রমজান মাসে ফজিলত বাড়ানোর ‍উপায়

টিপস
রমজান মাসে ফজিলত বাড়বে যেসব কাজে

সামনেই পবিত্র মাহে রমজান মাস। আর মাত্র দিন কয়েক পরই শুরু হবে রমজানের রোজা রাখার সাধনা। আর এই রমজান মাসে ফজিলত বাড়ানোর জন্য শুধু আমল করাই যথেষ্ট নয়। সেই সঙ্গে প্রয়োজন কিছু খারাপ অভ্যাস পরিহার করে চলা। সেই জন্য রমজান শুরু হওয়ার আগেই প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের এই সমস্ত বিষয় সম্পর্কে অবহিত থাকা প্রয়োজন।

কেননা, ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের মধ্যে রমজান মাসের রোজা হল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রমজান মাসের যেকোন নেক আমলের ফজিলত অন্যান্য মাসে করা নেক আমল থেকে অনেক বেশি। এই ফজিলত অর্জনের পথে কিছু নেতিবাচক কাজ বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এসব বদ অভ্যাস আমাদের আমলগুলোকে অনেক বেশি হালকা করে দেয়। তাই চলুন এমন কিছু খারাপ অভ্যাস জেনে নেই যেগুলো রমজান মাসে করা থেকে বিরত থাকলে অনেক ফজিলত লাভ করা যায়:

  • আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যারা আলসেমি করে সাহরি খান না। অনেকে আবার আগ রাতে খেয়েই শুয়ে পড়েন। এটা সুন্নাহ পরিপন্থী কাজ। তবে অনিচ্ছাকৃত ভুল হলে সেটি নিশ্চয় ভিন্ন বিষয়। এ ব্যাপারে পবিত্র হাদিস গ্রন্থ সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমাদের ও আহলে কিতাবিদের রোজার মাঝে পার্থক্য হলো সাহরি গ্রহণ। ’ (সহিহ মুসলিম: ২৬০৪)। কেননা আমরা জানি, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা সাহরি খায় না।

আরও পড়ুন: ইসলামে তাকওয়ার গুরুত্ব ও ফজিলত

  • সিয়ামের পূর্ণ সওয়াব পাওয়ার জন্য বিলম্বে ইফতার করা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। সাহাবি হজরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদিস গ্রন্থ সুনানে আবু দাউদে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘দীন বিজয়ী হবে যখন মানুষ দ্রুত ইফতার করবে। কারণ, ইহুদি-নাসারারা বিলম্বে ইফতার করে রোজা ভাঙ্গেন। ’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৩৫৫)
  • রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। রমযানে এই লাইলাতুল কদরের রাতকে নবী করিম (সাঃ) খুঁজতে বলেছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। ’ (সূরা কদর: ৪)। পবিত্র হাদিস গ্রন্থ সহিহ বোখারির বর্ণনায় এসেছে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে কদরের রাতের সন্ধান কর। ’ (সহিহ বোখারি: ২০২০)
  • অন্যান্য মাসের ন্যায় রমজানেও মিথ্যা কথা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা থেকে রোজাদার ব্যক্তিকে বিরত থাকতে হবে। রমজানে একজন রোজাদার মিথ্যা কথা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকবে এটাই স্বাভাবিক বিষয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদিস গ্রন্থ সহিহ বোখারিতে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা, খারাপ কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করতে পারল না, তার রোজা রাখা আর শুধু পানাহার বর্জনের মধ্যে আল্লাহ রাব্বুল আলা’মিন কোন পার্থক্য দেখেন না। ’  (সহিহ বোখারি: ৬০৫৭)
  • রমজানে অবহেলা করে কোন সুন্নাহ ত্যাগ করা যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে আমাদের প্রত্যেকটি আমল যেন সুন্নাহ মোতাবেক হয়। পবিত্র হাদিস গ্রন্থ মুসনাদে আহমাদ ইবনে হানবালে বলা আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হযরত নবী করিম (সা.) বলেছেন- ‘এমন অনেক রোজাদার আছে, যার রোজা থেকে প্রাপ্তি হচ্ছে শুধু ক্ষুধা ও তৃষ্ণা। তেমনি কিছু নামাজি আছে যাদের নামাজ কোনো নামাজই হচ্ছে না। শুধু যেন রাত জাগছে। ’ (মুসনাদে আহমাদ ইবনে হানবাল: ৮৮৪৩)

আরও পড়ুন: এই গরমেও আরামে থাকার উপায়

  • আমরা সকলেই জানি, পুণ্য অর্জনের মাস পবিত্র মাহে রমজান মাস। এ মাসে রোজা-নামাজ ইত্যাদি আমল করার পাশাপাশি দান-সদকার মাধ্যমেও ফজিলত অর্জন করতে হবে। বেশি বেশি দান-সদকা করার চেষ্টা করতে হবে। এতিম, বিধবা ও গরীব-মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। যাদের ওপর জাকাত ফরজ তাদের জন্য হিসাব করে এ মাসে জাকাত দেওয়া উত্তম। কেননা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এ মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করতে বলেছেন। পবিত্র হাদিস গ্রন্থ সহিহ বোখারিতে এসেছে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘ মানুষের মধ্যে রাসূল (সা.) সবচেয়ে বেশি দান করতেন আর রমাজানে তাঁর এই দানের পরিমাণ আরও বেড়ে যেত। ’  (সহিহ বোখারি: ১৯০২)
  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত যেকোন জিনিস অপচয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেকে রমজান মাসে ইফতার বা সাহরিতে এমন খরচ করেন যার কোন প্রয়োজন নেই। পবিত্র আল কোরআনে উল্লেখ আছে, ‘হে বনী আদম! তোমরা প্রতি নামাজে তোমাদের সাজসজ্জা পরিধান কর, খাও এবং পান কর কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না। ’  (সূরা আরাফ: ৩১)
  • শুধু খতম দেওয়া বা পড়া শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন খতম দিলে কোরআনের পুরো হক আদায় হয় না। বিশেষ করে খতমে তারাবিতে খতম শেষ করা বা ২০ রাকাত তারাবি শেষ করার জন্য তাড়াহুড়ো করে কোরআন পড়া। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদিস গ্রন্থ সহিহ বোখারিতে উল্লেখ আছে, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে কোরআন সুন্দর উচ্চারণে পড়ে না, সে আমার উম্মতের মধ্যে শামিল নয়। ’  (সহিহ বোখারি: ৭৫২৭)
  • আমাদের অনেকেই ফরজ নামাজ আদায়ে অলসতা করে। কিন্তু সিয়াম পালনের সঙ্গে সঙ্গে ফরজ নামাজও জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। অনেকে ফরজ নামাজ আদায়ে উদাসীন থাকেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়। পবিত্র আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অতএব সেই নামাজ আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজেদের নামাজে অমনোযোগী। ’  (সূরা মাউন: ৪-৫)
  • ইবাদতের মাস রমজানে বেশি বেশি আমল করার কথা বলেছেন নবী করিম (সাঃ)। কিন্তু আমরা অনেকেই ব্যস্ত থাকি দুনিয়াবি কাজে। এটা কাম্য নয়। এ মাসে বেশি বেশি দোয়া-ইস্তেগফার করা উচিত। পবিত্র হাদিস গ্রন্থের সংকলন আল-মুজামুস সাগিরে ‍উল্লেখ আছে, ‘ইফতারের মূহূর্তে আল্লাহতায়ালা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। মুক্তির এ প্রক্রিয়া রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে। ’  (আল-মুজামুস সাগির: ৩৯৩৩)