সামাজিক নিরাপত্তায় গৃহহীনদের আবাসন কর্মসূচিঃ শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব

অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন
অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন

সারাদেশের ছিন্নমূল ও গৃহহীনদের আবাসন নিশ্চিত করার যে কর্মসূচি সরকার গ্রহণ করেছে তা নিঃসন্দেহে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অত্যন্ত গুরুত্ববহ। বর্তমানে দেশে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অনেকগুলো উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। যা ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে বিগত অনেক বছর থেকে।

সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিগত ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বরাদ্দের পরিমান ছিল ৩৭৩ কোটি টাকা। আর তা ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটে বেড়ে দাড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকায়। উল্লেখ্য যে এটা মোট বাজেটের ১৬.৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩.০১ শতাংশ। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকার অনেকগুলো লক্ষদল চিহ্নিত এবং নির্ধারিত করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বিস্তৃত করেছে।

এই লক্ষদলগুলো হলো: বয়স্কভাতাভোগী, দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগী, ভিজিডি কার্যক্রমের আওতায় উপকারভোগী, কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহযোগীতার আওতায় উপকারভোগী, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানীভাতা, প্রতিবন্ধীভাতাভোগী, বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা নারী ভাতাভোগী, বেদে ও অনগ্রসর মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভাতাভোগী, অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থানের কার্যক্রম, শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, কিডনি এবং লিভার সিরোসিস রোগীদের সহায়তা কার্যক্রম, চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কর্মসূচিসহ গৃহহীন ও ছিন্নমূলদের আবাসান কার্যক্রম এবং সর্বসাধারণের পেনশন কার্যক্রম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

২০২০-২১ অর্থবছরে এই সকল লক্ষ্যদলের উপকারভোগী বা সুবিধাভোগীর সংখ্যা বিগত সময়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যসূত্রে দেখাযায় বয়স্কভাতা উপকার ভোগীর সংখ্যা গত বছরের ৪৪ লক্ষ থেকে ৪৯ লাখে উন্নীতকরণ, বিধবা স্বামী পরিত্যাক্তা নারী সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৭ লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ ৫০ হাজারে বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৫ লক্ষ ৫৫ হাজার থেকে ১৮ লক্ষে উন্নীতকরণসহ প্রায় প্রতিটি খাতেই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। 

সেইসাথে গৃহহীন ভূমিহীন ও ছিন্নমূলদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ‘একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প’, ‘আশ্রায়ন প্রকল্প’, ‘খুরুশকুল আশ্রয়ন প্রকল্প’, ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য যে, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ১ লক্ষ ১৭ হাজার ২৯টি ঘর নির্মাণের পর তৃতীয় ধাপে ৬৫ হাজার ৬৭৪ টি ঘর নির্মাণাধীন। যার মধ্যে সম্প্রতি ৩২ হাজার ৯০৪ টি হস্তান্তর করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে: ববি ভিসি

তথ্যসূত্রে আরও জানা যায় আবাসন এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬০ হাজার ১৯১টি এবং ২০ জুন ৫০ হাজার ৩০০টি ঘর হস্তান্তর করা হছেয়ে। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম হলো বাসস্থান। আর এই বাসস্থান ভ‚মিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নিশ্চিত করা একটি যুগন্তকারী পদক্ষেপ। যা শুধুমাত্র মানবিক, দুরদর্শী ও সুদুরপ্রসারী নেতৃত্বগুনেই সম্ভব।

বর্তমানে দেশে সকল জনগোষ্টির মৌলিক চাহিদা যথাযথভাবে পূরণ না হলেও খাতভিত্তিক মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণের জন্য সরকার যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তা দৃশ্যমান। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিষয়ক মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য যে সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা ও কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তা সকল মহলে স্বীকৃত। সেটা আজ জাতীয় পর্যায় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কেননা বর্তমান সময়ে খাদ্য চাহিদা পূরণে উৎপাদন বৃদ্ধি ও চাহিদা পূরণ এখন দৃশ্যমান যা হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে এই সরকারের সময়ে।

শিক্ষাখাতে তার সুদুরপ্রসারী নেতৃত্বে নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী তথা উপকারভোগীর সংখ্যা বিস্তৃত ও সম্প্রসারিত হয়েছে। স্বাক্ষরতার হার-শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে নানা প্রতিক‚লতা সত্তে¡ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে করোনাকালীন সময়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেয়ায় সকলের জন্য টিকা নিশ্চিত হয়েছে। আর আবাসন খাতের এই উদ্যোগ তো তাঁরই যোগ্য নেতৃত্বের প্রমানস্বরূপ।

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি নিশ্চিতকরে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে এগিয়ে নিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সূদুর প্রসারী ও দূরদর্শী নেতৃত্ব দিচ্ছেন তা আজ গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে। কেননা কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্তই হলো অন্যান্য সকল খাতে সম-উন্নয়নসহ পরিপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্প ও উৎপাদন খাতের উন্নয়ন, সেবাখাতের উন্নয়ন ও সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, সামাজিক অস্থিতিশীলতা দূর করে সামাজিক উন্নয়ন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজগঠন ও সমতা ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যে দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রয়োজন তার প্রায় সবই বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে বিরাজমান।

একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, নেতৃত্বের গুণাবলীতে তড়িৎ সিদ্ধান্তগ্রহণ, সৎ ও সাহসী পদক্ষেপ, মানবীয় গুণাবলী, বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক চিন্তার বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্ববহ। আর উল্লিখিত সকল গুণাবলী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে রয়েছে। যার ফলে দূরদর্শী নেতৃত্বের ইতবাচক প্রভাব দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতিলাভ করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অন্যান্য দেশের সাথে তাঁর ক‚টনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ, দেশের অভ্যন্তরের অর্থনৈতিক, সামাজিক সফলতাসহ উৎপাদন খাতে বিদ্যুৎ, কৃষির সফলতা আজ দৃশ্যমান।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লিখিত এই সকল সফলতা অর্জনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন প্রয়োজন শুধু সকল পর্যায়ে সু-শাসন নিশ্চিত করা- যার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে অন্যান্য সকল খাতের উন্নয়নের সামঞ্জস্য বিধানকল্পে তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব দৃশ্যমান। আর এই নেতৃত্বকে ভিত্তি ধরে সমগ্র বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াশ। 

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনায়ন, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট উদ্যোগগ্রহণ, আর্থসামাজিক উন্নয়নে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ও উদ্ভাবন, মানুষে মানুষে ব্যবধান কমিয়ে আনতে সমতাভিত্তিক নীতিনির্ধারণসহ দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সমগ্রজাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সুদূর প্রসারী, সৎ, সাহসী নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় দেশ এগিয়ে যাক সেই প্রত্যাশা এখন আপামর জনগণের।

লেখক: উপাচার্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়