প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে রাজশাহীর ৮ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়

করোনা
রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়

শিক্ষানগরী খ্যাত রাজশাহী জেলার ১১টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। যার মধ্যে আটটিতেই প্রধান শিক্ষকের পদ খালি পড়ে আছে। এ আটটি বিদ্যালয়ের দুটিতে নেই সহকারী প্রধান শিক্ষকও। এছাড়া সবগুলো বিদ্যালয়েই কর্মচারীসংকট তীব্র। ফলে বিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর সরকারি ম্যাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক- কর্মচারীর পদে শূন্যতা দীর্ঘ দিনের। রাজশাহী শহরের ছয়টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে তিনটিতেই প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এগুলো হলো : গভ. ল্যাবরেটরি উচ্চবিদ্যালয়, শিরোইল সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। তবে অপর তিনটি যথাক্রমে সরকারি কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি পিএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি হাজী মুহম্মদ মুহসীন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক রয়েছেন। জেলার মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মোহনপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ভবানীগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে (বালক) প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। ভবানীগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় বালিকা এবং সরদহ সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী উভয় পদই শূন্য রয়েছে।

রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের (হেলেনাবাদ) সহকারী প্রধান শিক্ষক ইসা বেলা সাত্তার, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি জানান, ২০১৭ সালে নিয়মিত প্রধান শিক্ষক তওহীদ আরা বদলি হয়ে পিএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যান। এরপর তিনি দুই মাসের জন্য এলেও আবার চলে যান পিএন-এ। সেই থেকে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য। এখানে ৭৯২ শিক্ষার্থীর বিপরীতে সহকারী শিক্ষকের ২৫টি পদই ফুলফিল। তবে আটটি পদের বিপরীতে কর্মচারী রয়েছেন চার জন।

সরদহ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক ফারুক হোসেন জানান, প্রায় দুই বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের এবং গত মে থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রধান শিক্ষক রহিমা আক্তার জাহান অবসরে যাওয়ায় উভয় পদই এখন শূন্য।

ভবানীগঞ্জ সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের (বালক) সহকারী শিক্ষক মনসুর রহমান জানান, সহকারী প্রধান শিক্ষক তরিকুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন। ২০১৫ সালে প্রধান শিক্ষক গুলশান আরা ঢাকায় বদলি হন। সেই থেকে ছয় বছর ধরে পদটি শূন্য। ৪৯৯ শিক্ষার্থীর জন্য ১১টি সহকারী শিক্ষকের পদ থাকলেও রয়েছেন ছয় জন। কর্মচারীর চারটি পদের মধ্যে রয়েছে দুই জন। ভবানীগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের উভয় পদই শূন্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী শিক্ষক জানান, সহকারী প্রধান শিক্ষক ড. রুহুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত প্রধান দায়িত্বে থাকাবস্থায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি হন। এতে উভয় পদই শূন্য হয়। সহকারী শিক্ষকের ৯টি পদের মধ্যে চারজন এবং কর্মচারীর চারটি পদের মধ্যে রয়েছে দুই জন।

সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম জানান, প্রায় পাঁচ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে মোহনপুর উচ্চ বিদ্যালয়। মাঝের আড়াই মাসের প্রধান শিক্ষক এ কে এম গোলাম আযম যশোরের জেলা শিক্ষা অফিসার পদে প্রেষণে যান। সহকারী প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন। এখানে ১৮টি পদের বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৫ জন। পাঁচটি কর্মচারী পদের মধ্যে একমাত্র নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছে। মোহনপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন আবুল হুসাইন। তিনি জানান, সহকারী শিক্ষকের পাঁচটি পদ ফুলফিল থাকলেও কোনো কর্মচারী নেই।

রাজশাহী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শূন্যপদের তালিকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী জানান, দীর্ঘদিন সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ হয়নি। তবে সহকারী শিক্ষক পদে 'নন ক্যাডার নিয়োগ হয়েছে, তাদের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দ্রুত পদায়ন করা হবে।