খুলনায় বাল্যবিয়ের শিকার ৩ হাজার ছাত্রী

অপরাধ
বাল্যবিয়ে

মহামারি করোনার কারণে গত দেড় বছরে খুলনা জেলায় ৩ হাজারের বেশি ছাত্রীর বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। যাদের অধিকাংশ আর স্কুলে আসে না। নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন ও বয়স বাড়িয়ে এসব বিয়ে হয়ে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ অবস্থায় দেশের বাল্যবিয়ে রোধে আইন আরও কঠোর হওয়া উচিত বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) খুলনার রূপসা উপজেলার বেলফুলিয়া ইসলামিয়া স্কুলের নবম শ্রেণিতে ছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১২২ জন। এর মধ্যে বিয়ে হয়ে গেছে ৯ জনের। এসব শিক্ষার্থী এখন বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে সংসার সামলাতে ব্যস্ত।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র থেকে জানা যায়, মহামারিকালীন স্কুল বন্ধের সময় সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির তিন হাজারেরও বেশি ছাত্রীর বাল্যবিয়ে শিকার হয়েছে। সর্বাধিক ৭৫১টি বাল্যবিয়ে হয়েছে ডুমুরিয়া উপজেলায়। আর উপজেলার রূপসার বেলফুলিয়া ইসলামিয়া স্কুলের ৭০ জনের বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। জেলার মধ্যে প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বোচ্চ বাল্যবিয়ের শিকার এই প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়া কয়রা উপজেলাতে ৬৮১টি, পাইকগাছায় ৪৮৩টি, ফুলতলায় ২৪০টি, মহানগরীতে ১৫৮টি স্কুলশিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে হয়েছে বলে জানা গেছে। এদের বেশিরভাগই এখন আর স্কুলে আসছেন না।

স্কুলের সহপাঠীদের মাধ্যমে জানা যায়, স্কুলে অনুপস্থিত অনেকের বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ে হওয়ায় পরিবার থেকে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে না। এ ধরনের বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানাচ্ছি। তাদের বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল না, পড়াশোনা করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু পরিবারের চাপের মুখে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে।

বিয়ে হয়ে গেছে এমন শিক্ষর্থীদের স্কুলে ফেরানোর চেষ্টা করছেন শিক্ষকরা। এব্যাপরে রূপসা বেলফুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান, বাল্যবিয়ের শিকার শিক্ষার্থীদের পরিবারকে জানিয়েছি, ছাত্রীদের স্কুলে বিনা বেতনে পড়াব। শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠায়ে দিন। তারপর কিছু ছাত্রী স্কুল আসতে শুরু করেছে। তারা নিয়মিত ক্লাসও করছে।

বাল্যবিয়ের জন্য নিজেদের দায় অস্বীকার করে নোটারি পাবলিকের সুযোগ থাকাকেই এ জন্য দায়ী করছেন বিবাহ রেজিস্টাররা।

খুলনা মুসলিম নিকাহ রেজিস্টার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া আকন্দ বলেছেন, বাল্যবিয়ের জন্য আমাদের বিবাহ রেজিস্টাররা দায়ী নয়। আমাদের কাজ লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণ করা। কিন্তু নোটারি পাবলিক কিংবা হলফনামা যারা করছেন, তাদের কিন্তু সংরক্ষণ করার সুযোগ নেই। এফিডেভিট যেদিন বন্ধ হবে, সেদিন বাল্যবিয়ে এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।

বাল্যবিয়ের আইন আরও কঠোর হওয়া উচিত বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির জানান, একজন শিক্ষার্থী যখন স্কুলে পড়ে, তখন তার বয়স ১৮ হয় না। সেখানে নোটারি পাবলিক যদি বলেও এটা কখনোই সম্ভব হবে না। ফলে আগে থেকে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।