বেরোবির ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী  

নোংরা রাজনীতি আর সেশনজট মুক্ত ক্যাম্পাস চান ছাত্রনেতারা

বেরোবির ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী  
বিশ্ববিদ্যালয়টির সমস্যা, সম্ভাবনা এবং প্রত্যাশা নিয়ে কথা বলেন ছাত্র নেতৃবৃন্দ

উত্তরাঞ্চলের গণমানুষের দীর্ঘপ্রতিক্ষার পর অর্জিত বিদ্যাপিঠ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। নানান চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ১৩টি বছর পার করে ১৪তম বছরে পদার্পন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা সংকটের মধ্য দিয়ে শিক্ষা ও গবেষণার কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। রয়েছে অনেক সম্ভাবনা আর সাফল্যের গল্পও।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। আলাপকালে তারা বিশ্ববিদ্যালয়টির সমস্যা, সম্ভাবনা এবং প্রত্যাশা নিয়ে নিজেদের ভাবনা তুলে ধরেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে। একই সাথে নতুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশিদের কাছে আগামীর জন্য প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন।

নোংরা রাজনীতি মুক্ত, সেশনজট মুক্ত, শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যাশায় বেরোবির ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করতে চান বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন পিস ক্যাফের প্রেসিডেন্ট উম্মে কুলছুম মিতু। তিনি বলেন, অতীতের সব গ্লানি মুছে এগিয়ে যাক প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়। উত্তরবঙ্গের অক্সফোর্ড হিসেবে বিশ্বের দরবারে বেরোবি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে গড়ে উঠবে এমনটাই প্রত্যাশা করি।

শুধু জাঁকজমকপূর্ণভাবে দিবস পালন করা নয়, বরং প্রযুক্তি, শিক্ষা ও গবেষণায় বেরোবি এগিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশার কথা জানান মিতু।

বিশ্ববিদ্যালয়টির ডিবেট ফোরামের সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস তমা চান বেরোবিকে নিয়ে বিগত দিনে হওয়া নেতিবাচক সব প্রচারণা ভুলে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখতে। তার কথায়, অনেকগুলো বাধা-বিপত্তি আর নেতিবাচক বিষয় থাকলেও আমদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে বেরোবির শিক্ষার্থীদের চোখে আছে স্বপ্ন।

গত চার বছরে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে অনেক নেতিবাচক কথার ছড়াছড়ি ছিল জানিয়ে তমা বলেন, নেতিবাচক কথা ছাড়াও যে ভালো কিছু আছে, ইতিবাচক কিছু আছে সেটা প্রমাণ করা এখন সময়ের দাবি। নতুন উপাচার্য আর নতুন প্রশাসনে আমরা আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি।

উপাচার্যের কাছে তার প্রত্যাশা, অতীতের সমস্ত নোংরা ধুয়ে সেশনজট মুক্ত, গবেষণা নির্ভর, বৈষম্য মুক্ত একটি বিশ্ববিদ্যালয়।

তমা বলেন, আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে দেখতে চাই বেরোবিকে, বাস্তবিক অর্থে যা বিগত বছরগুলোতে শুধু কথায় শুনে এসেছি। সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট দূর করার ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। সমস্ত অনিয়ম-দুর্নীতিকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাক প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়।

অন্যদিকে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নির্মাণে বেরোবিতে সেশনজট নিরসনের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাবেক সভাপতি যুগেশ ত্রিপুরা। তিনি বলেন, উপাচার্যের কাছে প্রত্যাশা, তিনি সেশনজট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন।

যুগেশ ত্রিপুরা সুষ্ঠু সাংস্কৃতিক বিকাশে বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি-অডিটরিয়াম নির্মাণসহ দীর্ঘদিন ধরে চলমান অবকাঠামোগত কাজ দ্রুত শেষ করার দাবিও জানান।

বিগত ১৩ বছর ধরে চলে আসা ধারায় আর দেখতে চান না বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মোবাশ্বের আহমেদ। তার কথায়, গত ১৩ বছর যেরকম চলেছে সেরকমই আরও ১৩ টি বছর চলুক, কোনভাবেই তা চাই না। আগামীর বছরগুলোতে বেরোবি যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে, শিক্ষার মান উন্নয়নে, গবেষণায়, সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বেরোবি যেন আত্মপ্রকাশ করে সেই কামনা করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগেরও দাবি সেশনজট নিরসন করা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার বেরোবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের কাছে আমাদের প্রধান দাবি ছিল সেশনজট নিরসন করা। উপাচার্য মহোদয় এ বিষয়ে বেশ আন্তরিক, এজন্য আমরা তাকে অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার এতদিনেও প্রধান ফটক নির্মাণ না হওয়ায় দুঃখ পাওয়ার কথাও জানালেন ছাত্রলীগ নেতা পোমেল বড়ুয়া। তিনি বলেন, আমাদের অন্যতম দাবি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অতীতের সৃষ্ট জটিলতাগুলো সমাধান হবে বলে আশা করেন পোমেল। জটিলতা সমাধানের এ কাজটি প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলেও পোমেল আশা করেন, শিক্ষার্থীদের সকল প্রত্যাশা পূরণ হয়ে শতভাগ শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হবে বেরোবি।