খন্দকার মোশতাককে ‘শ্রদ্ধা’, প্রতিবাদের মুখে দুঃখপ্রকাশ ঢাবি শিক্ষক নেতার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসে আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. রহমত উল্লাহ মুজিবনগর সরকারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ।

আর উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, তার বক্তব্যের ওই অংশটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ বিষয়ে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ বলেছেন, তিনি মুখ ফসকে খন্দকার মোশতাকের নাম বলে থাকতে পারেন। সে জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন।

আজ রবিার (১৭ এপ্রিল) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এই সভায় উপ-উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদ ও শিক্ষক নেতা অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদসহ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ও কর্মচারী সমিতির নেতারা বক্তব্য দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার সভা সঞ্চালনা করেন।

অধ্যাপক রহমত উল্লাহর বক্তব্যের বিষয়ে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলেন, মুজিবনগর দিবসের আলোচনা সভায় মুজিবনগর সরকারের সব মন্ত্রীকে তাদের অবদানের জন্য শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ খন্দকার মোশতাকের নাম উল্লেখ করেও শ্রদ্ধা জানান। এরপর আমি আমার বক্তব্যে বলেছি, মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় মোশতাক মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল এবং তাকে চোখে-চোখে রাখতে হয়েছে। সে পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করার প্রস্তাবেও যুক্ত ছিল। কাজেই শিক্ষক সমিতির সভাপতি যে বক্তব্য রেখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা গ্রহণ করতে পারবে না।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, অধ্যাপক রহমত উল্লাহর বক্তব্যে খন্দকার মোশতাক আহমদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর অংশটুকু প্রত্যাহার করা হয়েছে। (মোশতাকের নাম) এককভাবে নয়, আরও কয়েকটা নামের সঙ্গে বোধ হয় তিনি উচ্চারণ করেছিলেন। সভায় একজন আলোচক নিজের বক্তব্যে বিষয়টি নজরে আনেন। পরে অধ্যাপক রহমত উল্লাহর বক্তব্যের ওই অংশটুকু প্রত্যাহার করা হয়।

অধ্যাপক রহমত উল্লাহ শিক্ষক সমিতির সভাপতির পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিনের দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকারে কে কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগে ছিলেন, তা নিয়ে আমি আলোচনা করেছি।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা, ১০ এপ্রিলে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রসহ সার্বিক বিষয়ে আমি আলোচনা করি। মুজিবনগর সরকার সম্পর্কে বলতে গিয়ে যদি স্লিপ অব টাং কিছু বলে থাকি, তাহলে আমি দুঃখিত। ইতিহাস তো আমি তৈরি করিনি। মোশতাক বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন ঘৃণিত ব্যক্তি। সে এই জাতির ভাগ্যের জন্য কলঙ্ক। তার প্রতি সম্মান জানানোর প্রশ্নই আসে না। আমি আমার বক্তব্যে তার প্রতি নিন্দা জানিয়েছি। ইতিহাসের ঘৃণিত ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করার অভিলাষ বা দুঃসাহস আমার নেই।

তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাক মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদীয় মন্ত্রী ছিলেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারেও ঠাঁই পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর নিজেকে দেশের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন খন্দকার মোশতাক। খন্দকার মোশতাককে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারীদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।