পাবজি আর পর্নো আসক্ত নিয়ে ঘর ছাড়ার ৫ মাস পর স্কুলছাত্র উদ্ধার

৫ মাস আগে চট্টগ্রামে হারিয়ে যাওয়া এক স্কুলছাত্রকে উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে র‍্যাব। তার বরাত দিয়ে র‍্যাব বলছে, পাবজি গেম ও প্রাপ্তবয়স্কদের সাইটে আসক্ত হলে বাবা-মায়ের বকুনি খেয়ে বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে ছিল।

গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় চান্দগাঁও থানাধীন একটি রেস্ট হাউসের সামনে থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। ওই কিশোরের পরিবার রাউজান উপজেলার ডাবুয়া এলাকায়। বর্তমানে তাঁরা চকবাজার ডিসি রোডে গণি কলোনিতে থাকেন। 

আজ শনিবার বিকেল ৪টায় র‍্যাব-৭ চান্দগাঁও ক্যাম্পে এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এসএম ইউসুফ বলেন, ‘চকবাজার থেকে গত ১০ ডিসেম্বর ১৫ বছরের এক কিশোর নিখোঁজ হয়। হঠাৎ করে সে উধাও হয়ে যায়। এই ঘটনায় থানায় জিডি হয়, পরবর্তীতে সেটি মামলায় রূপান্তরিত হয়। অভিভাবকেরা তাকে নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও পায়নি। পরে বাবা আমাদের কাছে আসে।’ 

র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘র‍্যাবের দীর্ঘ পাঁচ মাসের প্রচেষ্টায় শুক্রবার রাতে কিশোরকে উদ্ধার করা হয়। তাকে খুঁজে পাওয়ার পরও সে পরিচয় গোপন করেছিল। আত্মগোপনে যাওয়ার পর ছেলেটি কখনো বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’ 

র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, ছেলেটির বয়স ১৫ বছর। ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিন বছর আগে তার হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়া হয়েছিল। তখন তার বয়স ছিল ১২ বছর। এরপর ছেলেটি পাবজি গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে। তার ভাষ্যমতে, দুই বছরের বেশি সময় ধরে পাবজি গেমে আসক্ত ছিল। অ্যাডাল্ট সাইটগুলোও নিয়মিত ভিজিট করত। এ নিয়ে বাবা-মা তাকে প্রায়ই বকাঝকা করতেন। গত ডিসেম্বরে বাবা-মায়ের বকাঝকার কারণে সে আত্মগোপনে চলে যায়। 

পালিয়ে যাওয়ার পর একে খান মোড়ে একটি রেস্টুরেন্টে পার্সেল বয় হিসেবে দেড় মাস চাকরি করে ওই কিশোর। সেখান থেকে দু-তিন অবস্থান পরিবর্তন করে। সর্বশেষ চান্দগাঁওতে একটি রেস্ট হাউসে চাকরি নেয়। সেখানে এক গেস্টের কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন পায়। আবার পাবজি গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে। ভিন্ন নামে আইডি খুলে ফেসবুক ব্যবহার শুরু করে। পাঁচ মাস আগে পুরোনো ফেসবুকে আইডিতে মাঝেমধ্যে লগইন করত। কিন্তু ভিপিএন ব্যবহার করায় তার অবস্থান জানতে পারছি না র‍্যাব। 

র‍্যাব-৭ অধিনায়ক বলেন, ‘পাঁচ মাস ধরে এই কিশোর আত্মগোপনে থাকতে পারত না, যদি প্রথমে পরিবার থেকে সচেতন হতাম। পিতা-মাতা হয়ে যদি ছেলের কাছে মোবাইল তুলে দিই, তাহলে সেই এই মোবাইলটি কী কাজে ব্যবহার করছে তাঁর খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল।’ 

কিশোরদের উদ্দেশে র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘সাময়িক মোহে পড়ে তারা যাতে পুরো ভবিষ্যৎকে অন্ধকারের মুখে ফেলে না দেয়। আমরা আজ হয়তো এ কিশোরকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছি। কিন্তু তা নাও হতে পারত। এই অল্প বয়সী ছেলেকে দিয়ে নানা প্রলোভন দেখিয়ে কোনো দুষ্টু চক্র তাকে খারাপ কাজে লিপ্ত করাতে পারত। আবার তাকে অপহরণ করে পিতা-মাতার কাছে টাকা চাইত, তাকে খুন করে ফেলতে পারত।’

পরিবারের একমাত্র সন্তানকে ফিরে পেয়ে ওই কিশোরের বাবা-মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সন্তানকে জড়িয়ে ধরে বাবা-মা দুজনকেই কাঁদতে দেখা যায়।