বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য জ্ঞান সৃষ্টি করা: সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

শিক্ষাবিদ
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য জ্ঞান সৃষ্টি করা। পৃথিবীর কয়টা বিশ্ববিদ্যালয় আছে যাদের একটি স্বাধীন দেশের জন্মের পেছনে সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে, একটি সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় না হলে আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন বহুদিন পিছিয়ে যেত।

বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) বিকাল চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে অবস্থিত মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘‘সৈয়দ আবুল মকসুদ স্মৃতি সংসদ’’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন রাজনৈতিক পংকজ ভট্টাচার্য, শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, সাহিত্যিক মফিদুল হক ও কবি সাজ্জাদ শরিফ সহ আবুল মকসুদের পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, চারিত্রিক অখণ্ডতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা অনেক সময় সৎ থাকতে বাধ্য হই কিন্তু এই চারিত্রিক অখণ্ডতা সততাকে ছাপিয়ে যায়। এই গুণের কারণে একজন মানুষ তার শিরদাঁড়া শক্ত করে দাঁড়াতে পারে।

সৈয়দ আবুল মকসুদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের কথা তুলে ধরে মনজুরুল ইসলাম বলেন, আবুল মকসুদ বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র হিসেবে দেখতেন। তিনি আদর্শের কথা বলতেন কিন্তু এর চর্চাও করতেন। অনেকে আদর্শের কথা বলতেন কিন্তু সেগুলোর সক্রিয়ভাবে চর্চা করতে খুব একটা দেখা যায় না। তার লেখাগুলো আমার কাছে বড় সম্পদ মনে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর একটা গবেষণার ক্ষেত্র ছিল। নবাব সলিমুল্লাহর উপর তিনি আলোকপাত করেছেন। প্রান্তিক মানুষের উন্নয়নে, অধিকার আদায়ের জন্য অধিকার আন্দোলনকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনি তার লেখায় কৌতুক ও রসবোধের চর্চা করতেন। সৈয়দ আবুল মকসুদকে আমাদের আরো ঘনিষ্ঠভাবে পড়তে হবে, জানতে হবে।

আরও পড়ুন: জাবিতে ভর্তি পরীক্ষার ‘আর্থিক অনিয়মের’ তদন্ত শুরু

সাহিত্যিক মফিদুল হক বলেন, তিনি বহু দিকে কাজ করেছেন।তিনি বহু মানুষকে নিয়ে চলার চেষ্টা করেছেন। সমাজের যা কিছু বড় রকমের সংকট হয়েছে সেখানেই তাকে সামনের কাতারে দেখা গেছে। তিনি বামপন্থী আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। আমাদের বাঙালি সমাজে যে অসাম্প্রদায়িকতা এই চেতনাটাই মাকসুদ ভাইকে গান্ধী আশ্রমে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি যা রেখে গেছেন সেটা নিয়েই সমাজকে এগিয়ে যেতে হবে।

রাজনৈতিক পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, আমরা দুজনে বন্ধু ছিলাম। তিনি ছিলেন নির্ভরতার প্রতীক। তিনি একাধারে লেখক, গবেষক, সাংবাদিক। নদী,খাল, বিল রক্ষার আন্দোলনের সম্মুখ সারির নেতা। নারীর উপর সহিংসতা ও অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদী ছিলেন। আদিবাসীদের পক্ষে লড়েছেন। প্রান্তিক জণগনের বন্ধু ছিলেন।

মকসুদের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো স্মৃতিচারণ করে পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, তার সাথে বিভিন্ন আড্ডায় মশগুল ছিলাম। মনের কথা অকপটে বলতে কোন দ্বিধা করতেন না তিনি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস নতুনভাবে উন্মোচন করেছেন। তার হঠাৎ চলে যাওয়া আজও মেনে নিতে পারিনি।

উল্লেখ্য, আবুল মকসুদ ১৯৪৬ সালের ২৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন বাংলাদেশী সাংবাদিক, কলামিস্ট, গবেষক, প্রাবন্ধিক ও লেখক। তিনি তাঁর গবেষণাধর্মী প্রবন্ধের জন্য সুপরিচিত।তার প্রবন্ধসমূহ দেশের রাজনীতি, সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়। তিনি বিখ্যাত সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদদের জীবনী ও কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছেন।পাশাপাশি কাব্যচর্চাও করেছেন। তার রচিত বইয়ের সংখ্যা চল্লিশের উপর।এই মহান মনীষী গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি পরলোক গমন করেন।