যেভাবে এক মাসে নেবেন ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি প্রস্তুতি

ভর্তি পরীক্ষা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ঘ’ ইউনিটে কারা ভর্তি পরীক্ষা দেয়? ‘ঘ’ ইউনিটে ভর্তি হতে কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে? এখানে চান্স পাওয়া কতটা সহজ বা কঠিন? সকল বিষয়ে বিশদভাবে জানাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ানা মাসনুন সায়মা—

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) প্রতি বছর ৫টি ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ৩টি ইউনিট, আরেকটি ইউনিট রয়েছে যেসব শিক্ষার্থী চারু ও কারুকলা বিষয়ে আগ্রহী এবং এ বিষয়ে পড়াশোনা করতে চায় তাদের জন্য। বাকি যে ইউনিটটি রয়েছে সেটি হচ্ছে ‘ঘ’ ইউনিট। এটিকে বলা হয় বিভাগ পরিবর্তনের ইউনিট, কারণ এখানে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা যেমন ভর্তি হতে পারে, তেমনি বাণিজ্য ও কলা বিভাগের শিক্ষার্থীরাও তাদের বিভাগ পরিবর্তন করে পড়াশোনা করতে পারে অন্য কোনো বিভাগের বিষয়গুলোতে।

বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য- সকল বিভাগের শিক্ষার্থীরাই ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে, কিন্তু এসএসসি এবং এইচএসসিতে তাদের একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট অর্জন করে এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা লাভ করতে হয়। তুমি যদি ‘ঘ’ ইউনিটে পরীক্ষা দিতে চাও, প্রথমেই মিলিয়ে নাও তুমি এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্য কিনা (যেহেতু ইতোমধ্যে তোমাদের এইচএসসির ফল প্রকাশ হয়ে গিয়েছে)। এরপরই শুরু করে দাও পরীক্ষার প্রস্তুতি। হয়তো অনেকে শুরু করেও দিয়েছো। এইচএসসি ২০২০ ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বলে ইতোমধ্যে বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে।

তার মানে হাতে আর এক মাস বাকি। পরীক্ষার তারিখ আর পরিবর্তন করা হচ্ছে না। আশা করি সবাই সুস্থ শরীর ও মন নিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছো। আর মনে একটু ভয় হওয়াই স্বাভাবিক, কিন্তু কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার ফল তুমি পাবেই!

এখন তোমার জানতে হবে এই পরীক্ষায় কোন কোন বিষয়ে প্রশ্ন হয়, তাইনা? জাতীয় শিক্ষাক্রমের অধীনস্থ শিক্ষার্থীদের সাধারণত ‘ঘ’ ইউনিটে বাংলা, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞান- এই তিনটি বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। আর ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের বাংলার পরিবর্তে অ্যাডভান্সড ইংরেজির উত্তর করতে হয়। এখানে আমি তোমাদের বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতি নিয়ে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব।

এবারের ভর্তি পরীক্ষায়ও এমসিকিউ এবং লিখিত এই দুইটি অংশে পরীক্ষা হবে। আর এই দুইটি অংশে আলাদা করে পাস মার্ক অর্জন করতে হবে। এছাড়া এমসিকিউ অংশে তিনটি বিষয়েই আলাদা করে পাস মার্ক অর্জন করতে হবে। তাই কোনোভাবেই একটি বিষয়কে কম গুরুত্ব দিলে চলবে না! আর এই প্রতিটি বিষয়ে ভালো করার একটি কমন টেকনিক হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এবং বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিগত বছরগুলোর প্রশ্নব্যাংক সমাধান করা। এগুলোর মধ্য থেকে অনেক সময়ই অনেক প্রশ্ন কমন পাওয়া যায়! তাহলে চল এবার দেখা যাক প্রতিটি বিষয়ের প্রস্তুতি কেমন হতে পারে!

