স্কুল খোলার ১৩তম দিন: করোনায় আক্রান্ত ২৮ শিক্ষার্থী ও ১১ শিক্ষক

করোনা
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে

করোনার মহামারির কারণে দেড় বছর পর স্কুল-কলেজ খুললেও এখনো কাটেনি উদ্বেগ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর আসছে। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ২৮ শিক্ষার্থী এবং ১১ জন শিক্ষক। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে এক শিক্ষার্থী। এমন পরিস্থিতিতে করোনা উপসর্গ থাকলে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে উপমন্ত্রী দাবি করেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো তথ্য মেলেনি।

দেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় গত ১২ সেপ্টেম্বর খোলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত বুধবার রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মানিকগঞ্জ এসকে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী সুবর্ণা ইসলাম রোদেলা। এর আগে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী করোনা পজিটিভ হওয়ায় ওই শ্রেণির পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে ৫৮ সহপাঠীর করোনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ আসায় পাঠদান ফের চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়েই আছে ১৩ শিক্ষার্থী। তাদের পাঁচজন সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউপির বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। তাদের মধ্যে তিনজন পঞ্চম শ্রেণির ও দু'জন চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্রথমে এই স্কুলের তিন শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হয়। পরে তাদের সংস্পর্শে আসা কয়েক শিক্ষার্থীর নমুনা পরীক্ষা করালে একই স্কুলের দু'জন ছাড়াও হাজিপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঁচজন ও সোনালী শৈশব বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীর করোনা ধরা পড়ে। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে দুই সপ্তাহের জন্য এসব স্কুলে পাঠদান বন্ধ করা হয়।

এ ছাড়া চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার হাসিমপুরের ড. মনসুর উদ্দীন মহিলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, করোনা শনাক্ত শিক্ষার্থীদের হোম আইসোলেশন নিশ্চিত করা হয়েছে।

গোপালগঞ্জের দুই স্কুলে দুই শিক্ষার্থীর আক্রান্তের খবর মিলেছে। গোপালগঞ্জ পৌরসভার ১০২নং বীণাপাণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোনালিসা ইসলামের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন বন্ধ রয়েছে ওই শ্রেণির পাঠদান। এই জেলার কোটালিপাড়া উপজেলার ৪ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তিনা খানম আক্রান্ত হয়েছে করোনায়।

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদের আক্রান্ত হওয়ার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। আক্রান্ত স্কুলশিক্ষকদের মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়েই আছেন ছয়জন। জেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, সংক্রমিত শিক্ষকদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার চিড়াভেজা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুশান্ত কুমার রায়। আরও আক্রান্ত হয়েছেন একই স্কুলের শিক্ষক রমিজুল ইসলাম ও আব্দুল জলিল। গত ২১ সেপ্টেম্বর পরীক্ষা করিয়ে পরদিন করোনা পজেটিভ আসে তাদের।

বাগেরহাট জেলার মোংলা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক স্ত্রীসহ আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এর বাইরে নোয়াখালী সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে পূর্বচরভাটা রেড ক্রিসেন্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। আরও একজন করোনা উপসর্গ নিয়ে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। এ অবস্থায় স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধের উপক্রম হওয়ায় পাশের হাবিবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে সাময়িকভাবে দায়িত্ব দিয়েছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। এই ঘটনার পর থেকে গ্রামের স্কুলগুলোতে কমে গেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।

শিক্ষার্থী আক্রান্তের বিষয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার্থীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে স্কুলে আসার পর কোনো ছাত্রছাত্রীর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ শিক্ষার্থীরা ঘরে থাকলে হতো না বা স্কুলে যাওয়ার কারণে হয়েছে- এটার কোনো সত্যতা বা প্রমাণ এখন পর্যন্ত নেই। শিক্ষার্থীরা স্কুলে না গেলেও আত্মীয়স্বজনের বাসায়, বিনোদনের জায়গাসহ সব খানেই যাচ্ছিল। সুনির্দিষ্ট কিছু জায়গায় দেখেছি, শিক্ষার্থীরা করোনা আক্রান্ত হয়েছে। আমরা সেখানে ব্যবস্থা নিয়েছি।

করোনার উপসর্গ থাকলে শিক্ষার্থীদের স্কুলে না পাঠাতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, আমাদের সবাইকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। আমরা অভিভাবকদের বলেছি, কোনো শিক্ষার্থীর বিন্দু পরিমাণ উপসর্গও যদি থাকে বা তার বাড়িতে কারও উপসর্গ থাকে, তাহলে শিক্ষার্থীকে স্কুলে পাঠানো যাবে না।