তিন মাস শিক্ষার্থীশূন্য একাদশ শ্রেণি

একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা

মহামারি করোনার কারণে এ বছর এখনো এসএসসি পরীক্ষা যথা সময় নেওয়া সম্ভব হয়নি। আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। এদিকে গত জুলাই মাসে একাদশের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার মাধ্যমে দ্বাদশ শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। এরপর থেকে একাদশ শ্রেণি রয়েছে শিক্ষার্থীশূন্য অবস্থায়। তিন মাস পার হয়েছে, এ অবস্থা থাকতে পরে আরও কমপক্ষে তিন মাস। ফলে ছয় মাস শিক্ষার্থীশূন্য থাকতে পারে একাদশ শ্রেণি।

একাদশ শ্রেণি শিক্ষার্থীশূন্য বিষয় জানতে চাইলে প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, একাদশ শ্রেণিতে যে তিন মাস ধরে শিক্ষার্থী নেই এটা আমি প্রথম শুনলাম। তবে মহামারি করোনা একটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো ঘটনা। এর ফলে অনেক জীবন থেমে গেছে। এরকম মহামারি আগে কেউ দেখেনি। এত দীর্ঘ সময় আগে কখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকেনি। যে কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয়, যেভাবে শিল্প ও কলকারখানাকে দেওয়া হচ্ছে, শিক্ষাকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষায় পিছিয়ে গেলে শিল্প ও কলকারখানায়ও পিছিয়ে যাবে। আর শিক্ষার্থী না থাকলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতার ব্যাপারটিও আটকে যাবে। সরকারকে শিক্ষার বিষয় আরো দায়িত্বশীল হতে হবে।

এ বিষয় খুলনা আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার জানান, আমাদের প্রতিষ্ঠান এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। একাদশে তিন মাস ধরে শিক্ষার্থীশূন্য। দ্বাদশে ১২০ জন শিক্ষার্থী। আর এইচএসসি পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছে আরো ১২০ জন। যারা এইচএসসি পরীক্ষা দেবে তাদের দুই বছরের কোর্স। ফলে জুন মাসের পর আর বেতন নেওয়ার সুযোগ নেই। করোনাকালে নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে এমনিতেই শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি দেয় না। এর ওপর তিন মাস ধরে একাদশে শিক্ষার্থী নেই। ফলে আমরা খুবই সমস্যায় আছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, এইচএসসির কোর্স দুই বছর হলেও সেটা দেড় বছরের মধ্যে শেষ হয়। তাহলে এ বছর যারা এসএসসি পরীক্ষায় পাস করবে, তারা দেড় বছরের জায়গায় এক বছর সময় পাবে। আমার প্রস্তাব, এই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবর্ষ কয়েক মাস বাড়ানো দরকার, যাতে তাদের সিলেবাস মোটামুটিভাবে শেষ করানো যায়। তবে এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। শিক্ষকদের তৎপর হতে হবে, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাসে যেতে হবে। ছাত্ররা যেভাবে শিখবে, সেভাবে তাদের শেখাতে হবে।

এই বিষয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদ জানান, এ বছরের এসএসসি পরীক্ষা ১৪ নভেম্বর শুরু হয়ে শেষ হবে ২৩ নভেম্বর। ফল প্রকাশে দুই মাস সময় প্রয়োজন হলেও আমরা এক মাসের মধ্যেই পরীক্ষার রিজাল্ট দেব। এরপর যত দ্রুত সম্ভাব একাদশে ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু করব, যাতে আগামী জানুয়ারিতে এসব শিক্ষার্থী ক্লাস করতে পারে। আর এ বছরের এসএসসি উত্তীর্ণরা ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। তারা ছয় মাস কম সময় পেলেও কিভাবে তাদের সম্পূর্ণ সিলেবাস শেষ করানো যায়, সে ব্যাপারে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হবে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ডের তথ্য থেকে জানা যায়, দেশে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজ রয়েছে চার হাজার ৫৫১টি। এর মধ্যে ৬৫০টি সরকারি কলেজ রয়েছে। আর দুই হাজার ৫২৪টি কলেজ এমপিওভুক্ত। বাকি এক হাজার ৩৭৭টি সম্পূর্ণ বেসরকারি কলেজ। এর বাইরে কারিগরি ও মাদরাসার উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের আরো আড়াই হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ। আর গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করে ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়, যারা গত জুলাই মাসেই দ্বাদশ শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে।