কৃষি গুচ্ছের উত্তরপত্র মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ, যা বললো আয়োজক কমিটি

ভর্তি পরীক্ষা
কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষা

ফল প্রকাশের পর থেকেই গুচ্ছভুক্ত সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া, তুলনামূলক বেশি নম্বর পেয়েও মেধা তালিকার পেছনের সারিতে নাম আসা— এসব অভিযোগের পর এবার উত্তরপত্র মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তা নিয়ে সরব ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি বলছে, তারাও এরকম অভিযোগ পেয়েছে। বিষয়টি ‘রিচেক’ করে দেখা হবে।

জানা যায়, গত বুধবার (২ ডিসেম্বর) কৃষি গুচ্ছের ফল প্রকাশ করা হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা প্রকাশিত এই ফলে অসঙ্গতির অভিযোগ তুললে তা আমলে নিয়ে ফল পুনর্নিরীক্ষার সুযোগ দেয় আয়োজক কমিটি। এক হাজার টাকা ফি দিয়ে গত শনিবার (৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদনের সুযোগ পেয়েছেন। এরপর গতকাল রবিবার (৫ ডিসেম্বর) থেকে পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করা শিক্ষার্থীরা সশরীরে গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরকৃবি) ডাকা হয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের স্ব স্ব উত্তরপত্র দেখানো হলে উত্তরপত্র  মূল্যায়নে অনিয়মের অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থীরা। 

এরপর থেকেই ফলাফল পরিবর্তন ও সঠিক উত্তর দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়নের প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সরব ভর্তিচ্ছু অধিকাংশ শিক্ষার্থী। এদিকে, গতকাল রবিবার থেকে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের অফিসিয়াল ই-মেইল, ফেসবুক পেজ, ফোন ও ক্ষুদেবার্তায় দুই শতাধিক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী অভিযোগটি জানান।

ভুল উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে ভর্তিচ্ছুরা বলছে, ভর্তি পরীক্ষার ‘ক’ সেটের মোট ১০০টি প্রশ্নের মধ্যে দশটি প্রশ্নের উত্তর ভুল ধরে মূল্যায়ন ও ২টি প্রশ্ন ভুলের বিষয়টি উঠে এসেছে। এদিকে ভুল উত্তর দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়নের ফলে পুরো ফলাফলে বিরাট অসঙ্গতি তৈরি হয়েছে। ফলাফল নিয়ে এমন অনিয়মের ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীর অভিভাবকরাও।

এ প্রসঙ্গে কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফল অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে গুচ্ছ কৃষি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল আমিসহ অনেক শিক্ষার্থী ১০০০ টাকা জমাপূর্বক বশেমুরকৃবিতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে গেলে দায়িত্বরত শিক্ষক আমার উত্তরপত্র এবং তাদের উত্তরপত্র দেখান। ‘ক’ সেটের ওই উত্তরপত্রের আমি ছবি তুলতে চাইলে ওই শিক্ষক ছবি তুলতে নিষেধ করেন, তিনি বলেন তোমরা চাইলে উত্তরগুলো লিখে নিতে পারো। পরে ওই উত্তরপত্রের উত্তরের সাথে পাঠ্যবইয়ে উত্তর মেলালে দেখা যায় ১০টি ভুল উত্তর ও দুটি প্রশ্ন ভুল নিয়ে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম বলেন, ফলাফল প্রকাশের দিন থেকেই তা নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দশটি নৈর্ব্যক্তিকের ভুল উত্তর নিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়নের ফলে অনেক অযোগ্যরা ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের জীবন অভিশপ্ত হয়ে পড়ছে। কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত ফলাফল স্থগিত করে সঠিকভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে পুনরায় ফলাফল প্রকাশের জোর দাবি জানাচ্ছি।

আরেক শিক্ষার্থী আফরোজা সুলতানা বলেন, সমন্বিত কৃৃষি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর হাজার হাজার পরীক্ষার্থী বারবার অভিযোগ করে আসছে ফলাফলে অনিয়মের বিষয় নিয়ে। কর্তৃপক্ষ বারবার এ দাবি অগ্রাহ্য করলেও এবার ১০টি প্রশ্ন ভুলভাবে দেখা হয়েছে এমন তথ্য প্রমাণিত হয়েছে। দ্রুত এ ব্যপারে যথাযথ পদক্ষেপ আশা করছি।

