আমেরিকায় বুয়েট প্রকৌশলীর স্টার্টআপ পেল ৩৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ

বুয়েট প্রকৌশলী
আমেরিকায় বুয়েট প্রকৌশলীর স্টার্টআপ পেল ৩৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ

মানুষকে সহায়তায় কাজ করে এমন রোবট ও রোবটিক পদ্ধতির উদ্ভাবক স্টার্টআপের সহপ্রতিষ্ঠাতা আরিয়ান কবীর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এবছর তিনি আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক স্টার্টআপ গ্রেম্যাটার রোবটিকস ৪১ লাখ ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা।

আরিয়ান কবীর ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করার পর ভারতীয় প্রকৌশলী ব্রুয়াল শাহ এবং প্রফেসর এস কে গুপ্তের সঙ্গে মিলে গত বছরের জানুয়ারি মাসে এই স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠা করেন।

গত শুক্রবার গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আরিয়ান কবীর বলেন, নতুন বিনিয়োগের অর্থে কর্মীর সংখ্যা বাড়িয়ে পরবর্তী প্রজন্মের উপযোগী সেবা বা পণ্য উন্নয়নের পাশাপাশি আরও গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে তাঁদের প্রতিষ্ঠান।

তিনি আরও জানান, স্টার্টআপ গ্রেম্যাটার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কয়েকটি অ্যালগরিদম উদ্ভাবন করেছে, একত্রে শিল্প-রোবটকে খুব সহজে কার্যোপযোগী (কনফিগার) করতে পারে। বাজারে প্রচলিত রোবট, সেন্সর ও বিভিন্ন হাতিয়ারের সঙ্গে প্যাকেজ করে তাঁরা তাঁদের এই সফটওয়্যার বাজারজাত করছেন। উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ক্লান্তিকর ও বিপজ্জনক কাজ থেকে মানুষকে অব্যাহতি দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য। তবে তাঁদের রোবটগুলোকে পরিচালনা করার জন্য মানুষের প্রয়োজন আছে। রোবটগুলো কারখানার যেসব স্থানে সারফেস ফিনিশিংয়ের কাজ করা হয়, সেখানে কাজ করে। এগুলো ‘বুদ্ধিমান’ ও প্রোডাকশন লাইনের অনুরূপ জায়গায়, যেখানে আগে ব্যবহৃত হয়নি, সেখানেও ‘নিজেদের খাপ খাইয়ে’ নিতে পারে।

গ্রেম্যাটার উৎপাদকদের সক্ষমতা বাড়ানো, সার্বক্ষণিকভাবে মান নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মানোন্নয়নের জন্য ডিজিটাল নজরদারির ব্যবস্থা তৈরিতে সহায়তা করে।

এটা খুবই দুঃখজনক যে এখনো লাখ লাখ মানুষ ক্লান্তিকর ও স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম আর এ ধরনের কাজ করতে চায় না। আরিয়ান ও তাঁর দল উৎপাদনকর্মীদের জীবনমানের উন্নয়ন, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং অধিকতর মূল্য সংযোজনে নিয়োজিত করার জন্য কাজ করতে চায়।

আরিয়ান কবীর জানান, এটা দুঃখজনক যে এখনো লাখ লাখ মানুষ ক্লান্তিকর ও স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম আর এ ধরনের কাজ করতে চায় না। তাঁর দল উৎপাদনকর্মীদের জীবনমানের উন্নয়ন, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং অধিকতর মূল্য সংযোজনে নিয়োজিত করার জন্য কাজ করতে চায়। তার ধারণা, তরুণদের অনাগ্রহের কারণে ‘সারফেস ফিনিশিং ও ট্রিটমেন্ট’ যদি স্বয়ংক্রিয় না হয়, তাহলে বিশ্ব যান্ত্রিক উৎপাদনব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারে। সারফেস ফিনিশিং ও ট্রিটমেন্ট কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সিরিশ কাগজ দিয়ে সারফেসকে ঘষা, মসৃণ করা ও স্প্রে করা। শুধু আমেরিকার বিভিন্ন কারখানায় প্রায় ১৫ লাখ লোক এই ক্লান্তিকর কাজের সঙ্গে যুক্ত। বেশির ভাগ সময় এই কাজগুলো হাতেই করতে হয়। এই কাজের পুরোনো ও দক্ষ লোকদের এক বিরাট অংশ এখন অবসরে চলে যাচ্ছেন। নতুনদের এই কাজে আগ্রহ কম থাকাতে কারখানাগুলো কর্মী সংকটে ভুগতে শুরু করেছে। গ্রেম্যাটারের উদ্ভাবিত মসৃণকারক রোবটগুলো সাধারণ যেকোনো কর্মী চালাতে পারেন, রোবটিকসে বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না।

গ্রেম্যাটারের রোবট ব্যবহৃত হচ্ছে পারফরম্যান্স কম্পোজিট নামে একটি প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ফ্রান্সিস হুর মতে, যে সময়ে এই সারফেস ক্লিনিংয়ের কর্মী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে, তখন গ্রেম্যাটারের ‘স্ক্যান অ্যান্ড স্যান্ড’ একটা আশীর্বাদ। থ্রিএম (3M) অ্যাবরাসিভ সিস্টেম ডিভিশনের প্রধান দেবারতি সেনের মতে, উৎপাদনকারীদের মধ্যে কর্মীদের নিরাপত্তা, মান ধরে রাখা এবং খরচ কমানোর ব্যাপারে আগ্রহ কয়েক গুণ বেড়েছে। রোবটিক প্রসেস অটোমেশনের কারণেই এমনটি হচ্ছে। থ্রিএম গ্রেম্যাটারের এই বিনিয়োগের অন্যতম অংশীদার।