১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮টিতেই নেই ভিসি-ট্রেজারার

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

ভিসি (ভাইস-চ্যান্সেলর), প্রো-ভিসি (ভাইস-চ্যান্সেলর) ও ট্রেজারার— যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম সঠিকভাবে চলতে এই তিনটি পদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, এ তিন পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। ‍কিন্তু অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরের পর বছর কাউকে নিয়োগ না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চালাচ্ছেন মালিকরা।

এদিকে, চ্যান্সেলর কর্তৃক এই তিন পদে নিয়োগ না দেওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে লাল তালিকাভুক্তি করার ঘোষণা দেওয়া হলেও তা বাস্তাবায়ন করেনি তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। গত সেপ্টেম্বর মাসে এ ঘোষণা দেওয়ার ৫ মাস পরও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

আরও পড়ুন: ৬ কারণে লাল তালিকায় পড়বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বর্তমানে দেশে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চালু রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৪০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত ভিসি-ট্রেজারার দুটি পদই রয়েছে। আর বাকি ৬৮টিতে দুটি পদই শূন্য। অন্যদিকে, শুধু প্রো-ভিসি পদ শূন্য ৮২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

জানতে চাইলে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, যেকোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত ভিসি-ট্রেজারার থাকা জরুরি। সেটা না থাকলে তো চ্যান্সেলরের প্রতিনিধি হিসেবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ আর থাকলো না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনেও সেটাই বলা আছে। তবে প্রো-ভিসি না থাকলে আমরা কিছু বলি না। অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রো-ভিসির পদ শূন্য আছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, এ তিন পদে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর। তবে প্রাথমিক কাজটি করে থাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউজিসির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব আসার (প্যানেল) পর তারাই সরকারের কাছে এসব পদে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। সেটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে যায়।

আইন অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এই তিন পদে নিয়োগ দিতে একেকটি পদের বিপরীতে তিনজন অধ্যাপকের নাম প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেগুলোর ইউজিসির মাধ্যমে যাচাই করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেন।

তবে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম না মেনে নিজেরাই এসব পদ ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বছরের পর বছর শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালায়। অভিযোগ রয়েছে, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের প্যানেল সরকারের কাছে না পাঠিয়ে নিজেদের মতো করে একটি প্যানেল পাঠায়। পরে সেটি আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত আসে। এরপর থমকে যায় এই নিয়োগ প্রক্রিয়া। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড এবং মালিকরা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়।

লাল তালিকায় ভিসি-ট্রেজারারবিহীন বিশ্ববিদ্যালয় থাকবে কিনা, জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সময় দেওয়া হয়েছিল। এরমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি-ট্রেজারারের তালিকা পাঠিয়েছে, আবার অনেক পাঠায়নি। আগামীতে বসে আমরা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।

আরও পড়ুন: এইচএসসি ফলের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে সর্তকতা

ভিসি-ট্রেজারার আছে যে ৪০ বিশ্ববিদ্যালয়ে
ইনডিপেনডেন্ট ইউনির্ভাসিটি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, লিডিং ইউনিভার্সিটি, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি,  নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, উত্তরা  ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি, লিবারেল আর্টস বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি, জেড এইচ সিকদার বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, খাজা ইউনুস আলী বিশ্ববিদ্যালয়, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, ফেনী ইউনিভার্সিটি, পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী সাইন্স এন্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি,  শেখ ফজিলাতুন্নোছা মুজিব ইউনিভার্সিটি, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সৈয়দপুর, বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি,  বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কুমিল্লা, ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি চট্টগ্রাম, বান্দরবান ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব বি. বাড়িয়া, ইউনিভার্সিটি অব স্কিল এনরিচম্যান্ট এন্ড টেকনোলজি এবং আরটিএম আল-কবির টেকনিক্যাল ইউনির্ভাসিটি। 

প্রো-ভিসি আছে মাত্র ২৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে
১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রো-ভিসি আছে- নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনির্ভাসিটি,  নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, গ্রীন ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনির্ভাসিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, লিবারেল আর্টস বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, হামদর্দ ইউনিভার্সিটি, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, চট্টগ্রাম।