বাংলা
যদি সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারো, তাহলে এই বিষয়টি মোটেও কঠিন নয়। বাংলা ১ম ও ২য় দুইটি পত্র থেকেই সাধারণত প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। বাংলা বিষয়ের প্রস্তুতি হিসেবে যা যা পড়তে পারো- 

১) উচ্চমাধ্যমিকের ‘সাহিত্য পাঠ’ বই থেকে সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত সকল গদ্য-পদ্যের মূলভাব বা মূলবাণীগুলো আয়ত্ত করতে হবে।

২) লেখক ও কবি পরিচিতি থেকে কিংবা এর বাইরে থেকেও সাধারণত বিভিন্ন বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিকের ছদ্মনাম, উপাধি, তাঁদের লেখা বিভিন্ন বই ও সাহিত্যের নাম, তাঁদের অর্জিত পুরস্কার ইত্যাদি পরীক্ষায় আসতে পারে।

৩) উচ্চমাধ্যমিকের ‘সহপাঠ’ বইয়ের নাটক ও উপন্যাস থেকে সাধারণত প্রশ্ন করা হয় না। তাই এগুলোর উপর বেশি সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই।

৪) প্রতিটি গদ্য ও পদ্যের শেষে যে শব্দার্থগুলো রয়েছে, সেগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত কর‍তে হবে।

৫) যেহেতু বানান, উচ্চারণ, সন্ধিবিচ্ছেদ ইত্যাদি প্রশ্ন সচরাচর এসে থাকে তাই এগুলো ভালো করে পড়তে হবে, বিশেষ করে ‘সাহিত্য পাঠ’ বইয়ের বিভিন্ন গদ্য ও পদ্যের শব্দগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে।

৬) এছাড়াও গদ্য ও পদ্যের গুরুত্বপূর্ণ লাইন, ভাষাভিত্তিক অংশ, এককথায় প্রকাশ, সন্ধি, বাগধারা ইত্যাদি ভালোভাবে পড়তে হবে।

৭) বাংলা ব্যাকরণের জন্য নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ’ বইটি অত্যন্ত উপকারী। কারণ এই বইটি থেকেই সচরাচর অনেক প্রশ্ন কমন আসে।

৮) রিটেন পার্টের জন্য বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে অনুচ্ছেদ পড়তে পারো আর বিভিন্ন অনুচ্ছেদে বাংলা ভাষা অপপ্রয়োগের শুদ্ধকরণ বেশি করে প্র‍্যাক্টিস কর।

৯) বাংলা ২য় পত্র থেকে পড়ার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ টপিক হল- 

• ভাষা (কোনটি কোন ভাষার শব্দ)
• ধ্বনিতত্ত্ব 
• যুক্ত ব্যঞ্জন বিশ্লেষণ
• শব্দ সম্ভার
• পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ
• সংখ্যাবাচক শব্দ
• দ্বিরুক্ত শব্দ
• বচন
• পদাশ্রিত নির্দেশক
• উপসর্গ
• প্রকৃতি ও প্রত্যয়
• সমাস
• পদ প্রকরণ
• পদ পরিবর্তন
• ক্রিয়ার কাল ও ভাব
• বাক্য প্রকরণ
• বাক্য রূপান্তর
• বাচ্য
• যতি বা ছেদচিহ্ন
• শুদ্ধিকরণ

এভাবে বাংলা পড়লে এবং অনুশীলন করতে থাকলে আশা করা যায় বাংলায় ভালো মার্কস পাওয়া সম্ভব।

ইংরেজি
যেহেতু ইংরেজি আমাদের মাতৃভাষা নয়, তাই অনেকেরই সাধারণত ইংরেজি ভীতি থাকে। কিন্তু যারা রেগুলার ইংরেজি বই বা পত্রিকা পড়ে কিংবা ইংরেজি সিনেমা দেখে তাদের জন্য এই ভাষাটি কিছুটা হলেও সহজতর। তুমি যদি এগুলো নাও করে থাকো, প্র‍্যাকটিসের মাধ্যমে ইংরেজি গ্রামার কে নিজের আয়ত্তে আনা মোটেও অসম্ভব কিছু নয়। ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর করার জন্য তুমি যা যা পড়তে পারো-

১) Cliffs TOEFL বা Barron's TOEFL বই থেকে ইংরেজি গ্রামারের বিভিন্ন নিয়ম পড়বে এবং অনুশীলন করবে।

২) প্রায় প্রতি বছরই একটি Passage দেয় এবং সেটি থেকে ৫-৮টি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। তাই পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে এবং বেশি বেশি করে এগুলো প্র‍্যাক্টিস করতে হবে।

৩) Vocabulary -তে ভালো করার জন্য প্রতিদিন নতুন নতুন ইংরেজি শব্দ শেখার বিকল্প নেই। এটিতে ভালো করার জন্য ‘The Most Common 1000 SAT Words’ মুখস্থ করতে পারো। ইন্টারনেটেই তোমরা এটি পেয়ে যাবে, যদিও এক্ষেত্রে কমন পড়ার ১০০% গ্যারান্টি দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ ইংরেজি ভাষায় তো আর শব্দের অভাব নেই!

