কেমন গৃহশিক্ষক চান অভিভাবকরা?

কেমন গৃহশিক্ষক চান অভিভাবকরা?
ছেলে-মেয়েদের পড়াতে ভালো শিক্ষক খোঁজেন সব অভিভাবকই

করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাইভেট টিউশনির ক্ষেত্রেও লেগেছে বড় ধাক্কা। ক্লাস-পরীক্ষা না থাকার এই সময়ে অভিভাবকদের একটি বড় অংশই খরচ কমাতে তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য রাখা প্রাইভেট টিউটরের সংখ্যা কমিয়েছেন। কেউ কেউ একেবারেই বাদ দিয়েছেন।

দীর্ঘ বন্ধের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলায় আবার কদর বেড়েছে প্রাইভেট টিউটরদের। ছেলে-মেয়েদের সুন্দরভাবে পড়াতে ভালো শিক্ষক খুঁজছেন সব অভিভাবকই। তবে সেই ভালোর মানদণ্ড একেক জনের কাছে আবার একেক রকম। কেউ চান তার সন্তানকে ভালোভাবে বুঝাতে পারবেন এমন কাউকে, আবার কেউ চান কিছুটা কম টাকায় কাউকে। কারও চাহিদা একটু বেশি সময় ধরে পড়ানোর।

অন্যদিকে গৃহশিক্ষকদেরও আছে নানান অভিযোগ-অনুযোগ। করোনার বন্ধে টিউশনি হারিয়েছেন অনেকে। অনেকের কমেছে বেতন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরে তারা এখন ‘শ্রমের’ ন্যায্য মূল্যায়ন চান। এসব নিয়ে অভিভাবক ও গৃহশিক্ষকদের সঙ্গে কথা হয়েছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের। আজ থাকছে অভিভাবকদের পর্ব।

সিদ্ধেশ্বরীর বাসিন্দা নিপা সরকার। ছোট মেয়ে পড়ছে ভিকারুননিসা নুন স্কুল এন্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণিতে। নিজেই সব সময় মেয়েকে পড়াতেন। কিন্তু আগের মত মেয়েকে সময় দিতে না পারায় নতুন টিউটর রেখেছেন তার জন্য। তিনি বলেন, স্কুলে একাধিক শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেক সময় বুঝতে সমস্যা হয়, আবার দেখা যায় লজ্জায় বলতে পারছে না। তাই বাসায় শিক্ষক রাখা। আসলে বাসায় টিউটর রাখার ক্ষেত্রে এটা দেখি যে মেয়ে নিজের সমস্যাটা যাতে টিচারকে বলতে পারে, আর টিচারও সমস্যা বুঝে যাতে তাকে সমাধান দিতে পারে। এক্ষেত্রে যে ভালো বুঝাতে পারে এবং ঠিকমতো মনিটর করতে পারে এমন কাউকেই আমরা টিউটর হিসেবে রাখি।  

শিক্ষার্থীদের ভালো মতো বুঝানোর বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছেন প্রায় সব অভিভাবকই। বাসাবোতে দুই মেয়েকে নিয়ে থাকা শামীমা আক্তারও জানালেন একই কথা। সব সময় গৃহশিক্ষক দিয়ে মেয়েদের পড়ান শামীমা। তিনি বলেন, আমি টিউটর রাখার ক্ষেত্রে সব আগে যেটা ‘প্রায়োরিটি’ দেই সেটা হচ্ছে ভালো মত বুঝাতে পারে। এক্ষেত্রে টিচার কোন ইনস্টিটিটিউশনে পড়ল সেটা ম্যাটার করে না।

নটর ডেম কলেজে পড়ুয়া ছেলের জন্য সব সময় বুয়েট কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এমন কোন টিউটর খোঁজেন ইস্কাটনের বাসিন্দা সরকারী চাকুরিজীবী আলতাফ রহমান। তিনি জানান, আমি ছেলের জন্য সব সময় এমন টিউটর চাই যে আমাকে ছেলেকে যতক্ষণই পড়াবে খুব মনোযোগ দিয়ে যাতে পড়ায়। এর পাশাপাশি তার শিক্ষাগত ব্যাকগ্রাউন্ডও আমরা দেখি। আসলে ছেলে যাতে ভালো করতে পারে এজন্য আমরা চেষ্টা করি একজন ভালো টিউটর তার জন্য রাখতে।

সন্তানরা একাডেমিক পড়াশুনার বাইরেও বাস্তবতা ও জীবন সম্পর্কে যেন জানতে পারে সেটাও চান অভিভাবকরা। তাই তো গৃহশিক্ষক নেয়ার বেলায়ও এই বিষয়ে প্রাধান্য দেন অনেকে। এই যেমন সাভারের এনামুল হক তার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলের জন্য চাইছেন এমনই এক শিক্ষক। তার কথায়, একজন শিক্ষক যিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভালো জ্ঞান রাখেন, ভালো পড়াতে পারেন, পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও জীবন সম্পর্কে ধারণা দেবেন এমন চাই।

তবে পড়ানোর সময় আর টাকা নিয়ে আছে অনেকেরে অভিযোগ। বাসাবোর বাসিন্দা শামীমা আক্তারের মতে, ভালো মত বুঝাতে পারে এমন টিচার পেলে টাকা-পয়সা নিয়ে কোন ঝামেলা হওয়ার কথা না। তিনি বলেন, এলাকাভেদে প্রাইভেট টিউশনির টাকা নিয়ে কিছুটা তারতম্য আছে, তবে অভিভাকরা তাদের সন্তানদের ভালোভাবে পড়ানোর জন্য সেটাকে প্রাধান্য দেন না। তবে কোন কোন প্রাইভেট টিউটর একটু বেশি টাকা চান।

মিরপুরের বাসিন্দা শামছুল হক একটি গার্মেন্টসের সুপারভাইজার। তার ছেলে রূপনগর সরকারি মডেল স্কুল ও কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। প্রাইভেট শিক্ষকরা অনেক বেশি টাকা দাবি করেন বলে তার অভিযোগ। শামছুল হক বলেন, এক ঘন্টা পড়ানোর কথা থাকলেও কম সময় পড়িয়ে চলে যান এমন ঘটনা ঘটেছে আমার ছেলের বেলায়। পরে তাকে বাদ দিতে হয়েছে। 

আগামী পর্বে পড়ুন: গৃহশিক্ষকদের কথা।