‘সেকেন্ড টাইম’ রাখার বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত: যবিপ্রবি উপাচার্য

সেকেন্ড টাইম
অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও ভর্তি পরীক্ষার্থী

আগামী বছরের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ‘সেকেন্ড টাইম’ রাখা না রাখার বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা যদি দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দাবি করেন তাহলে বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সোমবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি গুচ্ছে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দাবি করে তাহলে তাদের বিষয়টি নিয়ে ভাবতেই হবে। এখনো ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা আবেদন করলে আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। সেখানে সব উপাচার্য সেকেন্ড টাইম রাখার বিষয়ে মত দিলে সেকেন্ড টাইম রাখা হবে।

এদিকে গুচ্ছভুক্ত ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সেকেন্ড টাইম বহালের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হলে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, গুচ্ছ কমিটি শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের উপর একের পর এক ‘অযৌক্তিক’ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে আসছে। গুচ্ছের আর কোন প্রহসন মেনে নেওয়া হবে না। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হলেও সিলেকশনের নামে তাদের সাথে প্রহসন করা হয়েছে। এই অবস্থায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের গুচ্ছে সেকেন্ড টাইম না রাখার সিদ্ধান্ত অযৌাক্ত।

তাদের দাবি, বিশ্বের অন্যান্য দেশে দুই থেকে তিনবার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেয়া হয়। বিসিএসে ৫ বার পরীক্ষা দেয়া যায়। গুচ্ছের আগে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকেন্ড টাইম ছিল। তাহলে এখন কেন গুচ্ছে সেকেন্ড টাইম থাকবে না। গুচ্ছের এমন হটকারী সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে শিক্ষার্থী বান্ধন সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি তাদের।

এ প্রসঙ্গে মিফতাহুল জান্নাত নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রত্যেকটা শিক্ষার্থী চায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে নিজের জীবনটাকে রঙিন করতে, ভবিষ্যৎ টাকে উজ্জ্বল করতে। সেই লক্ষ্যে লাখ লাখ শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি যুদ্ধে নেমে পরে। সবারই একটা লক্ষ্য থাকে কাঙ্খিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের সাবজেক্ট নিয়ে পড়া। যখন সে চান্স পায় না তখন তার শেষ ভরসা থাকে যেকোনো একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া। সেই প্রেক্ষিতে গতবছর পর্যন্ত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার্থীরা দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই বছর গুচ্ছ হলো, সেকেন্ড টাইম থাকলো কিন্তু সামনের বার থেকে থাকবে না কেন? গুচ্ছের এক পরীক্ষাতে যেমন অনেকে ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পেরেছে তেমনি অনেকের খারাপও হয়েছে। তার উপর গুচ্ছে যদি সেকেন্ড টাইম না থাকে তাহলে আমরা কোথায় যাব? গুচ্ছই হচ্ছে আমাদের শেষ ভরসা। এখন গুচ্ছ যদি আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে এ লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কি হবে! এমনিতেই অটোপাসের কারণে ন্যাশনালেও চান্স পাওয়া যাচ্ছে না। যদি গুচ্ছ থাকে তবে অবশ্যই সেকেন্ড টাইম রাখতে হবে। নয়তো গুচ্ছ পরীক্ষা বাতিল হোক।

রাইসুল নামে এক ভর্তিচ্ছু জানান, অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থতার কারণে ভালোভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেনি। অধিকাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষা নামক যুদ্ধে উত্তীর্ণ হতে পারিনি। তাই আমরা আবারও এক বছর লস দিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিতে চাই। কিন্তু ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে আাগামি বছর সেকেন্ড টাইম থাকছে না। আমাদের সময়ই কেন এই বৈষম্য? আমরা এটা মানি না আমরা দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিতে চাই। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩-৫ বার পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ রয়েছে তাহলে আমাদের কেন সুবিধা দেয়া হবে না। বলা আছে একবার না পারিলে দেখো শতবার, কিন্তু শতবার তো দূরে থাক সেখানে দ্বিতীয়বার ও সুযোগটি কেরে নেয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের অধিকার চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার জন্য দ্বিতীয়বার সুযোগ চাই।

মারজান বিনতে মুরাদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, একটা শিক্ষার্থীকে কি দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়া অন্যায়? উন্নত বিশ্বের শিক্ষার্থীদের তো একের অধিক সুযোগ দেওয়া হয়। তবে, কেন আমাদের দেশে সেই নিয়ম থাকবে না? তাহলে কবি কালী প্রসন্ন ঘোষ কেন বলেছিলেন- ‘‘একবার না পারিলে দেখ শতবার। পারিবে না বলে মুখ করিও না ভার, ও কথাটি মুখে যেন না শুনি তোমার। তবে কেন ‘পারিব না’ বল বার বার’’? তো আমাদের কেন দ্বিতীয় সুযোগ তারা দিতে রাজি নন।