প্রস্তুতিও শেষ হয়নি, সময়ও নেই এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের

প্রস্তুতিও শেষ হয়নি, সময়ও নেই এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের
প্রস্তুতিও শেষ হয়নি, সময়ও নেই এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের

‘করোনা মহামারির কারণে ৫৪৩ দিন বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের স্কুল-কলেজগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ৭২ দিনের মাথায় শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। কিন্তু পরীক্ষা শুরু হতে চললেও আমাদের পরীক্ষার্থীদের তেমন কোন প্রস্তুতি নেই। যে সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হবে সেটিও এখনো শেষ হয়নি। এ প্রস্তুতিতে ভালো ফলাফল করা সম্ভব নয়।’

এভাবেই দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে কথাগুলো বলছিলেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার চলনবিলের প্রত্যন্ত অঞ্চল সোনাপুর গ্রামের মৌলি ইসলাম। উপজেলার আফরোজ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী মৌলি চলতি বছরে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীয় অংশ নেবেন।  

মৌলি জানান, তাদের কলেজ খোলার পর সরকারি ছুটিসহ শুক্রবার মিলে মোট ২২ দিন ক্লাস বন্ধ ছিল। পরীক্ষার প্রায় ১৮ দিন আগে গত ১৩ নভেম্বর শেষ ক্লাস হয়েছে। সে হিসাবে মোট ৪০ দিনও ক্লাস হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এর মধ্যে ৩২ দিনে ২টা করে মোট ৬৪টি ক্লাস হয়েছে। কিন্তু কলেজে পরীক্ষা থাকার কারণে ৮ দিন হয়নি নির্ধারিত সেই ২টি করে ক্লাস।  

অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন চায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা

পরীক্ষা যত নিকটে আসছে ততোই হতাশা বাড়ছে মৌলির। তিনি বলেন, আসলে আমাদের শিক্ষাজীবন এখন হুমকির মুখে। দেশে এত শিক্ষিত মানুষ আছে, অথচ কেউ আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না। কলেজ খোলার পরে অতি স্বল্প সময়ে আমাদের অ্যাসাইনমেন্ট করতে দিলো। সঙ্গে প্র্যাকটিক্যালও করতে হয়েছে। এর আগে করোনার বন্ধেও আমাদের পড়াশুনা হয়নি। সবমিলিয়ে এখন আমাদের হাতে একদমই সময় নেই, আবার প্রস্তুতিও শেষ হয়নি। 

শুধু মৌলি না, একই ধরনের অভিযোগ জানিয়েছেন এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অন্য অনেক শিক্ষার্থীও। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী প্রতীকের অভিযোগ, তাদের ওপর প্রস্তুতি বিহীন পরীক্ষা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

প্রতীক বলেন, আমাদেরকে বলা হয়েছিলো কলেজ খুলে ৫-৬ মাস শর্ট সিলেবাসের ওপর ক্লাস করিয়ে তারপর পরীক্ষা নেওয়া হবে। যদি এটা সম্ভব না হয় তাহলে বলা হয়েছিল অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। কিন্তু এখন আমাদের ওপর প্রস্তুতি বিহীন পরীক্ষা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এ অবস্থায় তাদের পরীক্ষা পরিবর্তে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে এবং সাবজেক্ট ম্যাপিং-এর মাধ্যমে সুষ্ঠু মূল্যায়ন চান প্রতীক।

আলহাজ্ব উত্তর কাট্টলি মোস্তফা হাকিম কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়া হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ বন্ধের কারণে আমাদের পড়ালেখার প্রস্তুতি সঠিকভাবে হয়ে উঠেনি। তার উপরে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়নের কথা বলে আমাদের দুই মাস সময় নষ্ট করা হয়েছে। 

নরসিংদী সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী শেখ মো. সোহান বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা হবে কি হবেনা এই চিন্তার ভেতর দিয়ে আমাদের কারোই পড়াশুনা তেমন হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী ম্যাম বলেছিলেন, সিলেবাস কমপ্লিট না করে পরীক্ষা নেবেন না। সে অনুযায়ী আমরা পুরো সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। তাই পড়াশুনার গতিও ছিল স্বাভাবিক।

সোহান বলেন, কিন্তু এর মাঝেই পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হল। এখন আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ করার প্রয়োজনীয় সময় হাতে নেই। আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সিলেবাস শেষ করে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।