ঢাবির আরেক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা: ১০ মিনিট আগের কথাও ভুলে যেতেন তিনি

ঢাবি
আদনান সাকিব

চাকরি না পাওয়ার আশঙ্কাজনিত হতাশার বলি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আরেক শিক্ষার্থী। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মো. আদনান সাকিবের ঝুলন্ত লাশ রাজধানীর সেগুনবাগিচার একটি আবাসিক হোটেল থেকে বুধবার রাতে উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশের পাশে পাওয়া গেছে একটি সুইসাইড নোট। এছাড়াও আদনান সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানা যায়। ১০ মিনিট আগের জিনিসও তিনি মনে রাখতে পারতেন না।

আদনান ঢাবির ২০১৪-১৫ সেশনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তার স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়াশোনা চলছিল। তিনি ঢাবির শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে থাকতেন।

তার রুমমেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মো. সাইফুল ইসলাম জানান, আদনান হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। তিনি সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ১০ মিনিট আগে কী করেছিলেন সেটাও মনে রাখতে পারতেন না। তিনি পড়ালেখাও করতে পারতেন না। এজন্য চাকরি পাওয়া নিয়ে হতাশা ছিল তার। 

সাইফুল বলেন, আমরা তাকে অনেক বুঝিয়েছি। দুই বছর আগে গার্হস্থ্য অর্থনীতির ছাত্রী নুসরাত আফরিনকে বিয়ে করে সে। তবে তার সাথে আদনানের কোনো সমস্যা দেখিনি। তার একটাই চিন্তা ছিল, ভালো চাকরি। চাকরি পাবে না এই হতাশায় সে আত্নহত্যা করে থাকতে পারে বলে আমাদের ধারণা।

আদনানের বড় ভাই মো. মাহে আলম বলেন, আমরা দুই ভাই, তিন বোন। সে ছিল সবার ছোট। তবে সে আত্মহত্যা করবে, ভাবতে পারিনি।

শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আজিজুর রহমান বলেন, আদনান ভালো ছাত্র ছিল। গত পরশু সে নিখোঁজ হয়। গতকাল আমরা তার স্ত্রীকে নিয়ে থানায় জিডি করি। পরে খবর পেলাম আমাদের প্রিয় ছাত্রের লাশ আবাসিক হোটেলে ঝুলছে।  

এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পলাশ সাহা বলেন, গতকাল রাতে সাকিবের নিখোঁজের বিষয়ে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার স্ত্রী। এরপর তার ফোন নাম্বার ট্র্যাকিং করে লোকেশন পাওয়া যায় সেগুনবাগিচা কর্ণফুলী আবাসিক হোটেল। রাত দেড়টার দিকে হোটেলে গিয়ে রেজিস্ট্রেশনে তার নাম দেখা যায়। তখন হোটেলটির দ্বিতীয় তলায় ১০৭ নম্বর রুমে গিয়ে তাকে ডাকাডাকি করা হলেও কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে রুমের দরজা ভাঙা হয়। ভিতরে ঢুকে দেখা যায়, ফ্যানের সাথে নাইলনের রশি পেঁচিয়ে গলায় ফাঁসি লাগিয়ে ঝুলছে সে। তখন সেখান থেকে মৃতদেহ নামিয়ে মর্গে পাঠানো হয়।  

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, আদনান একটি সুইসাইড নোট লিখে গেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন- তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি তিনি হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছেন।