উচ্চ শিক্ষায় কেন পিছিয়ে বাংলাদেশ?

করোনা

বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকে বাংলাদেশ সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯তম। বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা ইতিহাস থেকেই শুরু হয়েছিল। স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যে বরাদ্দ দরকার ছিল, তা পায়নি বাংলাদেশ। বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় পিছিয়ে পড়ার জন্য সামাজিক ব্যবস্থা অনেকাংশে দায়ী।

আমাদের সমাজে একজন শিক্ষিত পিএইচডিধারীর মূল্য কেউ দেয় না বরং দাম হয় একজন ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা পুলিশের। ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আজ শুধুমাত্র ডিগ্রির কারখানা, সেইখানে বিসিএসের গাইড বই ভালো চলে। যেনতেন ভাবে একটা ডিগ্রি নিয়ে পরবর্তীতে বিসিএস দিয়ে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট হতে পারলে সমাজে দাম উঠে যায়। কারিগরি শিক্ষার কোন দাম বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় নেই।

ফলে কারিগরি শিক্ষার দিকে কোন মনোযোগ নেই। তার উপর রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশন জট। বিএসসি শেষ করতেই একটা ছেলে-মেয়ের ২৫-২৬ বছর লেগে যায়। সিলেবাসের আপগ্রেডেশন হয় না। আমাদের পড়াশোনা করার মূল কারন শিক্ষা অর্জন নয় বরং ডিগ্রী অর্জন করে মানুষের কাছে সম্মান পাওয়া। তাই এখানে কেউই জ্ঞান অর্জনের জন্য মাথা ঘামায় না। আমাদের সমাজটাই অনেক অলস প্রকৃতির। শিক্ষক নিয়োগে রয়েছে সীমাহীন দুর্নীতি। ভার্সিটির শিক্ষক নিয়োগে এখন মেধার চেয়ে রাজনৈতিক পরিচয় বড় হয়ে দাড়িয়েছে। গবেষণায় বরাদ্দেও রয়েছে অনেক দৈন্যতা। বাংলাদেশের গবেষণায় বরাদ্দের পরিমাণ আফ্রিকার অনেক দেশের চেয়েও কম।

জবের সাথে প্রাতিষ্ঠানিক পড়ার তেমন কোন মিল নেই। ভার্সিটির ছাত্ররা এখন বিসিএসের স্বপ্ন দেখে। সিলেবাস কোনো রকমে শেষ করে তারা বিসিএস গাইড নিয়ে পড়ে থাকে। তাছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছাত্র অপরাজনীতি ও উচ্চশিক্ষার আর এক প্রতিবন্ধকতা। কোনো জাতি শিক্ষা ও গবেষণায় পিছিয়ে থাকলে সে জাতি অন্যান্য যে কোনো খাতে পিছিয়ে যাবে- এতে কোনো সন্দেহ নেই।

সরকারকে অচিরেই উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে-যেন আমরা বিশ্ব দরবারে আপন পরিচয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি।