ঢাবির এফএইচ হলের রুমে রুমে গিয়ে ছাত্রলীগের হুমকি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  ফজলুল হক মুসলিম হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে শিক্ষার্থীদের রুমে রুমে গিয়ে তাদের বের করে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এছাড়া ইতিমধ্যে হলে অনুপস্থিতি একাধিক শিক্ষার্থীর মালামাল বের করে ফেলে দেয়া হয়েছে। রবিবার (২৮ নভেম্বর) রাতে এই ঘটনা ঘটেছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

তবে এ ধরনের অভিযোগ সঠিক নয় বলেই দাবি ছাত্রলীগের। অভিযুক্তরা বলছেন, তারা হলের দেয়া বৈধ রুমে অবস্থান করছেন।

এদিকে, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ গত দুই সপ্তাহ যাবৎ অভিযুক্তরা ২৫৭ নম্বর রুম থেকে শিক্ষার্থীদের বেরিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিল। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের সঙ্গে আবাসিক হলের একাধিক শিক্ষকও জড়িত রয়েছেন। শিক্ষকরা অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়েছে। মাঝেমধ্যে হলের শিক্ষার্থীদের ঘুম থেকে উঠিয়েও বেরিয়ে যাওয়ার জন্য  হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।

‘‘মূলত অভিযুক্তরা একসঙ্গে এক রুমে থাকতে বৈধ সিটধারী শিক্ষার্থীদের উচ্ছেদ করতে চাচ্ছে। ২৫৭ নম্বর রুম ছাড়াও আরও একাধিক রুমে একই ধরনের আচরণ করছে অভিযুক্তরা।’’

এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন- ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী মো. সারোয়ার হোসেন ও ২০১৩- ১৪ সেশনের সানোয়ার হোসেন নাঈম। তারা দুজন পরিসংখ্যান ও জৈব পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। এছাড়া সারোয়ার ও নাঈম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসের অনুসারী বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীরা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গতকাল রাতে সারোয়ার ও নাঈম আমার রুমে আসে। এসে আমাকে রুম (২৫৭) ছেড়ে দিয়ে ১১৬ নাম্বার রুমে যেতে বলে। শুধু গতকালকে নয়, প্রায় দুই সপ্তাহ থেকে আমাকে রুম ছেড়ে দেয়ার জন্য হুমকি-ধমকি দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, তাদের সঙ্গে (সারোয়ার ও নাঈম) দায়িত্বরত আবাসিক শিক্ষক আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে আরও দুই জন শিক্ষক এসেছিলেন। বাকি দুই জন আবাসিক শিক্ষকের নাম জানা যায়নি। তাদেরকে (শিক্ষকদের) আমরা এই বিষয়ে বললে আলমগীর কবির স্যার অভিযুক্তদের (সারোয়ার ও নাঈম) পক্ষ নিয়ে উল্টো আমাদের বকা দিয়েছেন।

‘‘তিনি (আলমগীর কবির) বললেন, তুমি কালকে আমার সাথে সকালে দেখা কর। তোমার পছন্দের কোন রুম থাকলে সেখানে ওঠ। তারা (সারোয়ার ও নাঈম) চারজন একসাথে এই রুমে থাকবে।’’

এফএইচ হলের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, শুধু ২৫৭ নম্বর রুম না, এই হলের প্রায় আরও ৭-৮টি কক্ষে তারা (সারোয়ার ও নাঈম) শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছে না। কেউ চাচ্ছে না ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হতে। যাদের রুমে রুমে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে তারা সবাই (ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা) হল প্রসাশন থেকে সিট পেয়েছে।

এছাড়া অনেক আবাসিক শিক্ষার্থীদের মালামাল ইতিমধ্যে বের করে ফেলে দেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী আরও এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘আমার বিসিএস পরীক্ষার কারণে আমি একটু বাইরে আছি। আজকে শুনলাম আমার রুমের সকল প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বের করে দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। অথচ আমি এখনো বৈধ সিটধারী। এটা কেমন আচরণ? হল প্রসাশন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের সাপোর্ট দিচ্ছে।’’

আরেক শিক্ষার্থী জানান, ‘‘তারা হলের বৈধ শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক রুম থেকে বের করে দিতে চাচ্ছে। আমার রুমেরও তালা ভেঙে আমার জিনিসপত্র বের করে দিয়েছে। এরকম হলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? তারা চাচ্ছে এই রুমগুলোকে রাজনৈতিক রুমে পরিণত করতে। পরে তারা নিজেদের মত করে অবস্থান করবে।’’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সারোয়ার হোসেন হাসতে হাসতে বলেন, আমি কাউকে এই বিষয়ে জোর করি নাই। হল প্রসাশন থেকে আমাকে একটা রুম দিয়েছে, আমি এখানেই আছি। অন্য কারোর বিষয় নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। সারোয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও অপর অভিযুক্ত নাঈমকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কাছে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবাসিক শিক্ষক আলমগীর কবির বলেন, অন্য রুমে যাওয়ার কথা আমি বলতেই পারি। শিক্ষার্থীদের মন চাইলে রুম পরিবর্তন করতে পারে। সে (ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী) ওই রুমেই (২৫৭) আছে। সে রুম পরিবর্তন করেনি। এজন্য আমি তাকে জোর করিনি।

জানতে চাইলে ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শাহ্ মো. মাসুম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমি এখনো এই বিষয়ে জানি না। এগুলো বিষয় আবাসিক শিক্ষকরা দেখে। তবুও আমরা দায়িত্বরত আবাসিক শিক্ষকদের সাথে কথা বলতেছি। আশা করে কোন সমস্যা হয়ে থাকলে সমাধান হয়ে যাবে।