গুচ্ছ পরীক্ষায় ‘সেকেন্ড টাইম’ না রাখার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

গুচ্ছ পরীক্ষায় ‘সেকেন্ড টাইম’ না রাখার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
গুচ্ছ পরীক্ষায় ‘সেকেন্ড টাইম’ না রাখার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

করোনার কারণে এবছর সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষা কার্যক্রম ঠিকভাবে চালিয়ে নিতে পারেননি। অভাবের তাড়নায় অনেকে কাজে জড়িয়ে পড়েছে। এতে তাদের পড়াশোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার ওপর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো লাগামহীন আবেদন ফি নিচ্ছে। সবমিলিয়ে আমাদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। আমাদের একটাই দাবি গুচ্ছ ভর্রি পরীক্ষায় সেকেন্ড টাইম পুনর্বহাল করতে হবে।

এভাবেই হতাশায় এবং ক্ষোভে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার সুযোগ রাখার কথা বলছেন ফরিদপুরের সরকারি ইয়াছিন কলেজের শিক্ষার্থী শেখ সাবাব রহমান সজিব।

শিক্ষার্থীদের নানা সুযোগ-সুবিধার আশ্বাস দিয়ে দেশের ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। কিন্তু গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার সুযোগ না রাখায় হতাশ শিক্ষার্থীরা। অনেকে এবারে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার কারণে সুযোগ বঞ্চিত হয়েছেন। মূলত এসব শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেই সেকেন্ড টাইম সুযোগের দাবি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে ফেসবুকে গ্রুপ খুলে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, গুচ্ছ পরীক্ষায় অনেকের ফলাফলে গড়মিল হয়েছে। তাই অনেক পরীক্ষার্থী তাদের যোগ্যতা থাকার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাননি। তাছাড়া গুচ্ছ পদ্ধতি যেহেতু এইবারই প্রথম তাই শিক্ষার্থীদের অন্তত আরেকটিবার সুযোগ দেওয়া উচিৎ৷

তারা বলছেন, এবার করোনা মহামারীতে শিক্ষার্থীরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকে পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কাজকর্মে জড়িয়ে যাওয়ায় ঠিকভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি।

দ্বিতীয়বার সুযোগ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী রাশিকা রাব্বা ইকরা বলেন, গুচ্ছে ভর্তি পদ্ধতি এবারই প্রথম। ফলে আমরা প্রশ্নের প্যাটার্ন বুঝে উঠতে পারিনি। হঠাৎ করেই গুচ্ছে সাধারণ জ্ঞান সম্পূর্ণ তুলে দিয়ে ২৫ নম্বরের আইসিটি যুক্ত করা হলো। এখন দেশে মানসম্পন্ন আইসিটি শিক্ষার ব্যবস্থা বিদ্যমান নেই। ফলে অকস্মাৎ এত নম্বরের আইসিটি যুক্ত করায় আমাদের বুঝে উঠতে সমস্যা হয়েছে। তাই অন্তত আরেকটিবার হলেও আমরা পরীক্ষায় অংশ নিতে চাই।

এদিকে মেডিকেলে দ্বিতীয়বার সুযোগ থাকলেও গুচ্ছে কেন রাখা হচ্ছে না- এ বিষয়েও অনেক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মহিদুল ইসলাম দাউদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, যেখানে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় এখনও সেকেন্ড টাইম বহাল রেখেছে সেখানে গুচ্ছতে কেন নয়? এবারের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অনেক ত্রুটি ছিল। তাই আমরা আর একবার হলেও পরীক্ষার সুযোগ চাচ্ছি।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, দ্বিতীয়বার সুযোগ থাকবে কি থাকবে না সেটা এখনো বলার সময় আসেনি। এখন ভর্তি কার্যক্রম চলছে। শিক্ষার্থীরা আগে ভর্তি হোক। পরবর্তীতে সেকেন্ড টাইম রাখা কিংবা না রাখার বিষয়ে ভাবা যাবে।

করোনো কারণে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারেনি এবং গুচ্ছু ভর্তি পরীক্ষা প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত হওয়ায় অনেকেই প্রশ্ন বুঝে উঠতে পারেনি। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় কি দ্বিতীয়বার সুযোগ রাখা যায় কিনা? এমন প্রশ্নে জবি উপাচার্য বলেন, ‘‘যদি রাখা হয় তাহলে অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের মিটিং হবে তখন এ বিষয়ে আলোচনা হবে। এখনো পর্যন্ত আমার কাছে কোন তথ্য নাই।’’

তবে অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক ‘গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সেকেন্ড টাইম রাখা কিংবা না রাখা’ নিয়ে এখনো অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত হয়নি বললেও গুচ্ছ পরীক্ষায় দ্বিতীয়বার সুযোগ থাকছে না বলেই দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানিয়েছেন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

গুচ্ছ ভর্তি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ উপাচার্য বলেন, ‘‘আগামী বছর থেকে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় আমরা সেকেন্ড টাইমারদের অর্থাৎ পুরাতন ছাত্রদের পরীক্ষা না নেওয়ার কথা ভাবছি।’’ মূলত দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের এ বক্তব্য প্রচারের পর থেকে ভর্তিচ্ছুদের মাঝে এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।