এ কেমন সরকার যে কেবল উন্নয়ন বলতে ভবন নির্মাণ বোঝে!

ঢাকা কলেজ
ড. মো. কামরুল হাসান মামুন

একটা রাষ্ট্র শিশুদের প্রতি কতটা নির্দয় হলে পরে শিশুদের জন্য নির্ধারিত খেলার মাঠ দখল করে পুলিশ বাহিনীর জন্য ভবন নির্মাণ করে। এ কেমন সরকার যে কেবল উন্নয়ন বলতে ভবন নির্মাণ বোঝে। এমনিতেই ঢাকা শহরে খেলার মাঠের প্রচণ্ড অভাব।

সরকারের যেখানে উচিত নতুন নতুন খেলার মাঠ তৈরি করা সেখানে বিদ্যমান খেলার মাঠকেই খেয়ে ফেলছে। শুধু তাই না। অনেক খেলার মাঠ সুন্দর করার নামে বিভিন্ন ক্লাবকে দিয়ে এমন অবস্থা হয়েছে যে বাহ্যিকভাবে দেখতে সুন্দর কিন্তু সেই মাঠ উন্মুক্ত না। শিশুদের সুন্দরভাবে গড়ে উঠার প্রধান শর্ত হলো শিশু কিশোরবেলায় খেলাধুলা করা। এইটা না করলে শরীর এবং মনের ওপর তার ইমপ্যাক্ট পরিলক্ষিত হয় পরবর্তী জীবনে।

রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে পুলিশের জন্য ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে আন্দোলন গড়ে তুলেন সৈয়দা রত্না নামে এক নারী এবং সাথে যোগ দেয় তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহ। কি দারুণ সংবাদ! আমিতো ভেবেছিলাম এই দেশ তথা এই শহরের মানুষ আন্দোলন করতে ভুলে গেছে। উল্টো অধিকাংশ মা-বাবাই এখন তাদের সন্তানদের এমনভাবে বড় করে যেন তারা কোন আন্দোলন সংগ্রামে জড়িয়ে না যায়। আর আলোচ্য ক্ষেত্রে মা-ছেলে যুগলবন্দী হয়ে মাঠ রক্ষায় যুদ্ধ করে যাচ্ছে!

একটি সমাজে বিভিন্ন যৌক্তিক ইস্যুতে আন্দোলন করতে পারে এইরকম একটা থ্রেশোল্ড সংখ্যক প্রতিবাদী মানুষ লাগে ঠিক যেমন সুস্থ শরীরের জন্য রক্তে একটা থ্রেশোল্ড সংখ্যক প্রতিবাদী রক্ত লাগে যাকে আমরা শ্বেত-কণিকা বলি। এই শহরে যৌক্তিক আন্দোলন গড়ে তুলার অনেক কারণ জমে গেছে। কিন্তু কোথাও আন্দোলন নেই কারণ এই শহর তথা দেশে প্রতিবাদী মানুষের সংখ্যা এলার্মিংলি কমে গেছে।

আরও পড়ুন : কার বেতন বেশি হওয়া উচিত, এইচএসসি পাশ নাকি পিএইচডি ডিগ্রিধারীর?

এই মাকে শ্রদ্ধা। সে নিজেই একা প্রতিবাদে নামেনি বরং তার আদরের সন্তানও নেমেছে। এই শহরে যে একটা সুপ্ত প্রতিবাদী মা আছে সেটা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে টের পেয়েছিলাম। কিন্তু সুপ্ত বা নীরব হলে তো দেশ তথা শহর সুন্দর হবে না।

একটা কিশোরকে কিভাবে হাজতে ঢুকায়? এত নির্দয় আমাদের পুলিশ কিভাবে হয়? তারা কি জানেনা শিশু কিশোরদের হাজতে নেওয়া যায় না। এখন শুনছি রাতে মুচলেকা দিয়ে মা এবং ছেলেকে ছেড়ে দিয়েছে। ছেড়ে দিয়েছে বলেই কি খুশিতে সব ভুলে যাব? খেলার মাঠ দখলের কি হবে?

আন্দোলনটা এমন হওয়া উচিত যেন রাষ্ট্র মুচলেকা দেয় এই বলে যে আর কোনদিন শিশু কিশোরদের খেলার মাঠ দখল করবে না। কিন্তু কি আশ্চর্য এখানে মুচলেকা দিতে হলো সৈয়দা রত্নাকে। সত্যি কি সেলুকাস!