পদোন্নতির তালিকায় মৃত-অবসর-সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নাম

করোনা

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো পাঁচ হাজার ৪৫২ জন সহকারী শিক্ষককে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই তালিকায় রয়েছে মৃত ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত ও বিভাগীয় মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৫৩ জন শিক্ষকের নাম। দ্রুত এসব অসঙ্গতি চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের গত ৩০ জুন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ হাজার ৪৫২ জন সহকারী শিক্ষককে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে মাউশি থেকে সাত হাজার ২৭৫ জন শিক্ষকের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সিনিয়র শিক্ষকের পদ দ্বিতীয় শ্রেণি (৯ম গ্রেড) হওয়ায় সেই তালিকা সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার ভিত্তিতে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষককে পদোন্নতি দিতে সুপারিশ করে পিএসসি।

এ পদোন্নতির তালিকায় মৃত ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত ও বিভাগীয় মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৫৩ জন শিক্ষকের নাম যুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তালিকা থেকে এসব ব্যক্তির নাম বাতিল করে যোগ্যদের পদোন্নতি দিতে বিভিন্ন জেলায় কর্মরত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি দল বুধবার (১১ আগস্ট) মাউশিতে লিখিতভাবে আবেদন করেছে।

জানতে চাইলে অভিযোগকারী শিক্ষকদের প্রতিনিধি নওগাঁ কে ডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গণিত) মো. হারুন অর রশীদ বুধবার বলেন, সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির তালিকায় অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। মৃত, অবসরপ্রাপ্ত ও বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বিভাগীয় মামলায় সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নাম এ তালিকায় রয়েছে।

তিনি বলেন, এসব অসঙ্গতি সংশোধন করতে আমরা বুধবার মাউশি মহাপরিচালককে লিখিতভাবে কয়েকজন শিক্ষক উপস্থিত হয়ে অভিযোগ জমা দিয়েছি। দ্রুত এসব সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করা হবে বলে মহাপরিচালক আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাড়ে পাঁচ হাজার সিনিয়র শিক্ষকের পদোন্নতির তালিকায় নোয়াখালী, ফরিদপুর ও চট্টগ্রাম জেলা সদরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনজন মৃত শিক্ষককেও পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৪০ জনের বেশি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও বেশকিছু বিভাগীয় মামলায় সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন। সব মিলিয়ে ৫৩ জন শিক্ষক সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালককে অনেকবার মুঠোফোনে চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে মাউশির পরিচালক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বুধবার  বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জটিলতা থাকার পর প্রথমবারের মতো প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার সহকারী শিক্ষককে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এতে কিছু ভুলত্রুটি ধরা পড়েছে। পদোন্নতি তালিকায় যদি মৃত, অবসরপ্রাপ্ত ও কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা চলমান বা সাজাপ্রাপ্ত হয় তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না বলে সরকারি নির্দেশনায় তা উল্লেখ করা হয়।

তিনি বলেন, আমরা শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সাত হাজারের বেশি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। সেই তালিকা মন্ত্রণালয় থেকে পিএসসিতে পাঠানো হয়। এর মধ্যে প্রায় ছয় মাস সময় পার হয়ে যায়। তালিকা প্রকাশের কয়েক দিন আগে নাকি পদোন্নতি পাওয়া তিনজন শিক্ষক মারা গেছেন। সেখানে অবসর ও সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন বলে অভিযোগ এসেছে। আমরা তা চিহ্নিত করে শূন্য পদগুলোতে দ্রুত সময়ের মধ্যে পদোন্নতি দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তালিকা দেব।

জানতে চাইলে নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন বলেন, ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় সিনিয়র শিক্ষক পদ সৃষ্টি করে তা সংশোধন করা হয়। তার আলোকে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে গ্রেডেশন (জ্যেষ্ঠতা) অনুযায়ী সাত হাজার ২৭৫ জনের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তার ভিত্তিতে পাঁচ হাজার ৪৫৪ জনকে সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। যেসব স্থানে অসঙ্গতি রয়েছে সেই তালিকা তৈরির কাজ আগামী সপ্তাহে শুরু করা হবে।

তিনি বলেন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সিনিয়র শিক্ষক পদোন্নতি এখন একটি রুটিনকাজ। যেখানে এ পদটি খালি হবে, তার তালিকা তৈরি করে মাউশি থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেটি পিএসসি থেকে অনুমোদন দিলে সেসব শিক্ষককে পদোন্নতি দেয়া হবে।

জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী জ্যেষ্ঠ শিক্ষকপদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সহকারী শিক্ষক পদে অন্তত আট বছর চাকরি করতে হবে। সহকারী শিক্ষক পদে চাকরিতে প্রবেশের জন্য পাঁচ বছরের ব্যাচেলর অব এডুকেশন (বিএড) বা ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন (ডিপ ইন এডু) বা ব্যাচেলর অব এগ্রিকালচার এডুকেশন (বিএজএডু) ডিগ্রি থাকতে হবে।