৪) এছাড়া Group Verb, Phrase and Idioms, Appropriate Preposition, Translation ইত্যাদি টপিক থেকেও প্রশ্ন হয়ে থাকে। সময়ের স্বল্পতা থাকলে এগুলো নতুন করে আয়ত্ত না করে যা আগে পড়েছো ওগুলোই বারবার ভালো করে রিভিশন দিতে থাকো।

৫) লিখিত অংশের জন্য ইংরেজি থেকে বাংলা এবং বাংলা থেকে ইংরেকি Translation বেশি বেশি করে প্র‍্যাক্টিস করতে হবে।

৬) এছাড়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে Paragraph পড়তে পারো, বিশেষ করে ইন্টারমিডিয়েটের ‘English For Today’ বইয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যেসকল টপিক আছে ওগুলো সম্পর্কিত Paragraph তো অবশ্যই পড়তে হবে!

৭) তোমরা উচ্চমাধ্যমিকে যে Poem Summarization পড়েছো, ওগুলো রিভিশন দিতে পারো।

৮) গুরুত্বপূর্ণ গ্রামার টপিকগুলো হল-

• Parts of Speech
• Determiner
• Tense
• Right Forms of Verbs 
• Subject Verb Agreement 
• Degree 
• Transformation 
• Voice 
• Narration

এসব টপিক ভালোভাবে পড়লে আশা করা যায় সকল প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব।

সাধারণ জ্ঞান
তোমাদের মধ্যে অনেকেই বুঝতে পারো না যে সাধারণ জ্ঞান পড়া কোত্থেকে শুরু করবে, কারণ সারা পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার তো আর শেষ নেই! কিন্তু ‘ঘ’ ইউনিটের এডমিশন টেস্টের জন্য আমি তোমাদের কিছু সাজেশন দিতে পারি। বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক- এই দুটি বিষয় থেকেই সাধারণত প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। সাধারণ জ্ঞানের জন্য তুমি যা যা পড়তে পারো-

১) প্রতিদিন সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস কিন্তু একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস! যদি তোমার এই অভ্যাসটি না থেকে থাকে, তাহলে অন্তত চেষ্টা করো পরীক্ষার আগে প্রতিদিন সকালে সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে।

২) নবম-দশম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইটি অনেক সাহায্য করতে পারে। 

৩) ‘MP3 বাংলাদেশ’ এবং ‘MP3 আন্তর্জাতিক’ বই দুটি ভালোভাবে পড়লেই প্রায় সব পড়া কভার হয়ে যাওয়ার কথা। যদি দুটি বই পড়া সম্ভব না হয় তাহলে ‘জোবায়ের’স GK’ বইটি থেকে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের সাধারণ জ্ঞানগুলো পড়তে পারো।

৪) বিগত ৩-৪ মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বইগুলো সংগ্রহ করে এদের শুরুতে ৪-৫ পৃষ্ঠায় যেসব সাম্প্রতিক ঘটনার উপর প্রশ্ন থাকে ওগুলো পড়বে।

৫) আর লিখিত অংশে আসলে তোমার বেসিক’ই অনেক সাহায্য করবে। যেকোনো বিষয় সম্পর্কে তোমাকে লিখতে দিতে পারে, সারাজীবন তুমি তোমার আশেপাশের পরিবেশ থেকে যা যা শিখেছো, জেনেছো ও জানার চেষ্টা করেছো, সেগুলোই তোমাকে সাহায্য করবে। বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে লিখে এটির অনুশীলন করতে পারো। এভাবে সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতি চালিয়ে গেলে আশা করা যায় প্রায় সব প্রশ্নেরই উত্তর করতে পারবে!

*পুনরায় প্রকাশিত