পুলিশ ভেরিফিকেশন আটকে আছে ২১৫৫ শিক্ষক নিয়োগ

নিয়োগ
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদ

সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে ২০২০ সালে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন ২ হাজার ১৫৫ জন নিয়োগ প্রার্থী। দীর্ঘ ১১ মাসে পর হলেও নিয়োগ পাননি কেহ। যদিও নিয়োগের সব প্রক্রিয়া সহ শেষ  হয়েছে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। বাকি শুধু পুলিশ ভেরিফিকেশন। আর এতেই আটকে আছে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ। এ নিয়োগ দ্রুত দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

নিয়োগ প্রার্থীরা জানিয়েছেন, আমাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজও শেষ হয়ে গেছে। প্রথমে ৪ থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছিল। কিন্তু ১ জুলাই থেকে সারাদেশে লকডাউন শুরু হলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। দীর্ঘ জল্পনা-কল্পনার পরে আবারও স্বাস্থ্য পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয় ১ থেকে ৯ আগস্ট পর্যন্ত। সে সময়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে।

নিয়োগ প্রার্থী এক সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থী বলেন, গত তিন বছর আগে ২০১৮ সালে এ সার্কুলার হয়েছিল। একটি নিয়োগ কার্যক্রম তিন বছর ধরে চলছে। এ নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর দীর্ঘ ১১ মাস পার হতে চলেছে। তবুও নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ার সুপারিশকৃত শিক্ষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা।

সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানিয়েছেন, প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ও স্বাস্থ্য পরীক্ষায় টানা ১১ মাস সময় গেছে। এটা শেষ করতে আরও কত দিন লাগবে, তা অনিশ্চিত। এতে করে সরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষক সংকট আরও দীর্ঘায়িত হবে। বর্তমানে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দুই হাজার ১৮০টি পদ শূন্য আছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আরও অনেক শিক্ষক অবসরে চলে যাবেন।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) ডা. সৈয়দ ইমামুল হোসেন জানান, সরকারি চাকরিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন আর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগের সুযোগ নেই। মাঠ পর্যায়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ কাজ করতে একটু সময় প্রয়োজন। সেই সময়টাই লাগছে। তবে ভেরিফিকেশন কাজ প্রায় শেষ। শিগগিরই সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগ আদেশ জারি করা হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তথ্য মতে, জাতীয়করণকৃত এবং পুরোনো মিলে দেশে বর্তমানে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৮৭টি। এর মধ্যে পুরোনো ৩৫১টি। এসব প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষকের পদ সাড়ে ১০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে দুই হাজার ১৮০টিই শূন্য।

মাউশির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবসর, মৃত্যু, পদত্যাগসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষকের পদ শূন্য হচ্ছে। এতে শিক্ষক সংকট বাড়ছে। পরবর্তীতে আরও বাড়তে পারে।

উল্লেখ্য, নন-ক্যাডার (দশম গ্রেড) দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। এক বছর পর ২০১৯ সালের ৬ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের নভেম্বরে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলা বিষয়ের ভাইভার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মৌখিক পরীক্ষা। বিভিন্ন বিষয়ের (সাবজেক্ট) ভাইভা চলতে থাকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত। মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। এতে দুই হাজার ১৫৫ জনকে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর প্রায় এক বছর হতে চলেছে। এখনও সুপারিশপ্রাপ্তরা নিয়োগ পায়নি।