‘কীরে, কেমন আছিস?’

‘কীরে, কেমন আছিস?’
ডান থেকে- সিরাজুল আলম খান, মহিউদ্দিন আহমেদ ও মাহবুব তালুকদার

ঘরে ঢুকেই দু’জন দু’জনের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। তৈরি হলো এক আবেগঘন পরিবেশ। এরপর বললেন, ‘কীরে, কেমন আছিস?’ বাংলাদেশের জন্ম ও বিকাশপর্বের গুরুত্বপূর্ণ দুই কুশীলব সিরাজুল আলম খানের সঙ্গে বন্ধু মাহবুব তালুকদারের দীর্ঘ ৪৫ বছর পরে হওয়া সাক্ষাতের প্রথম চিত্রটা ছিল এমনই।

গতকাল বুধবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিরাজুল আলম খানের বাসায় হয় এই সাক্ষাত। আর এই সাক্ষাতের অনুঘটক ছিলেন আরেক প্রখ্যাত লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ।

‘রাজনীতির দাদাভাই’ খ্যাত স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, দার্শনিক ও লেখক সিরাজুল আলম খানকে বলা হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের ‘প্রতিনায়ক’। তার এককালে রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ও বন্ধু মাহবুব তালুকদার হলেন আধুনিক বাংলা সাহিত্যের একজন প্রখ্যাত কবি ও শিশু সাহিত্যিক এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনার।

প্রখ্যাত এই দুই বন্ধুর আবেগঘন এই দেখা হওয়ার বিষয়টি জানা যায় ওই সাক্ষাতের কারিগর মহিউদ্দিন আহমেদ আজ বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) ফেসবুকে একটি পোস্ট দিলে। ফেসবুকে তার ওই পোস্ট শেয়ারের পরে তা উচ্ছ্বাসে ভাসায় নেটিজেনদেরও।

ওই ফেসবুক পোস্টে দেয়া মহিউদ্দিন আহমেদ লেখাটি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-

‘১৯৬২ সাল। ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, সেক্রেটারি শেখ ফজলুল হক মনি, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি সিরাজুল আলম খান, কালচারাল সেক্রেটারি মাহবুব তালুকদার। মাহবুব তালুকদার আবার ইত্তেফাকের বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার এবং ছাত্রলীগের একুশে সংকলনের সম্পাদক। তাঁর সঙ্গে দুজনের ‘তুই’ সম্পর্ক, শেখ মনি আর সিরাজুল আলম খান। ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাঁরা।

শেখ মনি আর নেই। মাহবুব আর সিরাজ পরস্পরের সঙ্গে দেখা করার ও কথা বলার আগ্রহ দেখালেন। আমি হলাম অনুঘটক।

কাল বিকেলে মাহবুব তালুকদার আমার বাসায় এসে আমাকে তুলে নিয়ে গেলেন সিরাজুল আলম খানের কাছে। বন্ধুর জন্য বই আর ফল নিলেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ও কি মিষ্টি খায়? বললাম, সব খায়। ডায়াবেটিস নেই। পথে পড়ল বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডার। বন্ধুর জন্য কিনলেন সন্দেশ।

সকালেই খবর দিয়েছিলাম, শেষ বিকেলে আমরা দু’জন আসব। ঘরে ঢুকেই দু’জন দু’জনের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ। ‘কীরে, কেমন আছিস’ বলে কথা শুরু। দীর্ঘ ৪৫ বছর পর দেখা হলো দু’জনার। তৈরি হলো এক আবেগঘন পরিবেশ। দু’জন দু’জনের মুখে সন্দেশ তুলে দিলেন। তারপর ঘণ্টাখানেক আড্ডা, কফি পান, স্মৃতিচারণ। ফেলে আসা দিনগুলোর কথা- তাঁদের বন্ধুদের আর কে কে বেঁচে আছেন, কোথায় আছেন। আমি একটা অসম্ভব সুন্দর সন্ধ্যার সাক্ষী হয়ে থাকলাম।

জানি না, তাঁদের দু’জনের আবার দেখা হবে কি না। দু’জনেই আশি পেরিয়েছেন। ভগ্ন স্বাস্থ্য। ছলছল চোখে পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নিলেন তাঁরা।’