খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মুখর হবে শিক্ষার্থীদের প্রিয় প্রাঙ্গন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মুখর হবে শিক্ষার্থীদের প্রিয় প্রাঙ্গন

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসের তান্ডবে লন্ডভন্ড হয়েছে মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম। কত প্ল্যান কত ম্বপ্ন নিমিষেই জলাঞ্জলি দিতে হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। তেমনিভাবে করোনার ধাক্কায় বিশ্বের প্রায় সব দেশের শিক্ষাব্যবস্থা হয়ে পড়েছে নাজুক। শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি এড়াতে দীর্ঘসময় ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রায় ১৭ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও। বেশ কিছুদিন আগে করোনা সংক্রমন হ্রাসের কারণে স্কুল, কলেজ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও নতুন ভ্যারিয়েন্ট এর বিস্তারের ফলে সে উদ্যোগে ভাটা পড়ে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এর প্রকোপ কমে আসায় এবার স্কুল, কলেজ খুলে দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। অর্থাৎ আগামি ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে সশরীরে ক্লাশ শুরু হচ্ছে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি সচিবালয়ে আন্ত:মন্ত্রলায়ের বৈঠকের পর সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন। এর পাশাপাশি স্কুল, কলেজে ক্লাশ পরীক্ষার বিষয়েও নির্দেশনা দেন। ক্লাশ শুরুর প্রথম দিকে এসএসসি, এইচএসসি, পঞ্চম শ্রেণির ক্লাশ প্রতিদিন চালু হলেও বাকিদের সপ্তাহে একদিন করে স্কুলে আসতে হবে। প্রাক-প্রাথমিকের ক্লাশ এ বছর বন্ধ থাকছে। এমনিতে প্রায় সবকিছু খুলে দেওয়া এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখায় নানামহল থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া এসেছে। এক ধরণের চাপ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে।

যাক্ দীর্ঘদিন পরে স্কুল, কলেজ খোলার ঘোষণায় ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তারা স্কুলে আসার জন্য মুখিয়ে আছে। কখন ক্লাশ করবে, বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা হবে, কথা হবে এ নিয়ে তারা বেশ উত্তেজনায় আছে। যে ক্লাশগুলো এতদিন নিরব ছিল, খেলার মাঠে ছিল শূণ্যতা তা স্কুল খোলার সাথে সাথে আবারো প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর হয়ে উঠবে। স্কুল প্রাঙ্গন মুখরিত হবে শিক্ষার্থীদের কোলাহলে। শিক্ষকরাও কতদিন তাদের শিক্ষার্থীদের সবাইকে একসাথে দেখেনা, কথা হয়না। এবার হয়তো অবসান হতে যাচ্ছে সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষার।

করোনা কেড়ে নিয়েছে শিক্ষাঙ্গনের সেই পরিচিত পরিবেশ, সুখকর সময়গুলো। স্কুল, কলেজের কপাট খুললেও স্বাভাবিক প্রাণোচ্ছল পরিবেশ ফিরতে সময় লাগবে। এরপরও স্কুল, কলেজ খুলছে সেটাই বড় কথা। ইতিমধ্যে ক্ষতি হয়ে গেছে অনেক। বলতে গেলে শিক্ষায সফলতা অর্জন পিছিয়ে গেছে বহুদূর। সেই ক্ষতি পূরণ করা আদৌ কত দ্রুত হবে সেটা জানা নেই কারো। যদিও বন্ধের এই সময়টাতে অনলাইন ক্লাস, বাড়ীর কাজ, অ্যাসাইনমেন্টসহ নানা কৌশলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকদের যোগাযোগ রক্ষা করা এবং লেখাপড়ায় ছাত্রছাত্রীদের ব্যতিব্যস্ত রাখার চেষ্টা ছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। যদিও এসব কার্যক্রমে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। ছাত্রছাত্রীরাও পায়নি স্কুলে অন্যদের সাথে একসাথে ক্লাশ করার আনন্দ। বলা যায়, একপ্রকার ঘরবন্দিই ছিল তারা। এখন স্কুল খোলার খবরে তাদের মাঝে আবারো উৎসাহ-উদ্দীপনা জাগতে শুরু করেছে। কবে স্কুলে ফিরবে সে অপেক্ষায় তারা দিন গুনছে।

অনেকে আশংকা প্রকাশ করছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে বেশকিছু শিক্ষার্থী হয়তো ঝরে পড়তে পারে। তাদেরকে বিদ্যালয়ে ফেরানো কঠিন হবে বলে মনে করছেন তারা। এটা নিয়ে কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষাসংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবতে হবে। কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, সব শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে আনার ব্যবস্থা করা গেলে শিক্ষাঙ্গন অধিক মুখর হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বন্ধের এই দিনগুলো ছাত্রছাত্রীরা কীভাবে যে পার করেছে তা ভাবতেই গা শিউরে উঠে। নানা অনলাইন গেমস এ আসক্ত হয়ে গোটা জীবনটাকেই যেন বিষিয়ে তুলেছে। আশা করা যায়, অন্তত স্কুল খোলার খবরে এই আসক্তি দূর হবে এবং সকলে মিলেমিশে তারা তাদের প্রিয়প্রাঙ্গন শিক্ষাঙ্গনকে মাতিয়ে তুলবে, মনযোগ দেবে পড়ালেখায়।

লেখক: শিক্ষক ও কলামিস্ট
khalednizamt@gmail.com