‘অনলাইন অ্যাডিকশন আমাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল’

স্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক উৎপল বর্মন
স্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক উৎপল বর্মন

ভারতের কোচবিহার শহরের একটি বাড়ি থেকে উৎপল বর্মন (৩৬) নামের এক কলেজ শিক্ষকের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। হেডফোনের তার দিয়ে হাত বাঁধা, ঘরের সিলিংয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। ওই বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় তার স্ত্রী ও ছেলের মরদেহ।

বুধবার (১৭ নভেম্বর) শহরের গুঞ্জবাড়ি এলাকার একটি ভাড়াবাড়ি থেকে উদ্ধার হয় উৎপল বর্মন (৩৬), স্ত্রী অঞ্জনা (৩২) ও শিশুসন্তানের দেহ। সঙ্গে উদ্ধার হয় ১২ পাতার একটি দীর্ঘ সুইসাইড নোটও।

পুলিশের ধারণা, প্রথমে স্ত্রী, তারপরে ছেলেকে খুন করে তিনি আত্মঘাতী হয়েছিলেন। পুলিশের সন্দেহ অনলাইনে তিনি বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ নিতেন। পাশাপাশি তিনি অনলাইনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে টাকা লাগাতেন। আর তার জেরে ক্রমেই ঋণে ডুবে যাচ্ছিলেন তিনি।

এর সঙ্গেই ঋণদানকারী সংস্থার তরফে তার পরিচিতদের এসএমএস করে ওই শিক্ষককে পরোক্ষ অপদস্থ করা হত বলেও অভিযোগ। সম্ভবত তারই পরিণতিতে এই ভয়াবহ ঘটনা। তবে তার সুইসাইড নোট পড়ে চোখে পানি এসে যায় পুলিশ কর্তাকর্তাদেরও।

সুইসাইড নোটে লেখা আছে, ‌‘আমি আগে খুব ভালোই ছিলাম। অনলাইন অ্যাডিকশন আমাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল।’

এরপরই তার জীবনের নানা কথা উল্লেখ করা হয়েছে ১২ পাতার নোটে। স্ত্রী ও পুত্রকে কীভাবে গলায় তার পেঁচিয়ে খুন করা হয়েছে সেকথাও উল্লেখ করা রয়েছে নোটে। এক বন্ধুর কথা উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, ‘এই জন্মে তোর ঋণ শোধ করতে পারলাম না। পরের জন্মে করব।’ খুনের আগে স্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথাও বলেন তিনি। এরপর কার্যত তার সম্মতিতে স্ত্রীকে খুন!

পাশের ঘরে মোবাইলে গেম খেলছিল ছেলে। তাকে ডেকে নেন উৎপল। ছেলে জিজ্ঞাসা করে, মাকে মারলে কেন? ছেলে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমাকে মারছ কেন? বাবা নোটে লিখেছেন, ‘ভেবেছিলাম ছেলেকে মারব না, কিন্তু বাবা মা ছাড়া ও একা কোথায় ঘুরে ঘুরে বেড়াবে।’ এরপরই তিনি লিখেছেন, ‘আমি চললাম।’