মাহমুদ হাসান আসিফ বলেন, ১২টি প্রশ্নের ভুল উত্তর দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে করে যেসব শিক্ষার্থী সঠিক উত্তর করেছিল তাদের সঠিক উত্তর ভুল হিসেবে গৃহীত হয়েছে। ফলে ১ নম্বর পাবার বদলে হারাতে হয়েছে ০.২৫ নম্বর। এভাবে ধরুন কোনো শিক্ষার্থী প্রায় ৮টা সঠিক উত্তর দাগিয়েছে, তাহলে ওই শিক্ষার্থীর কাটা গিয়েছে ১০ নাম্বার। ভর্তি পরীক্ষায় যেখানে দশমিক স্থানীয় নম্বর কম–বেশির ফলে হাজার হাজার দূরে পজিশন পিছিয়ে যায়, সেখানে ১০টা নম্বর কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলা বাহুল্য। যারা ভুল উত্তর দাগিয়েছে তারা নম্বর পেয়ে যেতে পারে। এতে করে মেধার মূল্যায়নও প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাচ্ছে। ভুল উত্তর দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়নের বিষয়টি নিয়ে বশেমুরকৃবি বরাবর লিখিত অভিযোগ জানালেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।অথচ ইতিমধ্যে ওয়েবসাইটে বিষয় পছন্দের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত বিষয় পছন্দের প্রক্রিয়া বন্ধ করে ফলাফল পুনমূল্যায়ন করা।

আরেক পরীক্ষার্থী মো. ইমন বলেন, কৃষি গুচ্ছের ফলাফল প্রকাশের দিন থেকেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে কৃষি গুচ্ছের ই-মেইলে অভিযোগ করি কিন্তু কোনো আশ্বাস মেলেনি। এছাড়া এ বিষয়ে ফোন করা হলেও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলাফল প্রকাশের আজ পঞ্চম দিনে এসে আমরা জানতে পারি ১০টি ভুল উত্তর দিয়ে আমাদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে। এছাড়া আরও ২টি প্রশ্নই ভুল ছিল।

তিনি বলেন, আমি ‘ক’ সেটের প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছি। যে ভুল উত্তর দিয়ে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে তার বেশিরভাগই উত্তর আমার সঠিক হয়েছে। সঠিকভাবে মূল্যায়ন করলে ফলাফলে নিশ্চয়ই আরও এগিয়ে থাকতাম। কিন্তু ফলাফল পুনরায় করার জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা এ ব্যপারে দ্বিমত পোষণ করেন। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, আমরা যারা সঠিক ফলাফল থেকে বঞ্চিত হয়ছি তাদের বিষয়টি আমলে নেওয়ার জন্য।

নাহিয়ান আল হেলাল নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সমন্বিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে অনেকটা ফুরফুরে মেজাজেই ছিলাম। আমার প্রাপ্ত নম্বর পাঠ্যবইয়ের উত্তর অনুসারে হওয়া উচিত ছিলো ৫৪। কিন্তু আমার ফলাফল আশানুরূপ হয়নি।

যে ১২টি নৈর্ব্যক্তিক ভুল উত্তর দিয়ে মূল্যায়ন করেছে সেখান আমার আমার ৮টি নৈর্ব্যক্তিক সঠিক হয়েছে অর্থাৎ আমার পজিশন আরো এগিয়ে থাকতো কিন্তু এখন হতাশা নিয়ে বসে আছি। কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত ফলাফল স্থগিত করে সঠিক ফলাফল প্রকাশ করা।

কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এ ধরণের অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। তবে সেটার সত্যতা যাচাই করা হবে।

অধ্যাপক ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া আরও বলেন, অভিযোগ আসলেতো হবে না, তা সঠিক কিনা তা আমরা দেখবো। উত্তরপত্র মূল্যায়নে যাতে কোন ইরর (ভুল) না থাকে তা দেখা হবে। আমি নিজেই বিষয়টি দেখবো। কারও কোন ক্ষতি হোক সেটাতো আমরাও চাই না।