থার্টি ফার্স্টের আতশবাজির শব্দে কাঁপছিল শিশুটি, পরদিনই মৃত্যু

মৃত্যু
তানজীম উমায়রে

জন্মগতভাবে হৃদযন্ত্রে ছিদ্র ছিল তানজীম উমায়রের। চার মাস বয়সী এই শিশু গত শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) থার্টি ফার্স্ট নাইটের আতশবাজির শব্দে বারবার কেঁপে উঠছিল। আর সাথে ছিল শ্বাসকষ্টও। পরের দিন গত শনিবার (১ জানুয়ারি) বিকেলে মারা যায়।

উমায়রের বাবা ইউসুফ রায়হান জানান, আতশবাজির বিকট শব্দে ছেলেটা বারবার কেঁপে উঠছিল। তার সামনে গেলেই ভয়ে আঁতকে উঠছিল, দূরে সরে যাচ্ছিল। সারারাত আতঙ্কে কাটে তার, শ্বাসকষ্টও হচ্ছিল। বিকট শব্দের একপর্যায়ে আমি ও স্ত্রী আমাদের ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরি। বুকে তার মাথা রাখি। ছেলেটা তখনও স্বাভাবিক হচ্ছিল না।

এদিকে, আজ সোমবার (৩ জানুয়ারি) বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরছে ছোট্ট উমায়েরের ছবি। চলছে পটকা-আতশবাজি ফাটানো নিয়ে নানা সমালোচনা, চলছে নিষিদ্ধের দাবি।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ে ইউসুফের একটি মোবাইল  অ্যাক্সেসরিজের দোকান রয়েছে। ছয় বছর আগে বিয়ে করেন তানিয়া নামে এক মেয়েকে। তাদের পাঁচ বছর বয়সী একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। গত বছরের ১২ আগস্ট তাদের পরিবারে এসেছিল উমায়ের। 

উসুফ রায়হান বলেন, ছেলে পেট থেকেই হৃদযন্ত্রে ছিদ্র নিয়ে এসেছিল। প্রথমে রোগ ধরতে না পারলেও আমরা আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে তার টেস্ট করাই। অবশেষে রোগ শনাক্ত করতে পেরে চিকিৎসকরা ফেব্রুয়ারিতে তার অপারেশনের ডেট দেন। উমায়েরের শ্বাসকষ্টও ছিল। সে অল্প শব্দেই কেঁপে উঠত, ভয় পেত।

ডিসেম্বর মাসের ১০ তারিখে নিউমোনিয়া নিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় উমায়েরকে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি করা হয় তাকে। চার দিন পর সুস্থ হয়ে বাসায় আসে সে। বাসায় ফিরে সপ্তাহখানেক পর আবার তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) তাকে ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। ডাক্তারের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজের কারণে তাকে দেখানো যায়নি। ডাক্তার উমায়েরকে ১ তারিখে নিয়ে যেতে বলেছিলেন।

মর্মান্তিক সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমি তখন উমায়েরের মাকে বলি ওকে জড়িয়ে ধরতে, যাতে বিকট শব্দগুলো তার কানে না যায়। আমরা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরি। বুঝতে পারছিলাম শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল তার। কোনোভাবে রাতটি অতিক্রম করলাম। সকালে শ্বাসকষ্ট বেশি হওয়ায় আমরা তাকে হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যাই। চিকিৎসক দেখে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ভর্তি নেন। দুপুর পর্যন্ত তার অবস্থা খুব খারাপ ছিল, বিকেলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হলো। এর পরপরই তাকে নেওয়া হলো লাইফ সাপোর্টে। সন্ধ্যায় কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আমাদের ডেকে বললেন ছেলেটা হার্টফেল করেছে, সে আর বেঁচে নেই।