যেসব উপসর্গ দেখা দেয় ওমিক্রন আক্রান্তদের দেহে

ভাইরাস
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন।

বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে হাসপাতালে ভর্তির হারও বেড়ে চলেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের গবেষণায় দেখা গেছে, আগের ধরনগুলোর মতো অমিক্রনের কারণে মানুষ অনেক বেশি অসুস্থ হয় না। কিন্তু যেভাবে অনেক বেশি মানুষ এই ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে, তাতে অনেকে আইসোলেশনে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

বাংলাদেশে এই পর্যন্ত অন্তত ২৪ জন ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন বলে সরকারি সূত্রগুলো জানাচ্ছে। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বের ১২৮টি দেশে ওমিক্রন  ছড়িয়ে পড়েছে। 

ওমিক্রনের লক্ষণগুলো কী কী?

অনেক মানুষের কাছে ওমিক্রন সাধারণ ঠাণ্ডার মতো মনে হবে। অনেকে বলেছেন, ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের গলা শুকিয়ে যাওয়া, সর্দি লাগা, শরীরের জয়েন্টে ব্যথা বা মাথা ব্যথা হয়েছে।

আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠক কাল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ মুনশি  বলছেন, ওমিক্রনের লক্ষণগুলো খুবই হালকা ধরনের হয়। ডেলটা বা অন্য ধরনগুলোর মতো অতোটা প্রকট নয়। অনেকের ফুসফুসের ওপরের দিকে ব্যথা হতে পারে। সাধারণত সিকোয়েন্সিং করে এটা শনাক্ত করা যায়।''

চিকিৎসকরা বলছেন, ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে অনেক সময় হালকা ঠাণ্ডা বা সাধারণ অসুস্থতার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। এছাড়া আরও যেসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে:

১. বুকের ওপরের অংশে ব্যথা
২. মাথা ব্যথা, জ্বর
৩. ক্লান্ত লাগা
৪. শরীরে ব্যথা
৫. গলা শুকিয়ে যাওয়ার অনুভূতি

ওমিক্রনের সঙ্গে অন্য ধরনগুলোর পার্থক্য কী?

সব ধরনের ভাইরাস দ্রুত অভিযোজিত হয় বা নিজেকে বিস্তার করে। তার ফলেই করোনাভাইরাসের এসব নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের জন্ম হয়। অনেক ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাসকে আরও বেশি ক্ষতিকর করে তুলতে পারে। আবার অনেকগুলো শুধুমাত্র নিজেকে বিস্তার করে বা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীরা একে বর্ণনা করেছেন 'ভ্যারিয়েন্টও অব কনসার্ন' বা (ভিওসি) নামে।

আরও পড়ুন: বাস-ট্রেন-লঞ্চে অর্ধেক যাত্রী বহনের সিদ্ধান্ত হয়েছে

২৫০ বেড টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলছেন, ডেল্টা বা অন্য ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ওমিক্রন খুব দ্রুত ছড়ায়। কিন্তু এটি ততোটা প্রাণঘাতী নয়। বিশ্বব্যাপী দেখা গেছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও অন্যগুলোর তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার হার কম।

ওমিক্রন এই গোত্রের একটি ভ্যারিয়েন্ট কারণ এটি এমনভাবে অভিযোজিত হয়েছে, যা এর আগে দেখা যায়নি।

এর মধ্যে রয়েছে স্পাইক প্রোটিন নামের যে ভাইরাসের ধরনটিও, যা লক্ষ্য করে বেশিরভাগ টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে। ফলে প্রাথমিকভাবে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল যে, বর্তমান টিকাগুলো হয়তো অমিক্রনের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে না।

তবে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা গবেষণা করে দেখতে পেয়েছে, ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও বুস্টার ডোজ নিলে ৮৮ শতাংশ ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ঠেকানো যায়।

আরও পড়ুন: ফোনেই দেওয়া যাবে রিকশা ভাড়া

ডা. আয়শা আক্তার বলছেন, ওমিক্রন নাকি ডেল্টায় আক্রান্ত হয়েছেন, সেটা নিয়ে চিন্তা করার চেয়ে বরং করোনাভাইরাসে যাতে আক্রান্ত না হন, সেই চেষ্টা করতে হবে। সেজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আর কোনভাবে আক্রান্ত হয়ে গেলে আইসোলেশনসহ চিকিৎসার যেসব পদ্ধতি আছে, সেগুলোই অনুসরণ করতে হবে।'

অন্য ধরনগুলোর সঙ্গে এর আরেকটি বড় পার্থক্য লক্ষণ প্রকাশের ক্ষেত্রে। দক্ষিণ আফ্রিকায় বিস্তারের ধরন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের অন্য ধরনগুলোয় লক্ষণ প্রকাশে অনেক সময় সাতদিন সময় লাগলেও, এই ক্ষেত্রে সাধারণত তিন দিনের ভেতর লক্ষণ প্রকাশ হয়ে থাকে।

অমিক্রন শনাক্ত করতে কী ধরনের পরীক্ষা করা হয়?

সন্দেহভাজন রোগীর ওমিক্রন হয়েছে কিনা, সেটা জানতে পুরো জেনেটিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন হয়।
করোনাভাইরাসের পিসিআর মেশিনে মুখের যে লালা পরীক্ষা করা হয়, সে লালায় ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেলে পরে সেটা পাঠিয়ে দেয়া হয় জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য। সেজন্য চার থেকে পাঁচদিন সময় লেগে যায়।

জেনেটিক তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, আক্রান্ত ব্যক্তি ওমিক্রন নাকি অন্য কোন ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন।

বাংলাদেশের কয়েকটা প্রতিষ্ঠানে করোনাভাইরাসের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের পরীক্ষা হচ্ছে শুধুমাত্র সরকারের রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা আইইডিসিআরে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা