস্যকে ট্রাস্ট ফান্ড সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি।’