সাম্প্রদায়িক হামলা: ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাবি শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি স্থগিত

করোনা
ঢাবি শিক্ষার্থীরা

দেশের বিভিন্ন স্থানে শারদীয় পূজামণ্ডপ, মন্দিরসহ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তাদের তিন দফা দাবি আদায়ে সরকারকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে।

আজ বুধবার (২০ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের তৎপরতার সন্তুষ্ট হয়ে দাবি আদায়ের জন্য এই সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা। দাবি আদায় না হলে ১ নভেম্বর থেকে শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকদের সমন্বয়ে দুর্বার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনের মুখপাত্র জয়দ্বীপ দত্ত।

আন্দোলনের মুখপাত্র জয়দীপ দত্ত বলেন, আমরা সরকারের চলমান যে গ্রেফতারি পরোয়ানা এবং যে ব্যবস্থা সেটার ওপর আস্থা রেখে পাশাপাশি জনদুর্ভোগ কমাতে আপাতত আমাদের অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করছি। কিন্তু আমাদের বিভিন্ন অনলাইন অফলাইনে যে আন্দোলন বা সামাজিক আন্দোলন সেটা আমরা অব্যাহত রাখছি। আমরা আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রম আমরা বিভিন্নভাবে অবজারভেশন করবো যে সরকার আসলে কি ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা বলেছি যে সরকারের পক্ষ থেকে যেন কোনো নির্দেশনা বা আশ্বাস দেওয়া হয়। একটি সংগঠন থেকে ইতোমধ্যে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে এবং আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছি যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতোমধ্যে এই বিষয়ে মিডিয়ার মাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন। এবং ইতোমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে এবং অনেকে গ্রেফতার হয়েছে।

এর আগে গত সোমবার (১৮ অক্টোবর) ঘটনার প্রতিবাদে তারা রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে আন্দোলনকারীরা সেদিন ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে প্রায় পৌনে চার ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নেন।

এরপর দিন ১৯ অক্টোবর মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। সে সমাবেশে তারা তাদের দাবিগুলোকে ৭ দফার পরিবর্তে  ৩ দফায় রূপান্তর করে। তাদের দাবিগুলো হলো :

> দোষীদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে মাধ্যমে বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শান্তি প্রদান করতে হবে।

> ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির, বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংস্কারে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং হামলায় আহত ও নিহতদের পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করা।

> সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু যন্ত্রণালয় গঠন এবং হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে ফাউন্ডেশনে উন্নীত করে জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান করা।

আজ সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে আন্দোলনের সমন্বয়ক ও জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের সদ্য সাবেক সাহিত্য সম্পাদক জয়দ্বীপ দত্ত বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পাকিস্তানি ভাবাধারাপুষ্ট মৌলবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, নির্যাতন, লুট এবং অরাজকতা সৃষ্টি করেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ অক্টোবর শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমীর দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট এবং পরবর্তীতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলা, লুট ও হত্যা প্রতিহত করতে প্রশাসন কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারেনা। সারাদেশে এখনও বিভিন্ন জায়গায় হামলার পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা চলছে, ফলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা অত্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

জয়দীপ আরো বলেন, সরকার ইতিমধ্যে সম্প্রতি বজায় রাখতে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা আশাবাদী, সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবে। তাই জনদুর্ভোগ কমাতে আমরা আপাতত আমাদের অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করছি। তবে দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা সামাজিক আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এবং ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সরকার আমাদের দাবিগুলো মেনে না নিলে ১ নভেম্বর শিক্ষার্থী ও সাধারণ নাগরিকদের সমন্বয়ে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রণব শর্মা বাঁধন, নীল অনির্বাণ, সুব্রত বিশ্বাস, শিপন সূত্রধর প্রমুখ।